ঢাকা: ঋণ নিয়ে এর অপব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে। যে উদ্দেশ্যে ঋণ নেয়া হচ্ছে ওই কাজে ব্যবহার না করে অন্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ঋণঝুঁকি ও ঋণের বিশৃঙ্খলা। ব্যাংকঋণে বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো গ্রাহক ঋণ নিয়ে সঠিক কাজে ব্যবহার করছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকিতে ঋণের অপব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাধারণত কোনো প্রকল্পে ঋণ নিয়ে ওই প্রকল্পে ব্যয় করার কথা। যেমন, কোনো শিল্পে কয়েক ধাপে ঋণের অর্থ ছাড় করা হয়। সংশ্লিষ্ট শিল্পে এসব ঋণ যথাযথভাবে ব্যবহার হলেই কেবল ওই শিল্প মুনাফায় চলে আসে। আর শিল্পে আয় বেড়ে গেলে ব্যাংকঋণ পরিশোধও সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তার জন্য সহজ হয়। ঋণ পরিশোধ করলে ব্যাংক আবার ওই অর্থ অন্য শিল্পোদ্যোক্তার মধ্যে বিতরণ করে। এভাবে দেশে শিল্পায়ন যেমন হয়, তেমনি বর্ধিত হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। মানুষের আয় বেড়ে যায়। সব মিলে দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
আবার, ঋণ নিয়ে ঋণের অর্থ যথাযথ কাজে ব্যবহার না করলে উদ্যোক্তা লোকসানের মুখে পড়ে। এতে উদ্যোক্তা যেমন খেলাপি হয়ে পড়েন, তেমনি ব্যাংকের বিনিয়োগসক্ষমতা কমে যায়। এভাবে শিল্পায়নও ব্যাহত হয়। ঋণের অর্থ উদ্যোক্তারা যেন যথাযথ কাজে ব্যবহার করেন সে জন্য ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে তদারকি করা হয়। অনেক উদ্যোক্তা ঋণ নিয়ে তা যথাযথভাবে ব্যবহার করেন না। শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতির মূল্য অতিমূল্যায়িত করে অর্থাৎ প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য দেখিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করেন। আবার কেউবা জমির প্রকৃত মূল্য না দেখিয়ে বাড়তি মূল্য দেখিয়ে ঋণের টাকা অন্যত্র সরিয়ে ফেলেন। আবার অনেকেই ব্যাংক থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠার কথা বলে ঋণ নিয়ে পুরনো ঋণ পরিশোধ করে থাকেন। এভাবে যে শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ নেয়া হয়, ওই ঋণ এক সময় খেলাপি হয়ে যায়। এভাবেই বেড়ে যায় ঋণঝুঁকি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক থেকে যে উদ্দেশ্যে ঋণ নেয়া হচ্ছে ওই কাজে ব্যবহার না করার অভিযোগ উঠেছে কিছু শিল্প উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে। অনেকেই আবার ব্যাংক থেকে প্রণোদনার প্যাকেজ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে বেশি সুদের পুরনো ঋণ পরিশোধ করছেন। প্রণোদনার প্যাকেজ থেকে ৪ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশে ঋণ পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। আগে যেখানে ঋণ নিয়েছিলেন ৯ শতাংশে। অনেকেই বেশি সুদের ঋণ পরিশোধ করছেন কম সুদের ঋণ নিয়ে। এভাবেই ব্যাংকের ঋণঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে ঋণের বিশৃঙ্খলা।
এমনি পরিস্থিতিতে ঋণঝুঁকি কমাতে ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে ব্যাংকগুলোর জন্য। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারি করা এ ধরনের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নতুন ঋণ নিয়ে কোনো অবস্থাতেই পুরনো ঋণ পরিশোধ করা যাবে না। এ জন্য উদ্যোক্তা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঋণ যথাযথ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে কিস্তিভিত্তিক প্রকল্প ঋণের ক্ষেত্রে আগের কিস্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়ে পরের কিস্তি ছাড়করণের জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি কোনো ঋণের অর্থ মঞ্জুরিপত্রে বর্ণিত খাতের পরিবর্তে অন্যত্র ব্যবহৃত হলে ব্যাংককে তার কারণ উদঘাটন করতে বলা হয়েছে। একই সাথে এটি প্রতিরোধ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও ব্যাংক নির্বাহীদেরকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি ব্যাংকের ঋণ তদারকি করতে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষকরা থাকেন। অনেক সময় অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় এ ঋণ অনিয়মের বিষয়টি উঠে এলেও প্রভাবশালীদের চাপে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। এতে বেড়ে যায় ব্যাংকের ঋণঝুঁকি। যেমন, বিসমিল্লাহ, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা এভাবেই ধামাচাপা দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।