গ্রাম বাংলা ডেস্ক: জয়পুরহাটে বৃষ্টিস্নাত লাখো জনতার সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানে আলোচনায় বসুন। অন্যথায় ঈদের পর কর্মসূচি দেয়া হবে। সেই কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হলে হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ ডাকতে আমরা বাধ্য হবো।
গতকাল বিকেলে জয়পুরহাট জেলার রামদেও বাজলা (আরবি) সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।
সমাবেশে তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার সাথে শেখ হাসিনার জড়িত থাকার ইঙ্গিত করেন। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের কাদের টাকা জমা আছে তা তদন্ত করতে কমিটি গঠনের দাবি জানান।
মুষলধারায় বৃষ্টির মধ্যে ভিজে অগণিত নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার বক্তব্য শোনেন। সারা দেশে গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের প্রতিবাদে জেলা বিএনপির উদ্যোগে এই জনসভা হয়। ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর ঢাকার বাইরে এটি খালেদা জিয়ার তৃতীয় জনসভা। সর্বশেষ ২০১৩ সালের মার্চে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় এসেছিলেন খালেদা জিয়া।
মুষলধারার বৃষ্টির উপেক্ষা করে জয়পুরহাট সদর, পাঁচবিবি, কালাই, ক্ষেতলাল, আক্কেলপুর এই পাঁচ উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা জনসভায় আসেন। জয়পুরহাট ছাড়াও বগুড়া, নওগাঁ, গাইবান্ধা ও দিনাজপুর থেকেও নেতাকর্মীরা এই জনসভায় যোগ দেন। গত দুই দিন মুষলধারার বৃষ্টির মধ্যে কর্দমাক্ত মাঠে নেতাকর্মীরা এই জনসভায় মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে পুরো এলাকাকে সরব রাখে। খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে জয়পুরহাটের সড়কপথে শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়।
বেলা আড়াইটার দিকে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে জনসভা শুরু হয়। বিকেল পৌনে ৪টায় সরাসরি খালেদা জিয়া মঞ্চে পৌঁছলে তুমুল করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান নেতাকর্মীরা।
বৃষ্টিস্নাত বক্তৃতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া বলেন, দেশে কোনো বৈধ সরকার নেই। আওয়ামী লীগ জবরদখল করে ক্ষমতায় টিকে আছে। তাই এখন তারা তাদের বৈধতা দেয়ার কথা বলছে। কিন্তু বৈধতা দেয়ার মালিক কেবল জনগণ। কারণ জনগণ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তাদের ভোট দেয়নি।
তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি কোনো ভোট হয়নি। কোনো মানুষ ভোট কেন্দ্রে যায়নি। ছবিতে দেখা গেছে, কেন্দ্রে কোনো মানুষ নেই, কুকুর শুয়ে আছে। আর ভোট কেন্দ্রের ভেতরে যারা ছিলেন তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে সিল মেরেছে। তিনি বলেন, ৫ শতাংশ মানুষও ওই দিন ভোট দেয়নি। তাহলে কী করে আপনারা নিজেদের প্রতিনিধি দাবি করেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৪ জনকে নিয়ে যে যা-ই বলুক না কেন, ভোট না দিলে কি জনপ্রতিনিধি হওয়া যায়? জনগণ, আমরা, এমনকি কোনো রাজনৈতিক দলও নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ৯৫ শতাংশ মানুষ সেই নির্বাচনে ভোট দেয়নি।
তিনি বলেন, আমি জনগণের প্রতিনিধি। ৯৫ ভাগ জনগণ আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। আলোচনা করুন বা না করুন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই আপনাদের নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। আমরা ৯৫ শতাংশ জনগণের দল। আমাদের সাথেই আলোচনা করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাদের অবস্থা কতটা করুণ হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাদের আশপাশেও কেউ নেই। পাশের দেশের নির্বাচন দেখেও তারা হতাশ, নার্ভাস।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। খুনিদের হাত থেকে বাঁচতে চায়। এই পরিবর্তন হতে পারে একমাত্র ভোটের মাধ্যমে। তাই সময় নষ্ট না করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। প্রমাণ করুন জনগণ কাদের সাথে আছে।
তিনি বলেন, ঈদের পর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে। দ্রুত আলোচনায় বসুন, ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন দিন। আপনাদের সাথে নিয়ে কাজ করতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। আর যদি আলোচনায় না বসে কর্মসূচিতে বাধা দেন তাহলে হরতাল, অবরোধসহ অসহযোগ কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
আওয়ামী লীগকে দুর্নীতিবাজ উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, পত্রিকায় এসেছে সুইস ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু, শেয়ারবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনির মাধ্যমে টাকা চুরি করে পাচার করে এই টাকা সুইস ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। কারা এই টাকা পাচার করেছে এবং কারা এর সাথে জড়িত, তা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকাশ করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর দাবি জানান তিনি।
