গাজীপুর: বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবাখাতের মধ্যে প্রাইভেট হাসপাতাল ডায়গনষ্টিক ও ক্লিনিকগুলোর লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২৩ আগষ্ট। সারাদেশে ১৭ হাজারের মধ্যে ১২ হাজারের বেশী প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স বা লাইসেন্স নবায়নের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে গাজীপুর জেলায় প্রায় সাড়ে তিন শো প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছেন। কিন্তু গাজীপুর মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিয়েছে ২০টি প্রতিষ্ঠান। বাকী প্রতিষ্ঠানগুলো কোথা থেকে লাইসেন্স নিলো বা নেয় নি, তা জানা যায়নি। তবে নতুন লাইসেন্সের ক্ষেত্রে মাদকের লাইসেন্স পরে নিলেও কোন সমস্যা নেই বলে জানানো হলেও নবায়নের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। কারণ নতুন লাইসেন্স নেয়ার এক বছরের মধ্যে মাদকের লাইসেন্স অবশ্যই নিতে হবে। তাহলে এবার সাড়ে তিন শো আবেদনের মধ্যে নবায়নের আবেদনে মাদকের লাইসেন্স না থাকলে আবেদন কি ভাবে হয়েছে, তাও জানা যায় নি।
সরকারীভাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে একটি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রায় ২১টি ভিন্ন ভিন্ন কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স বা ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে এসব লাইসেন্স যেমন পেতে হয়, তেমনি নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলে লাইসেন্সগুলো নবায়নও করতে হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াও আর যেসব লাইসেন্স নিতে হয় তার মধ্যে রয়েছে- মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, ফর্মেসি পরিচালনার জন্য লাইসেন্স, পরিবেশ লাইসেন্স, জেনারেটর লাইসেন্স, ব্লাড ব্যাংক লাইসেন্স, বয়লার লাইসেন্স, ক্যাফেটেরিয়া ও লন্ড্রি লাইসেন্স, কমর্শিয়াল লাইসেন্স, বিএসটিআই লাইসেন্স (বেকারি), ট্রেডমার্ক লাইসেন্স (বেকারি), গভীর নলকূপ লাইসেন্স, আণবিক শক্তি কমিশন লাইসেন্স, আরসিও লাইসেন্স, মেডিকেল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লাইসেন্স, নারকোটিকস লাইসেন্স, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এনওসি ইত্যাদি।
নবায়ন ফি :২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে লাইসেন্সের ফিতে পরিবর্তন আসে, যা প্রায় ক্ষেত্রবিশেষে ১০ থেকে ২০ গুণ করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন ফি এবং নিবন্ধন নবায়ন ফি পাঁচ হাজার থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার ও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বিভাগীয় ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০ থেকে ৫০ শয্যার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নবায়ন ফি ৫০ হাজার টাকা, ৫১ থেকে ১০০ শয্যার জন্য এক লাখ, ১০০ থেকে ১৪৯ শয্যার জন্য দেড় লাখ ও ২৫০ শয্যার জন্য নির্ধারণ হয় দুই লাখ টাকা। জেলা ও উপজেলার ফি নির্ধারণেও ব্যাপক পরিবর্তন আসে।
প্রতিবন্ধকতা :নতুন লাইসেন্স ও নবায়নের জন্য অনলাইনে আবেদনের পদ্ধতি শুরু হয় ২০১৮ সালে। এখানে কিছু জটিলতা তৈরি হয়, যে কোনো একটি শর্ত পূরণ না হলে রেজিস্ট্রেশন যেমন হয় না, নবায়নও হয় না। অনেক ক্লিনিক আছে যাতে সারাবছর দশ লাখ টাকা আয় কিংবা লভ্যাংশ এক লাখ টাকা থাকে না, যা দিয়ে তিনি নবায়ন করতে পারেন।
এদিকে গাজীপুর জেলায় যতগুলো বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে এসবের লাইসেন্স করা ও নবায়ন নিয়ে নানা ধরণের তথ্য রয়েছে। শুধু আবেদন করেই হাসপাতাল চলছে অসংখ্য। আবেদন করা ছাড়াও চলছে অনেক হাসপাতাল। হাসপাতাল মালিকেরা সংগঠন করার কারণে নিজেরা লাইসেন্সের কাজ করছেন না। নেতারা লাইসেন্স করিয়ে দিচ্ছেন। কোন হাসপাতালের লাইসেন্স নতুন বা নবায়ন করতে হলে নেতাদের কাছে যেতে হয়। তাদের কাছে কাগজপত্র জমা দিতে হয়। নেতারা এসব করে দেন। কিন্তু বর্তমানে আর তা হচ্ছে না। লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এখন সরাসরি মালিকদের ডাকছেন। মালিক না আসলে কাজ হয় না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুর জেলার বোর্ড বাজারে সুলতান জেনারেল হাপসাতাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। এই প্রতিষ্ঠানের মাদকের লাইসেন্স করিয়ে দিতে জনৈক সাংবাদিক পরিচয়ে এক ব্যক্তি ৫ হাজার টাকা নেয় বলে জানায় সুলতান জেনারেল হাপসাতালের মালিক। কিন্তু মাদকের লাইসেন্সের আবেদন করা রিসিভ কপিতে যে সিল দেয়া হয়েছে তা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অফিসের নয়। এই নিয়ে তৈরী হয় সমস্যা। জানা গেছে, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর গাজীপুর সার্কেল বিষয়টি নিয়ে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু ঘটনার সত্যতা পেলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহন হয়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তি সাংবাদিক হওয়ায় ব্যবস্থা গ্রহন থেমে যায়।
এদিকে গাজীপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা: খায়রুজ্জামান বলেছেন, গাজীপুর জেলায় মোট কতগুলো আবেদন পড়েছে তা এখনো স্পষ্টভাবে বলা না গেলেও অংকটি সাড়ে তিনশোর মত হতে পারে। তিনি বলেন, এখন কোন দালাল নেই। সারাসরি আমি দেখছি। উল্লিখিত বিষয়ে তিনি বলেন, এমন ঘটনা হয়ে থাকলে খতিয়ে দেখব।