টানা ৫ দিন বন্ধের পর ভারত সরকার অনুমতি দেয়ায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশটির অভ্যন্তরে আটকে থাকা পিয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ৩টায় ভারত থেকে আমদানি করা পিয়াজবাহী ট্রাক প্রবেশ শুরু করে। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে ১১ ট্রাক পিয়াজ আমদানি হয়েছে। ফলে একদিনে পাইকারি বাজারে দেশি পিয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা এবং ভারতীয় পিয়াজের দাম ১০ টাকা কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের পিয়াজ আসা শুরু হলে দাম আরো কমে যাবে।
তবে শুধু গত রোবারের টেন্ডারকৃত পিয়াজ রপ্তানি করবেন বলে জানিয়েছেন সে দেশের ব্যবসায়ীরা। বেশ কয়েকদিন আটকে থাকায় অনেক ট্রাকের পিয়াজের মান খারাপ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা দেশি পিয়াজ বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে, যা গত তিনদিন ছিল ৯০ থেকে ১১০ টাকা। অপরদিকে আমদানি করা ভারতের পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, যা আগের দিন ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
এদিকে রাজধানীতে পিয়াজের সব থেকে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব থেকে ভালো মানের দেশি পিয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়, যা আগের দিন ছিল ৭৭ টাকা এবং তিনদিন আগে ছিল ৮৫ টাকা। অপরদিকে আমদানি করা ভারতের পিয়াজ মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে, যা আগে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।
এর আগে গত সোমবার হুট করে বাংলাদেশে পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতেই মঙ্গলবার ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পিয়াজের দাম খুচরা বাজারে বেড়ে ১১০ টাকা হয়ে যায়। আর পাইকারিতে ৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয় ৮৫ টাকা। এমন দাম বাড়ায় আতঙ্কিত হয়ে বাড়তি পিয়াজ কেনার হিড়িক পড়ে ক্রেতাদের মাঝে।
এরপর বৃহস্পতিবার থেকে ক্রেতা সংকট দেখা দেয় পিয়াজের বাজারে। যার প্রভাবে পাইকারি বাজারে কমতে থাকে পিয়াজের দাম। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দু’দফায় দাম কমে পাইকারিতে পিয়াজের কেজি ৭৭ টাকায় নামে। তবে এ পরিস্থিতিতে সংবাদ আসে- নিষেধাজ্ঞার আগে রপ্তানির অনুমতি পাওয়া ২৫ হাজার টন পিয়াজ বাংলাদেশকে দেয়ার অনুমতি দিয়েছে ভারত। এতেই দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের পিয়াজের দাম আরো কমে গেল।
পিয়াজের দাম কমার বিষয়ে শ্যামবাজারের বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের মো. কাজল বলেন, কেজিতে দেশি পিয়াজের দাম ৫ টাকা কমেছে। আমদানি করা ভারতের পিয়াজের দাম কমেছে ১০ টাকা। এখন ভালো মানের দেশি পিয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়। আর ছোট আকারের দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। অপরদিকে ভারতীয় পিয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, যা আগে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।
এদিকে খুচরা বাজারে পিয়াজের দাম কমার বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, পাইকারিতে পিয়াজের দাম কমেছে, এ কারণে আমরা কম দামে বিক্রি করছি। আগের দিন ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা দেশি পিয়াজ এখন ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। ৮০ টাকার ভারতীয় পিয়াজ ৬৫ টাকায় বিক্রি করছি।
স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে জানান, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আবারো শুরু হয়েছে পিয়াজ আমদানি। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সহ-সভাপতি শাহিনুর রেজা শাহীন। তিনি জানান, ভারতে গত ১৪ই সেপ্টেম্বর সোমবার এলসি করা যে সমস্ত পিয়াজ ওপারে ট্রাকে আটকা পড়েছিল, তা বাংলাদেশে শনিবার বিকাল থেকে পাঠানো শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঠিয়েছে ১১ ট্রাক পিয়াজ, যা আনুমানিক ২৫০ টন।
তিনি জানান, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের ওপারে ভারতে আটকা পড়েছে ৩ শতাধিক পিয়াজের ট্রাক। পচন ধরার আশঙ্কায় বাংলাদেশি আমদানিকারকরা উদ্বিগ হয়ে পড়েন। আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার টন পিয়াজ আটকা পড়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা ১০ হাজার টনের মতো পিয়াজ আমদানির জন্য এলসি করেছেন। ভারতীয় তিন শতাধিক ট্রাক পিয়াজ নিয়ে রাস্তায় আটকে পড়েছে। এসব পিয়াজ প্রবেশ করতে না পারলে সেগুলোতে পচন ধরবে। ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হবে। তাই এলসি করা পিয়াজগুলো শনিবার থেকে পাঠানো শুরু করেছে তারা।
তিনি জানান, ১৩ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় রপ্তানিকারকরা প্রতি টন পিয়াজ ২৫০ থেকে ৩০০ ডলারে রপ্তানি করছিলেন। কিন্তু ভারতে পিয়াজের মূল্য দ্বিগুণের বেশি হয়ে যাওয়ায় ওই মূল্যে পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছেন তারা। ভারতের বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন এলসি মূল্য নির্ধারণ করার জন্যই পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভারতের ব্যবসায়ীরা ওই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতি টন পিয়াজ ৭৫০ ডলার নির্ধারণ করার জন্য প্রস্তাব করেছেন।