ঢাকা: অনুমতি ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যেন মামলা না হয় তা নিশ্চিত করতে আইন ও বিচার বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারের অনুমতি না নিয়েই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে মাঠ পর্যায়ে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ বা দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মঙ্গলবার এই চিঠি পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, সব মন্ত্রণালয়ের সচিব/সিনিয়র সচিব, সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি দু’জন ঠিকাদারের মাটি ভরাটের কাজে ব্যবহৃত চারটি ড্রেজার মেশিন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা ও আটটি অন্য মেশিন পিটিয়ে ভাংচুর করে ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ এনে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুনসহ ছয়জন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা দুটি মামলার প্রেক্ষাপটে সরকার এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসক/জেলা ম্যাজিস্ট্রেট/কালেক্টর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সরকারি কর্মচারীদের সরকারি দায়িত্ব পালনে কৃতকাজের জন্য তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করে মামলা রুজু করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদন নেয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা প্রতিপালিত হচ্ছে না।
এতে করে আইনের ব্যত্যয় ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ/দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে নদী, খাল, বিল, বন, জলাশয়সহ সরকারি সম্পত্তি ও স্বার্থরক্ষা, অবৈধ ক্ষতিসাধন/জবরদখল প্রতিরোধ ও উচ্ছেদ অভিযানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
আইন সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, যেকোনো সরকারি কার্যক্রম বা সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আইনে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল দায়ের কিংবা প্রতিকার চেয়ে ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারেন। কোনো কর্মচারীর আইনের গুরুতর অপপ্রয়োগ, এখতিয়ারবিহীন ক্ষমতা অনুশীলন কিংবা কোনো সিদ্ধান্তে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উচ্চ আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেন। অন্যদিকে অধঃস্তন আদালতগুলোর এখতিয়ার এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সেটি বারিত থাকবে তা আইন দ্বারা সুনির্দিষ্ট রয়েছে।
তাই বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট ও সরকারি কর্মচারীদের সরল বিশ্বাসে করা কাজের সুরক্ষা প্রদান সম্পর্কিত এবং বিচারিক বা সরকারি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাদের ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করে ফৌজদারি মামলা আমলে নেয়ার আগে সরকারের পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান যথাযথ প্রতিপালন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালন/সরল বিশ্বাসে করা কাজের সুরক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আইনের বিধান রয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট বা কোনো সরকারি কর্মকর্তার কর্তব্য/দায়িত্ব পালনে করা বা এ বিষয়ে দাবি করা কোনো কাজের জন্য সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো অপরাধ আমলে গ্রহণ করা যাবে না বলে ‘কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’ এর সাব-সেকশন-১ এর বিধান রয়েছে।
জুডিশিয়াল অফিসার্স প্রটেকশন অ্যাক্ট, ১৮৫০’ এর সেকশন-১-এ কোনো জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা কালেক্টরকে তার বিচারিক প্রকৃতির কার্যক্রম বা দেয়া কোনো আদেশের কারণে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে না বলে উল্লেখ রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, অপরাধ প্রতিরোধ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কার্যক্রম অধিকতর কার্যকর ও গতিশীলতার সঙ্গে সম্পাদনের জন্য পরিচালিত মোবাইল কোর্টের কার্যক্রমের বিষয়ে ‘মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯’ এর ১৪ ধারায় রয়েছে যে, ‘এই আইন বা তদধীন প্রণীত বিধির অধীন সরল বিশ্বাসে কৃত বা কৃত বলিয়া বিবেচিত কোনো কাজের জন্য কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইলে, তিনি মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সহিত সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোনো প্রকার আইনগত কার্যধারা রুজু করিতে পারিবেন না।’
এছাড়া ‘কোড অব সিভিল প্রসিডিউর, ১৯০৮’ এর সেকশন-৯ এবং অর্ডার-৭ রুল-১১(ডি) এ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দেওয়ানি আদালতে এখতিয়ার বারিত (এখতিয়ারের সীমা) হওয়া ও আরজি খারিজের বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। একই সঙ্গে, বিভিন্ন আইনে সরল বিশ্বাসে করা কাজের সুরক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় বিধান সন্নিবেশিত রয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।