বন্যা ও করোনাময় ঈদ ও বানভাসীদের আর্তনাদ

Slider জাতীয় বিচিত্র


মোঃ ইসমাঈল হোসেন মাস্টার: দেশের তিন ভাগের একভাগ মানুষ পানি বন্ধি। এবারের বন্যার ধরন অতিতের সব রেকর্ড ভাঙতে পারে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

গতকাল শুক্রবার বন‍্যা কবলিত ষাট বছরের বৃদ্ধ কৃষক বলেন , গেল বন‍্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আমরা আবার বন্যার মধ্যে পড়েছি। বন‍্যা কত দিন থাকবে বুঝতে পারছি না। গবাদি পশু থেকে মানুষ- সবাই অসহায় অবস্থায় আছি। এখনো কোন সহযোগীতা পায়নি।

দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল মিলিয়ে অন্তত ত্রিশটি জেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল টানা চার সপ্তাহ ধরে বানের জলে ভাসছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ভাষ‍্যমতে চলমান বন্যায় দেশের পয়তাল্লিশ শতাংশ নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে,তাতে আগামী কয়েক দিনে প্লাবিত এলাকা আরও বাড়বে। আরও এক সপ্তাহ পর বন‍্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। ইতিমধ্যে বানভাসিরা দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। রয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে নানাবিধ রোগ ব‍্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে শিশু ও বৃদ্ধরা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এক মাসের মধ্যে তিন দফায় দেশের পয়ত্রিশটি জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে; ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় পঁয়তাল্লিশ লাখ।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত বন‍্যার স্থায়িত্ব বেড়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এত দীর্ঘ সময় বন্যা থাকলে বাঁধ টেকে না, নদীর পার ভাঙে বেশি রোগের প্রাদুর্ভাবও বাড়ে।

গেল বছর জুলাইয়ে বন্যা শুরু হয়েছিল। এবার শুরু হয় জুনের দিকে। গতবার দুই-তিন দফা বন্যা হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এমনিতে প্রতিবার বন্যা দশ থেকে পনের দিনের মত স্থায়ী হয়, পরে পানি নেমে যায়। কিন্তু এবার ইতোমধ্যে টানা বন্যার চার সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে।এতো আগে বন‍্যা শুরু হয়ে টানা এত দিন থাকায় বিষয়টি একটু ভিন্ন এবারের বন‍্যার গতি-প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে বন্যা অতিতের সব রেকর্ড ভাঙতে পারে।
উল্লেখ্য ১৯৮৮ সালের বন্যায় দেশের ৬১ শতাংশ এলাকা দুই মাস ধরে, ১৯৯৮ সালের বন্যায় ৬৮ শতাংশ এলাকা এক মাস ধরে প্লাবিত ছিল।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী তিন-চার দিন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গে ভারি বর্ষণ হতে পারে।

দেশের নিম্নাঞ্চলের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে ।অন্যদিকে মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ি, শরীয়তপুর, ঢাকা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নওগাঁ জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

সূত্রমতে দেশের নদ-নদীগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১০১টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে আটচল্লিশটি পয়েন্ট পানি বেড়েছে; কমেছে ত্রিশটি পয়েন্টে। ১৭টি নদীর পয়ত্রিশটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপরে বয়ে যাচ্ছে।

বন‍্যার ক্ষয়ক্ষতি রোধে নদীর স্রোতে ভেসে যাওয়া বিশেষ করে মহিলা ও শিশু, নৌ দুর্ঘটনা, সাপের ছোবলে মৃত্যু প্রতিবারের মত এবারের বন্যায়ও হচ্ছে। উত্তরণের ব্যবস্থা হিসেবে জনসচেতনতা, উন্নতমানের নৌ ব্যবস্থাপনা, কার্বলিক এসিড, এন্টিভেনম সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকা দরকার। বন্যা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় বিভিন্ন অধিদপ্তরের মধ্যে আরও বেশি সমন্বয়ের প্রয়োজন মনে করেন সচেতন মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *