হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাটঃ বর্ষার শুরু থেকেই ভয়াল রূপ ধারণ করেছে তিস্তা নদী। তিস্তার তীব্র ভাঙনে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ৬৩টি চরের হাজারো পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। চোখের সামনে বসতভিটা হারিয়ে কাঁদছে তিস্তাপাড়ের মানুষ।
তিস্তা আর ধরলা নদী বেষ্টিত লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় চলতি বছরের মে মাস থেকে বন্যা শুরু হয়েছে। গত ৮-১০ দিন পানিবন্দি থেকে মুক্তি মিললেও নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে মানুষ। চোখের সামনে নদীর পেটে চলে যাচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি, বাঁধ, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদ। ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে নদীপাড়ের মানুষ।
অনেকেই রাস্তার পাশে বা বাঁধের ধারে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ভাঙন কবলিতদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারিভাবে সাত হাজার করে টাকা দেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে লালমনিরহাট সদরের চর গোকুন্ডা, আদিতমারী উপজেলার বাহাদুরপাড়া, চন্ডিমারী, কুটিরপাড়, কালীগঞ্জের আমিনগঞ্জ, চর বৈরাতী, হাতীবান্ধার সিংগীমারী, গড্ডিমারী, ডাউয়াবাড়ি, সিন্দুনা, পাটিকাপাড়া, ফকিরপাড়া, সানিয়াজানের বাঘের চর, নিজ শেখ সুন্দর ও পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে সলেডি স্প্যার বাঁধসহ সব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে আদিতমারীর কুটিরপাড়া ও বাহাদুরপাড়া গ্রামের বালুর বাঁধ।
এদিকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের আঙ্গরপোতা, সর্দারপাড়া ও কাতিপাড়ায় তিস্তার পানি প্রবেশ করে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি পানির তোড়ে ভেসে গেছে। এ সময় বালু পড়ে ৩৫ একর ধানক্ষেত নষ্ট হয়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিন উদ্দিন বলেন, চর সিন্দুনা গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
পরিবারগুলো বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর তালিকা জমা দিয়েছি। সিংগীমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু বলেন, তিস্তার ভাঙনের কাছে আমিও অসহায়। একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বাবুল হোসেন বলেন, আমরা চরবাসী কিছুই চাই না, শুধু একটা মনের মতো বাঁধ চাই।যাতে আর ঘরবাড়ি ভাঙতে না হয়।
লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় জানিয়েছে, জেলায় ২৩৬টি পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য সাত হাজার করে টাকা দেয়া হচ্ছে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিস্তা নদী খনন করে বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প পাঠানো আছে। তা একনেকে অনুমোদন হলে তিস্তাপাড়ের মানুষের দুঃখ ঘুচবে।