শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছেন৷ আরো অনেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন বার্ন ইউনিটে৷ প্রথমে ধারণা করা হয়েছিলো নামাজের সময় এসি (শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) বিস্ফোরণে এই দুর্ঘটনা ঘটে৷ মসজিদটিতে ৬ টি এসি ছিলো৷ কিন্ত ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিকভাবে বলেছে, মসজিদ লাগোয়া গ্যাস লাইনই এই দুর্ঘটনার কারণ৷ ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মসজিদে গ্যাসের কারণেই যে আগুন লেগেছে প্রাথমিক তদস্তে আমরা তা নিশ্চিত৷ তবে তা তিতাসের গ্যাস লাইন না সেখানে গ্যাসের খনি আছে তা তদন্ত করে দেখা যেতে পারে৷’
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন সংবাদমাধ্যমকে শনিবার বলেছেন, ‘আমরা আগুন নেভানোর জন্য পানি দেয়ার পর সেখানে বুদবুদ দেখতে পেয়েছি৷ এর অর্থ গ্যাস লিকেজ হচ্ছিল৷ মূলত পাইপটি ছিদ্র হয়ে গ্যাস নির্গত হচ্ছিল৷
এদিকে পুরো মসজিদ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হওয়ায় গ্যাস মসজিদের মধ্যেই আটকে ছিল৷’ তিনি আরো বলেন, ‘মসজিদের কোনো ফ্যান চালানোর সময় সুইচবোর্ড থেকে আগুনের ফুলকি বের হয়ে মসজিদের ভেতরে থাকা ছয়টি এসিতে আগুন ধরেছে বলে ধারণা করছি৷’
মসজিদের সামনে গ্যাস লাইনে যে ত্রুটি ছিলো তা স্বীকার করেন মসজিদ কমিটির সভাপতি গফুর মিয়া৷ তিনি বলেন, ‘আমরা মাঝে মাঝেই নামাজ পড়তে গেলে গ্যাসের গন্ধ পেতাম৷ আর এটা মেরামতের জন্য আমারা স্থানীয় তিতাস গ্যাস অফিসে যোগাযোগও করেছিলাম৷ তারপরও কাজ হয়নি৷’ মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি গ্যাসের লাইন মেরামতের জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে গ্যাস কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ করে আসছিল বলে জানান তিনি৷ ‘এক পর্যায়ে মেরামতের জন্য তিতাস গ্যাসের লোকজন ৫০ হাজার টাকা ঘুস দাবি করে৷ আমরা এই ঘুসের টাকা যোগাড়ের চেষ্টা করছিলাম৷ স্থানীয়দের কাছ থেকে গ্যাস লাইন মেরামতের জন্য চাঁদা তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলাম৷ কিন্তু তার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়,’ বলেন তিনি৷
কিন্তু এই অভিযোগ অস্বীকার করেন নারায়ণগঞ্জ তিতাসের উপ মহা ব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলাম৷ তিনি দাবি করেন, ‘মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে আমাদের গ্যাস লাইনে ত্রুটির কথা কখনোই জানানো হয়নি৷ আর মেরামতের জন্য কোনো ঘুস দাবির অভিযোগও সত্য নয়৷’ গ্যাস লাইনের ত্রুটির কারণে মসজিদে বিস্ফোরণ হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের এই দাবি মানতেও তিনি নারাজ৷ বলেন, ‘মাটি খুঁড়ে দেখতে হবে গ্যাস লাইনে কোনো ত্রুটি বা ছিদ্র আছে কিনা৷ তার আগে বলা যাবে না৷’
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী মো. মামুন বলেন, ‘দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে তাই আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না৷’ ঘুস দাবির অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তারা বলছেন৷ কিন্তু কে ঘুস চেয়েছে তা বলতে পারছেন না৷ তিনি কি তিতাসের কর্মচারী না দালাল৷ আমাদের তা সুনির্দিষ্টভাবে জানালে আমরা দেখব৷’
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মসজিদে গ্যাসের কারণেই যে আগুন লেগেছে প্রাথমিক তদস্তে আমরা তা নিশ্চিত৷ তবে তা তিতাসের গ্যাস লাইন না সেখানে গ্যাসের খনি আছে তা তদন্ত করে দেখা যেতে পারে৷’
তিনি জানান, ‘আমরা মসজিদের ভিতরে গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েছি, ফ্লোরের দুই টাইলস-এর মধ্যেও গ্যাস পেয়েছি৷ বিস্ফোরণের কয়েক ঘন্টা পরেও মসজিদের ভেতরে আমরা শতকরা ১৭ ভাগ মিথেন গ্যাস পেয়েছি৷ বাতাসে যদি শতকরা চার ভাগের বেশি মিথেন গ্যাস থাকে তাহলে হালকা বিস্ফোরণ হতে পারে৷ আর ১৬-১৭ ভাগের বেশি মিথেন থাকলে তা উচ্চ মাত্রার বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে অন্যান্য উপাদানের সাথে মিশে৷’ তিতাসের দাবির উত্তরে তিনি বলেন, ‘গ্যাস লাইন খুঁড়ে দেখার দরকার নাই৷ আমরা তো সেখানে গ্যাস পেয়েছি৷ এখন সেটা তিতাসের গ্যাস না হয়ে অন্য কোনো গ্যাস কিনা তা বিস্তারিত তদন্তে জানা যাবে৷ গ্যাস পেয়েছি এটাই বাস্তবতা৷’ এদিকে এই ঘটানায় পুলিশ বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে৷ অবহেলার কারণে বিস্ফোরণ ও মৃত্যু হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে৷ কাউকে সরাসরি আসামি না করা হলেও তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি ও মসজিদ কমিটি দায়ী হতে পারে বলে অভিযোগ করা হয়েছে৷