ঢাকা: [নিজে জুতো তৈরি করে পরতেন (Russian Writer Leo Tolstoy), চাষাভুষোর মতো সাধারণ ও অল্প আহার করতেন, পরতেন খেতমজুরের পোশাক]
লিও তলস্তয় একজন প্রখ্যাত রুশ লেখক (Russian Writer Leo Tolstoy)। ১৮২৮ সালের ৯ই সেপেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকে রুশ সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক, এমনকি বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। তাঁর দু’টি অনবদ্য উপন্যাস যুদ্ধ ও শান্তি এবং আন্না কারেনিনা গোটা বিশ্বকে মোহিত করেছে। তলস্তোয়ের জন্ম রুশ সাম্রাজের তুলা প্রদেশের ইয়াস্নায়া পলিয়ানা নামক স্থানে। তিনি ছিলেন পরিবারের চতুর্থ সন্তান।
Russian Writer Leo Tolstoy Birth Anniversary
Russian Writer Leo Tolstoy Birth Anniversary
শিশু বয়সে তাঁর বাবা-মা মারা যান এবং আত্মীয়স্বজনরাই তাঁকে বড় করেন। তিনি উপন্যাস ছাড়াও নাটক, ছোটগল্প এবং প্রবন্ধ রচনায় ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯১০ সালের ২০ নভেম্বর রাশিয়ার আস্তাপভা নামক এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের রেলওয়ে স্টেশনে তলস্তোয় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর ১৯২৮ ও ১৯৫৮ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তাঁর সাহিত্যকর্ম ৯০ খণ্ডে বিভক্ত হয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রকাশিত হয়।
তিনি লাতিন, ইংরেজি, আরবি, তুর্কো-তাতার, ইতালীয়, গ্রিক এবং হিব্রু ভাষা জানতেন। তিনি সংগীতশাস্ত্র এবং চিত্রাঙ্কন বিদ্যাতেও মোটামুটি পারদর্শী ছিলেন। তাঁর একাগ্রতা ও পরিশ্রম করবার শক্তি ছিল অসাধারণ। তিনি মেধাবীও ছিলেন। বস্তুত তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত।তাঁর জীবনীশক্তি ও কর্মোদ্যম ছিল প্রচন্ড দানবীয় রকমের । ভালো শিকারি ছিলেন এবং ভয়ংকর একগুয়ে স্বভাবের ছিলেন। একবার ভালুক শিকারে গিয়েছিলেন, একটা ভালুক থাবা মেরে চোখের নিচে থেকে বাঁদিকের গাল ছিড়ে নামিয়ে দেয়; দুই সপ্তাহ পরে ভালো হয়ে তিনি ফের শিকারে যান এবং ঐ ভালুকটিকে বধ করেন।
বন্ধু-বান্ধব বা সমাজ কী বলবে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজে যা উচিত এবং ন্যায্য বলে ভেবেছেন তাই করেছেন সবসময়। শান্ত-সুবোধ প্রকৃতির ছিলেন না, যৌবনে প্রচুর ধার-দেনা করেছেন এবং বিষয় সম্পত্তি নষ্ট করেছেন।পাদ্রী-পুরুতদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাদের সমালোচনা করেছেন, এবং তার শাস্তি স্বরূপ যাজক সম্প্রদায় ঘোষণা করেছেন যে, তলোস্তয় কে খ্রিস্ট ধর্ম থেকে বহিষ্কার করা হল, তিনি আর খ্রিস্টান বলে গণ্য হবেন না। এর উত্তরে তিনি বলেছিলেন যে যারা ঈশ্বর ও যীশুকে নিয়ে ব্যবসা করে তাদের চেয়ে তিনি সহস্র গুণ বেশি ধার্মিক খ্রিস্টান।
তিনি চার ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠতম। তলস্তয়ের শৈশবেই তাঁর মায়ের মৃত্যু হয় এবং তলস্তয়ের বাবার এক জ্ঞাতি ভাই তাঁর দেখভাল করতে থাকেন। সাত বছর বাদে তাঁর বাবার মৃত্যু হয় এবং তাঁদের এক পিসি তাঁদের অভিভাবক হন। লিও তলস্তয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং বিখ্যাত ক্রিমিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন (১৮৫৩-১৮৫৬)। লিও তলস্তয়ের ত্রয়ীর প্রথম গ্রন্থ হল ‘Childhood’ (১৮৫২) গল্প। তিনি অপর দুটি গ্রন্থ ‘Boyhood’ এবং ‘Youth’ (১৮৫২-১৮৫৬) শীর্ষক তাঁর আত্মজীবনী মূলক ট্রিলজীর দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড প্রকাশ করেন।
তলস্তয় শেষ বয়সে প্রায় সন্তের জীবন যাপন করতে চেয়েছিলেন। নিজের কাজ তিনি নিজে হাতে করতেন, এমনকি নিজে জুতো তৈরি করে পরতেন, চাষাভুষোর মতো সাধারণ ও অল্প আহার করতেন, পরতেন খেতমজুরের পোশাক। শেষ বয়সে তিনি কাউকে না জানিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পথিমধ্যে ঠাণ্ডা লেগে তাঁর নিউমোনিয়া হয়। এতেই তিনি বাড়ি থেকে দূরে এক রেলস্টেশনে ২০শে নভেম্বর ১৯১০ সালে মারা যান। পরে তাঁর মরদেহ গ্রামে নিয়ে সমাহিত করা হয়। লিও তলস্তয়ের জীবনের ঘটনাকে অবলম্বন করে অনেক সিনেমা নির্মিত হয়েছে। আজও তাঁর লেখাগুলি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।