গাজীপুর: কম সময়ে বড় লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর কিছু মানুষকে চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িত একটি অপরাধী চক্র, পরিকল্পিতভাবে যুক্ত করছে। সাংবাদিকতার তকমা দিয়ে আঁড়াল করছে তাদের অপরাধ। টাকার নেশায় কোথাও সাংবাদিকের পরিবারই যুক্ত হয়ে গেছে হাসপাতাল ব্যবসায়। ভেজাল ঔষুধ বিক্রি ও সরকারী ডাক্তারকে ম্যনেজ করে নানা কোম্পানির ঔষুধ বাজারজাত করার মাধ্যম তৈরীতে ব্যবহৃত হচ্ছে কথিত সংবাদকর্মী। রাজনৈতিক খোলস পাল্টিয়ে বড় বড় নেতাদের সঙ্গে ছবি তোলে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবায় সক্রিয় খারাপ এই চক্রকে। কখনো হাতে টিভির বোম নিয়ে হাসপাতালে নিয়মিত যাতায়াত করে কৌশলে অপরাধী চক্রকে রক্ষা করছেন কথিত সংবাদিক পরিচয়ের কতিপয় মানুষ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাংবাদিকতার তকমা লাগিয়ে কিছু মানুষ হাসপাতাল ও ঔষুধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কখনা হাপসাতালের মালিক, কখনো উপদেষ্টা, কখনো বা পিআরও, আবার কখনো “আমি দেখব” পার্টির লোক যুক্ত হচ্ছে হাসপাতাল ব্যবসায়। এই আমি দেখব পার্টির লোকেরা বেশী হয় সাংবাদিকতার তকমা লাগিয়ে অথবা ক্ষমতাসীন দলের সাইনবোর্ড নিয়ে। গাজীপুর জেলায় এই রকম তকমা লাগানো কথিত সাংবাদিকের সংখ্যা ১৭জন। এই ১৭ সাংবাদিক গাজীপুর জেলার ভেজাল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো কৌশলে নিয়ন্ত্রন কাজে সক্রিয়।
অনুসন্ধান বলছে, গাজীপুর জেলায় সাংবাদিক কাম ডাক্তার নামে পরিচিত একাধিক সেবক কাজ করছেন মানুষের কল্যানে, মানুষের সেবায়। ঔষুধের দোকান করে সাংবাদিকতাও চালাচ্ছেন একই সাথে। সংসারও চলছে ভালো। সাংবাদিকতার সাইনবোর্ড লাগিয়ে সরকারী ডাক্তারদের ম্যানেজ করতে প্রতিদিন সরকারী হাপসাতাল ও সিভিল সার্জন অফিসে ভীড় করছেন কিছু সাংবাদিক। রাজনৈতিক খোলস পরিবর্তন করে বর্তমান সরকারী দলের নেতাদের সঙ্গে ফেসবুকে নিয়মিত ছবি দিয়ে তারা দেদারছে ভেজাল ঔষুধ বাজারজাত করছেন। গাজীপুরের তাজউদ্দীন হাসপাতালে কথিত আউট সোর্সিং সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন প্রায় ১৩ সাংবাদিক। জেলার একটি উপজেলা হাসপাতালের এক ঘটানায় দেখা যায়, বাইরে থাকা একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার নিয়মিত হাসাতালে আসেন না অথচ চেম্বার করেন, এই কথাগুলো নিজের মুখে বলে সাংবাদিকদেরও চেম্বারে আমন্ত্রন করেন এমন কর্মকান্ডের পিছনেও সাংবাদিকের সাহস কাজ করছে। কারণ ওই আরএমও বলেছিলেন, আমি হাপসাতালে না আসলেও মোবাইল ফোনে ম্যানেজ করতে পারি। আমার ভাইে (এক টিভির সাংবাদিক) নিয়মিত হাসপাতালে আসেন।
জানা গেছে, এই জেলায় স্বামী স্ত্রী দুজনই হাসপাতাল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। দুই জন দুই হাপসাতালে। এই সুবাধে সাংবাদিক পরিবারের একাধিক লোকও হাসপাতালে যুক্ত হয়ে গেছেন।
সূত্র বলছে, করোনাকালিন সময়ে ঢাকার ভেজাল হাসেপাতালে করোনা রোগী নিয়ে যাওয়ার কাজের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন ৩/৪জন কথিত সংবাদকর্মী। “রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা রোগী নিয়ে গেলেই এ্যাম্বুলেন্স পেত ১৫ হাজার টাকা গোপন সালামী” এই ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত তিন সাংবাদিক।
সরেজমিন জানা গেছে, হাসপাতালের কাগজপত্রে ভেজাল থাকলে সাংবাদিক বা ক্ষমতাসীন দলের দোহাই ছাড়া ঝামেলা মিটে না। রোগী পাওয়া, ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়া, সরকারী ডাক্তারকে নিরাপদ দেখিয়ে হাসপাতালে আনা, রোগীর কাছ থেকে বেশী টাকা আদায় ও আদায়ের ক্ষেত্রে ঝামেলা হলে মিট করা সহ নানা ধরণের ঔষুধ বিক্রির ক্ষেত্রেও ঝামেলা মিটাতে সাংবাদিক ব্যবহার করা হয়। কারণ সাংবাদিক তা ম্যানেজ করতে পারেন সহজে। আর এই জন্য এই খাতের সঙ্গে সাংবাদিকদের বেশী করে জড়িত করা হচ্ছে। আর কাঁচা টাকায় কম সময়ে বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর কিছু ব্যক্তি সাংবাদিকতার তকমা লাগিয়ে এই ঝুঁকিপূর্ন সেবাখাতকে আরো ঝুঁকিতে ফেলছে।
সাধারণ মানুষ বলছে, সব পেশা থেকে সাংবাদিকতাকে আলাদা করতে পারলে এই পেশার মান রক্ষা হবে। না হলে সাংবাদিকতাকে ব্যবহা করে অপরাধী চক্রগুলো আরো শক্তিশালী হবে। যেমনটি হয়ে গেছে স্বাস্থ্যখাত।