দুর্নীতি দমন কমিশনকে একচোখা কমিশন আখ্যা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ টাকা পাচার করছে, তা আপনারা দেখছেন না। চোখ খুলে দেখুন, কারা এই টাকা পাচার করছে।
জয়পুরহাটবাসীকে ‘সালাম’ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, বিগত আন্দোলনে এই জেলায় ১২ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। বহু আহত হয়েছেন। আপনারা যে সাহস দেখিয়েছেন, তা দেখে আমারও সাহস বেড়ে গেছে। সেই সাহস নিয়ে ঈদের পরে জোরেশোরে আন্দোলন শুরু করব। এই সন্ত্রাসী, লুটেরা সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করব। আমার কোনো ভয় নেই। আমি আপনাদের পাশে আছি, থাকব।
খালেদা জিয়া বলেন, কোর্টের রায় অনুযায়ী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বৈধ হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ১১ জন সদস্য কেন বৈধ হবেন না। তারা তো কোনো আইন পাস করবেন না। তাই অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিন।
খালেদা জিয়া বলেন, এই জালেম সরকার সারা দেশে আমাদের ৩১০ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। গুম করেছে ৫৬ জনকে। এর সাথে জড়িত সরকার ও তাদের গুণ্ডাবাহিনী।
র্যাব বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে র্যাব গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু এই সরকার র্যাবকে দলীয়করণ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যবহার করছে। র্যাবকে তারা রক্ষীবাহিনীতে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে সাত খুন এবং নীলফামারী, সাতক্ষীরা, ফেনী, লক্ষ্মীপুরে গুম-খুনের সাথে র্যাব জড়িত। কর্নেল জিয়া, তারেক সাঈদ নাম না জানা আরো অনেক র্যাব কর্মকতা এর সাথে জড়িত। তাই এই র্যাবের এখন আর কোনো প্রয়োজন নেই। অবিলম্বে এই বাহিনী বিলুপ্ত করতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, আজ পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। শেখ হাসিনাকে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
বিচার বিভাগ দলীয় অঙ্গসংগঠনে পরিণত করা হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে এখন আর কিছুই নেই। একদেশে দুই ধরনের বিচার চলছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের জেলে ঢুকানো হচ্ছে আর সরকারি দলের লোকেরা গুম, খুন, লুট করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। তাদের কোনো বিচার হচ্ছে না।
খালেদা জিয়া পুলিশকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা জনগণের সেবক। যে সরকার আসবে তাদের অধীনেই আপনাদের কাজ করতে হয়। তবে জনগণের ওপর গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করবেন না। তিনি বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় এসেই বিডিআর ধ্বংস করেছে। এরা রক্তপিপাসু, ড্রাকুলা। তাদের রক্ত রঞ্জিত হাতে এ দেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে না।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের ‘সোনার ছেলেরা’ সারা দেশে গুণ্ডামী-সন্ত্রাসীতে নেমেছে। কয়েক দিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিবির নেতার গোড়ালি কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তার বুকে গুলি করা হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত কাউকেই ধরা হয়নি। এ কেমন মানবতা? তিনি বলেন, বিহারি ক্যাম্পে আওয়ামী লীগের লোকজনই ঘর তালাবদ্ধ করে আগুন দিয়ে ৯ জন মানুষকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, এই ঘটনার সাথে স্থানীয় তথাকথিক এমপি জড়িত; অথচ তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। উল্টো বিহারিদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের গডফাদার। সন্ত্রাসীদের গডফাদার শামীম ওসমানের পরিবারকে সমর্থন করেন শেখ হাসিনা। নিজাম হাজারী, তাহেরকেও তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। গডফাদারদের মা শেখ হাাসিনা ক্ষমতায় থাকলে এই দেশের জনগণের কোনো কল্যাণ হবে না।
তিনি বলেন, সরকার কাউকে সম্মান দিতে জানে না। নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসকে তারা নানাভাবে অপমান করেছে। আমরা ক্ষমতায় গেলে তার সম্মান ফিরিয়ে দেবো।
তিনি বলেন, দেশে আজ জনগণের কোনো নিরাপত্তা নেই। মেয়েরা লাঞ্ছিত হচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। অর্থনীতি আজ বিপর্যস্ত। ঋণ নিতে নিতে ব্যাংকগুলোকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। দুর্নীতি ও অনিয়মে ছেয়ে গেছে সারা দেশ।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়। ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ লোক না খেয়ে মারা গিয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ মুজিব। দুর্ভিক্ষের সেই সময় তিনি তার ছেলেকে রাজমুকুট পরিয়ে বিয়ে করিয়েছিলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, অবৈধ এ সরকারের অধীনে কোনো ধর্মের মানুষই নিরাপদ নয়। হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দিরে লুটপাট করা হচ্ছে। রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। খ্রিষ্টানরা পদে পদে লাঞ্ছিত হচ্ছে। আমরা বিএনপি কাউকে সংখ্যালঘু মনে করি না। সবাই বাংলাদেশী। সবাইকে নিয়েই আমরা কাজ করতে চাই।
