রাজধানীর কাওরান বাজারের হোটেল সোনারগাঁওয়ের সামনে ছুটিতে এসে আটকেপড়া সৌদিগামী প্রবাসীরা বিমান টিকিট রি-কনফার্ম করার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সড়ক অবরোধ করেন তারা। ফলে সড়কের দু পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ সময় তারা সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ টিকিট সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে কথা বলেন।
এর আগে গতকাল সোমবার সকালে সৌদিগামীরা টিকিট রি-কনফার্ম করার জন্য লাইনে গিয়ে দাঁড়ান। এর মধ্যে কেউ কেউ আসেন নতুন টিকিট বুকিং করার জন্য। কিন্তু এভাবে এয়ারলাইন্স অফিসের সামনের পুরো রাস্তায় টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় জমে যায়। সময় বাড়ার সাথে সাথে বিদেশগামীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে টিকিট রি-কনফার্ম করানোর বিষয়টি না করায় একপর্যায়ে শ্রমিকরা ধৈর্যহারা হয়ে পড়েন। এরপরই তারা রাস্তা বন্ধ করে পাসপোর্ট উঁচিয়ে হইচই শুরু করেন। এতে সোনারগাঁও হোটেলের (ভিআইপি সড়ক) দুই পাশ ছাড়াও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
শুধু সাউদিয়া এয়ারলাইন্স অফিসের সামনে নয়, একই অবস্থা হয়েছে গতকাল সোমবার সকালে মতিঝিলের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বলাকা ভবনের সামনেও। সেখানেও ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। কেউ কেউ উত্তেজিত হয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্য খারাপ ভাষায় কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
ক্ষুব্ধ আটকেপড়া প্রবাসীদের বক্তব্য হচ্ছে, আমরা যদি যথাসময়ে কাজে যোগ দিতে না পারি তাহলে আমাদের চাকরি হারাতে হবে। এর মধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে। এসব কি হচ্ছে। আমরা কোনো কিছু বুঝি না। আমরা টিকিট চাই।
জানা গেছে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সৌদিয়া এয়ারলাইন্সকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিলেও, সৌদি আরব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেবিচক গত রোববার সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বাতিলের জন্য বিমানকে দুষছেন বিক্ষোভকারীরা। দুপুরে ক্ষুব্ধ বিদেশগামীদের কয়েকজন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এ প্রসঙ্গে গতকাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি।
গতকাল একটি ট্র্যাভেল এজেন্সির স্বত্বাধিকারী নাম না প্রকাশের শর্তে বিদেশগামীদের বিক্ষোভ করা প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন, কি করবে তারা। তাদের কারোর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। রিটার্ন টিকিটের ডেট চলে যাচ্ছে। কিন্তু সাউদিয়া এয়ারলাইন্স রিটার্ন টিকিট কনফার্ম করতে গড়িমশি করছে। নতুন টিকিটও বুকিং নিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তারা এপথ বেছে নিয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সারা দেশে যতগুলো ট্র্যাভেল এজেন্সি আছে তার মধ্যে ‘কে’ ‘জি’ ও এস নামের অদ্যাক্ষরের তিনটি ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিক সিন্ডিকেট করে বেশির ভাগ টিকিট দামে বিক্রি করছে। এর মধ্যে অনেক টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা-রিয়াদের যে টিকিট এর দাম ২২ হাজার টাকা সেটি বিক্রি হচ্ছে এক লাখ টাকার উপরে। এটা কি করে সম্ভব? একই চিত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সেও। ঢাকা-দুবাই ওয়ানওয়ে টিকিটের দাম ১৭ হাজার টাকা। সেটি এখন ৬০-৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিমানকে ফ্লাইট না দেয়ার কারণে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বাতিল করা প্রসঙ্গে স্বনামধন্য ব্যবসায়ী বলেন, এটি কূটনৈতিকভাবে আলোচনা করে সমাধান বের করতে হবে। ফ্লাইট বাতিল করে জনগণকে কষ্ট দেয়ার কোনো মানে হয় না।