ঢাকা: রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম গঠনের প্রক্রিয়া চলমান জানিয়ে ডাকসু’র সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর জানিয়েছেন, দল গঠনের কাজ ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে। এ বছরের শেষেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। তবে শুরুতে দল গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একটি নাগরিক প্ল্যাটফরম গঠন করা হবে।
তিনি বলেন, নাগরিক প্ল্যাটফরম ঘোষণার মাধ্যমে বিভিন্ন নাগরিকদের সঙ্গে একটি যোগসূত্র স্থাপন করার চেষ্টা করবো জোরালোভাবে। সে জায়গা থেকে মনে হয় আমাদের ৭০ ভাগ কাজ হয়ে গেছে। আমরা দেখেছি যে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোতে যেটা হয় একটি বড় মিছিলে ১০ থেকে ১৫ জন পুলিশ হুইসেল দিলে অনেকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মী রয়েছে তারা সংখ্যায় অল্প কিন্তু সবাই ডেডিকেটেড। একেবারে শেষ পর্যন্ত থাকে। কাউকে ভয় পায় না।
গত ২১শে সেপ্টেম্বর যখন গ্রেপ্তার হই তখন আমার সঙ্গে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া একজন কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। সংগঠনে আমরা লোক অল্প হলেও এটা কিন্তু সরকার খুব ভালোভাবে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি মনে করি যে, আমাদের লোক অল্প হলেও বাংলাদেশে বর্তমানে এই স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করার জন্য আমাদের যথেষ্ট সক্ষমতা বা সেই লোক তৈরি হয়েছে। তবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে, চলতি বছরের শেষের দিকে রাজনৈতিক দল সরাসরি ঘোষণার মাধ্যমে একটি নাগরিক প্ল্যাটফরম ঘোষণা করবো। যেটা আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের এই নেতা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য আইনকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে জনগণের বিরুদ্ধে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ যদি আমরা দেখি তাহলে দেখা যাবে শুরু থেকে বিরোধী কিংবা ভিন্নমতের মানুষদেরকে দমাতে বা তাদের উপরই ব্যবহার করা হয়েছে। সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছেন এইসব অভিযোগে বেশির ভাগ মামলা হয়েছে। এবং এই মামলায় কিন্তু সাধারণ মানুষের চেয়ে সাংবাদিক বা সংবাদকর্মীরা বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন।
সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই আইন নিয়ে আপত্তি তুললে তখনকার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছিলেন, এই আইনে সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হবে না। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে আইনটির যখন থেকে প্রয়োগ শুরু হয়েছে তখন থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি সাংবাদিক থেকে শুরু করে মুক্তমনা মানুষ যারা লেখালেখি ও প্রতিবাদ করেন, দেশের কথা ভাবেন তারাই আইনটির ভুক্তভোগী হচ্ছেন। ফলে আমি মনে করি যে, এটি বাংলাদেশ সরকারের বড় একটি দমনপীড়নমূলক আইন। সরকার জরিপ চালালে দেখতে পাবে শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ এই আইনের বাতিল চায়। কিন্তু সরকার অল্পতে আটক করতে বা বাগে নিতে এই আইনটির প্রচলন করেছে। করোনাকালীন সময়েও প্রায় ৭১ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। গণমাধ্যমের কর্মীরা মুক্তভাবে সাংবাদিকতা করতে পারে না। লিখতে পারে না। সেখানে সাধারণ মানুষ কি যাতনার মধ্যে আছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই আইনটি বাতিলের জন্য আমরা আন্দোলনের কথা ভাবছি। দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে এই ধরনের যত গণবিরোধী আইন আছে তার বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলবো।
নুর বলেন, ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আমাদের বলা হয় ‘আপনারা যদি সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মকাণ্ড করেন, সেগুলো বাদ দিতে হবে। না হলে সামনে আরো বড় ধরনের ঝামেলায় পড়বেন। এটা টেস্ট ছিল। সামনে এর চেয়ে বড় ঝামেলা হবে।’ তারা চেয়েছিল গ্রেপ্তার করতে। কিন্তু গ্রেপ্তারের পর সাধারণ মানুষের এবং রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে যে প্রতিক্রিয়া এসেছে তখন হয়তো সরকারের দায়িত্বশীল মহল এবং প্রশাসন বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। অন্যায়ভাবে একজন ছাত্রনেতাকে এভাবে আটক রাখলে সেটার পরিণতি তাদের জন্য খারাপ হতে পারে। আমার মনে হয় এটা তারা পর্যবেক্ষণ করেই আমাদের সাতজনের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন।