প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পূর্বে দেশ ও জনগণের জন্য ভালো কিছু করে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। গতকাল মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ তাকে ৭৪তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানালে শেখ হাসিনা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাবা-মা সব হারিয়ে রিক্ত, নিঃস্ব হয়ে এই দেশে কাজ করা, এটা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু তারপরেও শুধু একটা কথা চিন্তা করেছি- যে দেশটাকে এবং দেশের মানুষকে আমার বাবা এতো ভালোবেসেছেন তাদের জন্য আমাকে কিছু করে যেতে হবে। তার (জাতির পিতা) স্বপ্নটা যেন অপূর্ণ না থাকে সেটা যেন পূর্ণ করতে পারি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকটি ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে সেটাই জাতির পিতা করতে চেয়েছিলেন, ছোটবেলা থেকেই তার এই আকাঙ্ক্ষাটা আমরা জানি, শুনেছি।
সে কারণেই আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি- এই দেশটাকে যেন জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। দেশের মানুষ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে ঐটুকুই আমার প্রচেষ্টা আর কিছু না। তিনি বলেন, সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি, কারণ, সকলের সহযোগিতাতেই বাংলাদেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। হয়তো এই করোনাভাইরাসটা না আসলে আমরা আরো অনেক কাজ করতে পারতাম। তারপরেও যত বাধা বিঘ্নই আসুক সেটা অতিক্রম করবার মতো ক্ষমতা বাংলাদেশের মানুষ রাখে। সেজন্য বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। শেখ হাসিনা তার ৭৪তম জন্মদিনে সকলের কাছে দোয়া প্রত্যাশা করে বলেন, সকলের কাছে দোয়া চাই যতদিন বেঁচে আছি যেন সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারি। আর আমার কাজ দ্বারা বাংলাদেশের মানুষের যেন উপকার হয় এবং মানুষ যেন ভালো থাকে সেই কাজটুকু যেন করতে পারি।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উদ্যাপন নিয়ে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের কাছে জানতে চান সাংবাদিকেরা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, কোনো রকম কোনো আনুষ্ঠানিকতা না করার জন্য। যারা মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, উনার জন্য দোয়া কামনা করেছেন, উনার সফলতা কামনা করেছেন। তিনি আরো বলেন, উনি (প্রধানমন্ত্রী) পার্সনালি এটা উদ্যাপন করতে চান নাই।
শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন উদ্যাপিত: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন গতকাল বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়েছে। আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, দুস্থদের মাঝে বস্ত্র ও খাবার বিতরণ, গাছের চারা বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে সবাই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, আবদুল মতিন খসরু, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান. তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম ও এসএম কামাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ও উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে মিডিয়া ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পিস (এমডিপি) ‘নারী ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা: বিশ্ব নেতৃত্বে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক সিনিয়র সচিব জুয়নো আজিজ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ডিক্যাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টি। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোকপাত করেন নিউজ২৪ টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী। এদিকে রাজধানীর ধানমণ্ডির প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টারে মহিলা আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন উদ্যাপন উপলক্ষে দুস্থ মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক। শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে মওলানা আকরম খাঁ হলে বঙ্গবন্ধু দুস্থ কল্যাণ সংস্থা এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের সভাপতি মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পারভীন জাহান কল্পনা, আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। রাজধানীর বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘লেখক শেখ হাসিনা’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বাংলা একাডেমি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে ‘শেখ হাসিনা রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থপাঠ কেন অপরিহার্য’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। স্বাগত বক্তৃতা করেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। এর আগে প্রতিমন্ত্রী বাংলা একাডেমি আয়োজিত তিন দিনব্যাপী শেখ হাসিনা রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এদিকে এ উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বেলা ১১টায় বিশেষ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রার্থনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বাদ জোহর এবং দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে সকাল ৯টায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার (মেরুল বাড্ডা), সকাল ১০টায় খ্রিস্টান এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস চার্চ (২৯ সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০), সকাল ৬টায় তেজগাঁও জকমালা রাণীর গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে ঢাকাসহ সারা দেশে সকল সহযোগী সংগঠন আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ সকল কর্মসূচি যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে পালন করা হয়।