মৌলভীবাজার: সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম এম. সাইফুর রহমানের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মরহুম এম. সাইফুর রহমান কর্মময় জীবনে তার অনন্য গুণে মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। তার সাদামাটা ব্যক্তিগত জীবন মানুষের দৃষ্টি কাড়তো। ছিল না চাওয়া-পাওয়ার অস্থিরতা। এমনকি উচ্চ আকাঙ্ক্ষা উচ্চ বিলাসিতাও পছন্দ ছিল না তাঁর। কথা বলতেন সরল-সহজ আর ইংরেজি মিশ্রিত আঞ্চলিকতায়। মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনের সেই ছেলেটি দেশের অন্যতম অর্থমন্ত্রী যিনি একনাগাড়ে ১২ বার সংসদে সফলতার সঙ্গে বাজেট পেশ করেছেন। তাঁর অনন্য গুণ তিনি উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তবায়নও করতেন।
এটাই তার অবিচল আস্থা-বিশ্বাস আর কাজের প্রতি নিখাঁদ আন্তরিকতা ও কর্তব্যকর্মে দ্বায়িত্বশীলতার নজির। নিজ জন্মস্থান মৌলভীবাজারসহ পুরো সিলেট বিভাগেই রয়েছে তার চোখ ধাঁধানো উন্নয়নের ছোঁয়া।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: জন্ম ১৯৩২ খ্রীষ্টাব্দের ৬ই অক্টোবর, মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনে। তার পিতার নাম- মোহাম্মদ আব্দুল বাছির, মাতার নাম- তালেবুন নেছা। ৩ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন তিনি। মাত্র ৬ বছর বয়সে তাঁর পিতা মারা যান। সে সময়ে তাঁর অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন চাচা মোহাম্মদ সফি। শিক্ষাজীবন, গ্রামের মক্তব ও পাঠশালা শেষ করে তিনি ১৯৪০ সালে জগৎসী গোপালকৃষ্ণ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর ১৯৪৯ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিকুলেশনে উত্তীর্ণ হন। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে আইকম পাস করে ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডনে চলে যান। সেখানে পৌঁছার পর মত পাল্টে যায় তার। ব্যারিস্টারির পরিবর্তে পড়েন চার্টার্ড একাউন্টেন্সি। ১৯৫৩-৫৮ সময়কালে পড়াশোনার পর ১৯৫৯ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ফেলোশিপ অর্জন করেন। এছাড়া তিনি আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালের ১৫ই জুলাই বেগম দূররে সামাদ রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৩ পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ২০০৩ সালে তার স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। তিনিও ২০০৯ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী বাহারমর্দনে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র’ প্রতিষ্ঠালগ্নে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ডাকলেন দল গঠনে অংশ নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত হতে। তিনি তাই করলেন। রাজনীতিতে এলেন আলোকিত করলেন আলোকিত হলেন। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসন ও ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ ও সিলেট-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালের ৮ই জুন তিনি সংসদে দ্বাদশ বাজেট পেশ করে দেশের সংসদীয় ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক বাজেট পেশকারী হিসেবে রেকর্ড গড়েন। তিনি দীর্ঘদিন দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ছাড়াও দেশ-বিদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর জীবদ্দশায় দেশ ও বৃহত্তর সিলেট নিয়ে যে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা করেছিলেন তার অনেকগুলো বাস্তবায়ন হলেও পুরোটা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। হঠাৎ এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিভে যায় তার জীবন প্রদীপ, স্তব্ধ হয়ে যায় তার দেখা উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার স্বপ্ন। গতকাল দুপুরে মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপকালে তাঁর জ্যৈষ্ঠ পুত্র সাবেক এমপি ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম. নাসের রহমান জানান, তার বাবা সবসমই মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পছন্দ করতেন। বৃহত্তর সিলেটে তিনি যে দৃষ্টান্তকারী উন্নয়ন করে গেছেন এটিই তার বড় প্রমাণ। সাইফুর রহমান মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই পেয়েছেন মানুষের কল্যাণে করা উন্নয়নমূলক কাজের জন্য। তিনি মরহুম পিতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চান।
১১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা কর্মসূচি: ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এম. সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ ও মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর গ্রামের বাড়িতে কোরআন খতম, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছেন। এম. সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ ছাড়াও দলীয়ভাবে বিএনপি’র স্থানীয় জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা সকালে মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন। ঢাকায় জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে আলোচনা, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া আয়োজন করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।