সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতালের সামনের সড়কে প্রায় ৩ ফুট উচ্চতায় পানি উঠে পুরাতন বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এতে হাসপাতাল ভবনের চারপাশ, ভারতেশ্বরী হোমসের সামনে ও ভেতরে পানি প্রবেশ করেছে। কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, ছাত্রী হোস্টেল মাঠ ও নার্সিং হোস্টেল ভবনের সামনেও বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে পানি প্রবেশ না করলেও ডাক্তার ও নার্সরা নৌকায় চলাচল করছেন। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও আত্মীয়-স্বজনদের পানির ভেতর হেঁটেই চলাচল করতে হচ্ছে। আর এতে তাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
হাসপাতাল রোডে পানির মধ্যে সীমিত আকারে রিকশা চলাচল করলেও ১০ টাকার ভাড়া ৩০-৪০ টাকায় যেতে হচ্ছে। আর এতে দরিদ্র রোগীদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা সদরের পোস্টকামুরী গ্রামের কলেজ ছাত্রী লাবনী আক্তার বলেন, “হাসপাতালের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে রিকশার পাশাপাশি নৌকাও ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে রোগী ও তাদের স্বজনদের নৌকায় নেয়া হচ্ছে না।”
এছাড়া হাসপাতাল রোডে একাধিক স্পিড ব্রেকার (গতিরোধক) থাকায় নৌকাও চালানো যাচ্ছে না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
হাসপাতাল রোডে চলাচলকারী রিকশাচালকরা জানিয়েছেন, “যাত্রী নিয়ে পানির ভেতর হেঁটে রিকশা টেনে নিতে হয়। প্রায় কোয়াটার মাইল রাস্তা যেতে ১২-১৫ মিনিট সময় লাগে। ৪-৫ বার যাতায়াত করলে পা ব্যথা হয়ে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এজন্য বেশি সময় রিকশা টানতে পারেন না। তাই একটু বেশি টাকা নিচ্ছেন।”
ভারতেশ্বরী হোমসের শিক্ষিকা হেনা সুলতানা বলেন, “কুমুদিনী হাসপাতালের ক্যাম্পাস জুড়ে পানি। তবু কাজ তো থেমে থাকে না। বাসা থেকে বের হলেই পানি। চলাচলের জন্য রিকশার পাশাপাশি আমরা নৌকাও ব্যবহার করছি।”
কুমুদিনী হাসপাতালের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক (অপারেশন) অনিমেষ ভৌমিক বলেন, “বন্যা ও ঈদের কারণে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। আগে আউটডোরে প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ২০০০ রোগী চিকিৎসা নিত। এখন ৫শ থেকে ৬শ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।”
এছাড়াও ১০৫০ বেডের এই হাসপাতালটিতে নিয়মিত ৭/৮শ রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিত। এখন দুই শতাধিক রোগী আছে। পানি বৃদ্ধির ফলে আমাদের কাজের গতি সঞ্চারে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলেও চলাচলের জন্য রিকশার পাশাপাশি তিনটি নৌকা ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া আউটডোর থেকে হাসপাতাল ভবন পর্যন্ত বেঞ্চ দেয়া হয়েছে।
এদিকে বংশাই ও লৌহজং নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার অধিকাংশ আঞ্চলিক সড়ক তলিয়ে গেছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার ৩ হাজার ১শ হেক্টর জমির বোনা আমন, ১৪ হেক্টর জমির আউশ ধান, ১২৫ হেক্টর জমির সবজি আবাদ, শতাধিক পোল্ট্রি ফার্ম ও মাছ চাষের শতাধিক পুকুর।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, “এতে মাছচাষিদের প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ বেরিয়ে গেছে। এছাড়া পোল্ট্রি ফার্মের মালিকরা নির্দিষ্ট বয়স হওয়ার আগেই মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন।”
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের অধিকাংশ আঞ্চলিক সড়ক।
এক মাছচাষি জানান, “পৌর এলাকার সাহাপাড়া গ্রামে ৮০ শতাংশ জমির একটি পুকুরে তিনি মাছ চাষ করেছেন। পুকুরটিতে রুই, কাতল, গ্লাসকার্প, পাঙ্গাস, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে। ১০-১২ দিন আগে কিছু মাছ বিক্রি করলেও দাম কম থাকায় আর বিক্রি করেননি।”
পুকুরটিতে বর্তমানে প্রায় তিন লাখ টাকার মাছ রয়েছে। মঙ্গলবারের বৃষ্টির পানিতে পুকুরের পার তলিয়ে গেছে। এছাড়া পাশের খাল দিয়ে লৌহজং নদী থেকে পুকুরের আশপাশে পানি প্রবেশ করছে। পুকুরটি তলিয়ে গেলে সব মাছ বেরিয়ে যাবে। এতে তার বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জানিয়েছেন, “মির্জাপুর উপজেলার ৩ হাজার ১শ হেক্টর জমির বোনা আমন, ১৪ হেক্টর জমির আউশ ধান ও ১২৫ হেক্টর জমির সবজি আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে।”