গাজীপুর: গাজীপুরের স্বাস্থ্যসেবাখাত নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের উদ্যোগ নেয়ার সময় অনেকে অনেক কথা বলেছেন। অনিয়মের বেড়াজালে বন্দি গাজীপুরের স্বাস্থ্যখাত দীর্ঘদিন ধরে একই নিয়মে চলছে। এই খাতে সংস্কার করতে কেউ খবর দিবে না এমন ধারণাও ছিল অনেকের। আবার মাঝপথে থেমে যাবে লেখালেখি, এমন গুজবও ছিল। কিন্তু সব কিছু ডিঙিয়ে আমরা আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছি। এতে সকলের সহযোগিতা যেমন ছিল তেমনি ইচ্ছাও ছিল সরকারের। আর এই ধারবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের শুরুতেই গণমাধ্যম কর্মীরাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমর্থন করেছেন।
এই ধারাবাহিক প্রতিবেদন চলাকালে বেশ কিছু জায়গায় প্রশাসন অভিযান করেছে। লাইসেন্স না থাকায় হাসপাতাল বন্ধ সহ জরিমানাও করেছে অনেক প্রতিষ্ঠানকে। জেলা উপজেলা প্রশাসন পুলিশ ও র্যাবও অভিযান করেছে গাজীপুরে। একই সঙ্গে সরকারও কঠোর হয়েছে। আজ লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স করার শেষ দিন। সরকারী আদেশ বহাল থাকলে কাল থেকে লাইন্সেন বিহীন সকল হাসপাতাল ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে খবর হল, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার যাদের লাইসেন্সের মেয়াদ নেই এমন হাসপাতাল ও ক্লিনিককে আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন না করা হলে হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। শনিবার (৮ আগস্ট) এক আদেশে একথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, প্রতিবছর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স নবায়নের জন্য পরিবেশগত ছাড়পত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিস্তারিত বিবরণ, সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র, কর সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য নথি প্রয়োজন। এই আলোকে এসব হাসপাতালকে নিয়মিত নোটিশ দেয়ার পাশাপাশি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু এসব কাগজপত্র দিতে পারে না বলে লাইসেন্স নবায়ন করতে আসে না বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠান।
২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন ফি এবং নিবন্ধন নবায়ন ফি পাঁচ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার ও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর পাঁচ হাজার হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার লাইসেন্স করে। বাকিরা লাইসেন্স নবায়ন করতে আসেনি।
এ দিকে গাজীপুর স্বাস্থ্য বিভাগ নিজেরা একটু নড়েচড়ে বসেছেন বলে মনে হচ্ছে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে জেলা সিভিল সার্জন কোন রকম উৎকোচ ছাড়া লাইসেন্স নবায়ন বা নতুন লাইসেন্সের কাজ করবেন বলে সকলকে জানিয়ে দিয়েছেন। সিভিল সার্জন অফিসের যে দুই জন কর্মচারী গোপনে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করতেন তাদের সতর্ক করা হয়েছে। তবে সারা জেলায় যে সব সরকারী হাসপাতালে চাকুরী না করে বেতন নেয়া হচ্ছে, এমন ডাক্তারদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়ার খবর পাওয়া যায়নি। আবাসিক মেডিকেল অফিসার হাসপাতালের আবাসিক কোয়াটারে না থেকেও দায়িত্ব পালন করছেন কি করে? ওই ডাক্তার নিজে স্বীকার করার খরর প্রকাশের পরও কোন ব্যবস্থা গ্রহনের তথ্য এখনো আসেনি। খবর পাওয়া গেলো না, ডাক্তারের চেম্বারে বসে ফেসবুক চালানো ব্যক্তি ডাক্তার নয় এমন খবরের কোন এ্যাকশন। জানা গেলো না, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে হাসপাতালের তালিকা না থাকার কারণ। সব মিলিয়ে ধারবাহিক প্রতিবেদনের অনেক খবর প্রমান সহ প্রকাশ হলেও তেমন কোন পদক্ষেপ পাওয়া না গেলেও কাজ হচ্ছে এটা সঠিক। আমরা প্রত্যাশা করি, এমনি করেই দূর্নীতিমুক্ত হয়ে গাজীপুর একদিন স্বাস্থ্যবান হবে।