মিয়ানমারে সেনা ‘অভিযান’, আবারো রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা

Slider জাতীয় টপ নিউজ


কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এর প্রতিবাদ এবং সীমান্ত থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে বলা হয়। বাংলাদেশের শক্ত অবস্থানের পর সীমান্ত থেকে মিয়ানমার সৈন্য সরিয়ে নিয়েছে বলে জানান, বিজিবির মুখপাত্র লে. কর্নেল সাইদুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সীমন্তে এখন আর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা নাই। তারা সীমান্ত এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। তবে রাখাইনের ভেতরে তারা কী করছে সেটা আমরা জানি না। এটা গোয়েন্দারা ভালো বলতে পারবেন।’’

এই বিজিবি কর্মকর্তা জানান, ‘‘সীমান্তের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে। সীমান্ত বলতে আমাদের দিক থেকে আমরা যতটুকু দেখতে পাচ্ছি তা স্বাভাবিক।’’

একাধিক সূত্র জানায়, সীমান্ত থেকে তারা সরে গেলেও এক কিলোমিটার দূরেই তারা অবস্থান করছে। রাখাইনে সৈন্য সমাবেশও অব্যাহত আছে। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া ক্লিয়ারেন্স অপারেশন সেখানে এখনো চলছে। মিয়ানমারে ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে এই অপারেশন আরো জোরদার হচ্ছে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে এখনো চার হাজারের মত রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। তারা ২০১৭ সালের পর থেকেই সেখানে আছেন।

নো-ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ জানান, ‘‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী সীমান্তের এক-দেড় কিলোমিটারের মধ্যে এখন আর নাই। তারা এর বাইরে অবস্থান করছে। আমাদের কাছে যে খবর রয়েছে তাতে তারা অভিযান বন্ধ করেনি। সৈন্য আরো বাড়াচ্ছে।’’

তিনি জানান, ‘‘আমরা সেখানে অবস্থানরত আমাদের স্বজনদের কাছ থেকে যে খবর পাচ্ছি তাতে রোহিঙ্গাদের মুভমেন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাদের ঘরের বাইরে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। সেখানে যুদ্ধের ট্যাংক নিয়ে আসা হচ্ছে। আমরা আতঙ্ক আর উদ্বেগের মধ্যে আছি।’’

এর আগে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, মিয়ানমার আবার রাখাইনে গণহত্যা শুরু করেছে। সেনা সমাবেশের মধ্যেই সেখানে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। মিয়ানমার অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে নানা সূত্র থেকে যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে সেখানে গণহত্যার বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গা আছেন তাদের অনেকের স্বজনরা এখনো রাখাইনে আছেন। তারা তাদের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

এই অবস্থায় বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় টহল এবং নজরদারী জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তের জনবল ও নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে। তারা রাখাইনের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন।

মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক মনে করেন নির্বাচনকে সামনে রেখে রাখাইনে সেনা সমাবেশ ঘটনো হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘‘এর কারণ মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে নির্বাচন বন্ধ করতে চায়। সেনাবাহিনী সমর্থিত দল ইএসডিপির রাখাইনে কখনোই ভালো অবস্থান ছিল না। ফলে এখানে নির্বাচন না হলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সুবিধা। তাই আমার মনে হচ্ছে তারা আরো বড় ধরনের অভিযান চালাবে যাতে নির্বাচন বন্ধ করা যায়।’’

তিনি বলেন, ‘‘এবার অভিযান শুরু হলে শুধু রোহিঙ্গা নয়, সেনা সমর্থিত দলের বাইরে যে বৌদ্ধরা আছেন তারাও এর শিকার হতে পারেন। তাই শুধু রোহিঙ্গা নয়, এবার বৌদ্ধদের ঢলও আমরা সীমান্তে দেখতে পারি।’’

এজন্য তিনি বাংলাদেশকে আরো সতর্ক অবস্থানে থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘‘মিয়ানমার এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালোই চাপের মুখে আছে। আর আইসিজের পর এখন আইসিসিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা হতে যাচ্ছে। ফলে তারা আরো চাপে পড়বে।’’ ডয়চে ভেলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *