ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রায় প্রতিদিনই আসছে নানা ধরনের ফাইল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব ফাইল পাঠাচ্ছেন দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতারা। করোনার কারণে দলীয় সভাপতির সাক্ষাৎ বন্ধ থাকায় এ পন্থা বেছে নিয়েছেন তারা। উদ্দেশ্য দলের ফাঁকা থাকা পদগুলোতে স্থান পাওয়া। দুটি সম্পাদকমণ্ডলী ধর্ম বিষয়ক এবং শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও তিনটি কেন্দ্রীয় সদস্য পদ পেতে মরিয়া তারা। দলীয় সভাপতি বরাবর দেয়া ফাইলে নেতারা নিজেদের ভূমিকার কথা ও দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি সংযুক্ত করেছেন। পাশাপাশি অনেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে থাকা ছবিও যোগ করছেন ফাইলে। দলের সভাপতির বাসভবনের পাশাপাশি একই ফাইল পাঠানো হচ্ছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডি কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় অফিসে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক নেতা বলেন, জীবনের বড় একটি সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। স্থানীয় নেতা হিসেবে একনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। স্বপ্ন রয়েছে প্রিয় দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসা। দলীয় সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই নিজের বিভিন্ন তৎপরতার ছবি ও বর্ণনা দিয়ে ফাইল আকারে তা নেত্রীর কাছে পাঠানোর চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, নেত্রী ফাইল দেখলে আমার বিশ্বাস দলের জন্য আরো বেশি কাজ করার সুযোগ দেবেন। দলীয় সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এরকম আরো অনেকেই ফাইল আকারে নিজেদের তৎপরতার কথা জানাচ্ছেন বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তারা বলেন, কেউ সরাসরি, কেউ কুরিয়ার আবার কেউ নিজস্ব লোক মারফত এ ধরনের ফাইল পাঠাচ্ছেন। এই ৫টি পদ ছাড়াও আওয়ামী লীগে আরো তিনটি প্রেসিডিয়াম পদ ফাঁকা রয়েছে। সম্প্রতি মোহাম্মদ নাসিম ও অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর শূন্য পদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিনটিতে। শুরু থেকেই আরেকটি পদ শূন্য ছিল।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২০ অনুচ্ছেদে আছে, ‘দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা হবে ১৯ জন। ২০১৯ সালের ২১শে ডিসেম্বর দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে একটি পদ ফাঁকা রেখে সভাপতিমণ্ডলীর ১৮ জন সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে নতুন মুখ হিসেবে আসেন শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান। শূন্য তিনটি পদ কবে পূরণ করা হবে তা নিয়ে দলে চলছে ব্যাপক আলোচনা। দলের অনেক সিনিয়র নেতা এসব পদ পেতে নানাভাবে দলীয় সভাপতির ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। নিজেদের আগ্রহের কথাটি পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনার কাছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছেও এরইমধ্যে অনেকে ওই তিনটি পদের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে সবকিছু নির্ভর করছে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। এ প্রসঙ্গে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, দলের কাউন্সিলররা নেত্রীর উপর সকল ক্ষমতা দিয়ে গেছেন সাংবিধানিকভাবে। সুতরাং নতুন পদে কাকে আনা হবে এই এখতিয়ার কেবল দলীয় প্রধানের হাতেই থাকবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। তাই অনেকে বড় পদে আসতে চাইতে পারেন। এ ধরনের আগ্রহকে দল দারুণ ইতিবাচক বলে মূল্যায়ন করে।
দলের গঠনতন্ত্রের ২৪ ধারার (২)-এ বলা আছে, ‘আওয়ামী লীগের কোনো কর্মকর্তার পদ শূন্য হইলে কার্যনির্বাহী সংসদ উক্ত পদ শূন্য হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে কো-অপ্ট বা মনোনয়ন দ্বারা উক্ত শূন্য পদ অবশ্যই পূরণ করিবে।’ দেড় বছরের বেশি সময় পার হলেও দুটি সম্পাদকীয় পদ এবং দুটি সদস্য পদ শূন্য থাকলেও এখনো তা পূরণ করা হয়নি। দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, সভাপতিমণ্ডলীর তিনটি শূন্য পদে রাজশাহী, বরিশাল ও দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের নেতাদের আসার সম্ভাবনা রয়েছে।