ফরমালিন প্রয়োগের অভিযোগে সাম্প্রতিক সময়ে ফল ধ্বংসের প্রতিবাদ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনাই ফরমালিন আমদানি করেছেন। কয়েক দিন আগে তিনি বলেছেন, বিএনপিকে তারা ফরমালিন দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তাহলে তো ফরমালিনের জন্য হাসিনাকে ধরলেই হয়। ভরা মওসুমে নির্বিচারে কেন ফল নষ্ট করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতির সম্মুখীন করা হচ্ছে তা জানতে চান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, সরকার দেশের ফল ধ্বংস করে বিদেশীদের ফল ব্যবসার সুযোগ করে দিতে চায়।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের পিতা শেখ মুজিব বাকশাল গঠন করে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করেছিলেন। আর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের পুনর্জন্ম দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের নাম আওয়ামী লীগকেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের উচিত জিয়াউর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান লোক পাঠিয়ে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন।
জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরেছিলেন। এর ১৩ দিন পর তাহলে কেন জিয়াউর রহমান মারা গেলেন? নিশ্চয়ই এর পেপ্রণ কারণ আছে। শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর সারা দেশ যখন শোকাচ্ছন্ন, ঢাকায় তার জানাজায় অংশ নিতে ব্যস্ত তখন আপনি বোরকা পরে পালাচ্ছিলেন কেন? তাহলে কি আপনি এই হত্যায় জড়িত ছিলেন?
আগামীতে ক্ষমতায় গেলে উন্নয়নের বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা হবে। কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইসিটিকে গুরুত্ব দেয়া হবে।
পোশাক শিল্পে বিশৃঙ্খলা চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো সহায়তা দেয়া হয়নি। কোটি কোটি টাকা উঠিয়ে তা লুটপাট করা হয়েছে। তিনি বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির অভাবে কেউ আজ বিনিয়োগে আসছে না। এ ছাড়া সরকারের চাঁদাবাজির কারণেও অনেকে বিনিয়োগ করছেন না।
জয়পুরহাটবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ঈদের পর আন্দোলন শুরু করব। আপনারা কি আন্দোলন চান? এ সময় উপস্থিত লাখো জনতা সমস্বরে হ্যাঁ বলে উঠেন। খালেদা জিয়া বলেন, তাহলে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হন। এই জুলুমবাজ অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে আমরা আপনাদের মুখে হাসি ফুটাবো।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে এখন প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি। কে ছোট কে বড়, কে ডান কে বাম তা দেখার সময় নেই। সবাইকে রাজপথে নেমে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় করতে হবে।
জেলা বিএনপি সভাপতি মোজাহার আলী প্রধানের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশীদ, আসাদুল হাবিব দুলু, যুবদলের সিনিয়র সভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, জেলার সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান, সিনিয়র সহসভাপতি প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিকুল আলম বুলু, সদর পৌর মেয়র আজিজুর রহমান মোল্লা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জনসভায় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, ড্যাব নেতা অধ্যাপক ডা: খন্দকার জিয়াউল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান : বগুড়া সার্কিট হাউজ থেকে জয়পুরহাটের জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার আগে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সংপ্তি বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া। তিনি সরকার পতন আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের সব মতবিরোধ ভুলে একযোগে প্রস্তুত হতে বলেন। তিনি বলেন, সারা দেশে খুন, হত্যা, গুম আর সাধারণ মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচারের কারণে দেশবাসী আজ অসহায়। অত্যাচার-নির্যাতন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এ সরকার মতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে।
বিএনপির বগুড়া জেলা সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন চান, যুবদল সেক্রেটারি আরফাজুর রহমান আপেল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, জাতিকে মেধাশূন্য করতে সরকার বেছে বেছে মেধাবী যুবসমাজকে গুম-হত্যা করছে। গুম-হত্যায় অতিষ্ঠ হয়ে আজ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, ছাত্র, যুবক, ব্যবসায়ী, কর্মচারী, শিক-সাংবাদিক এ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চান। দেশের সব দলকে এক হয়ে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন থেকে মুক্তির জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।
বগুড়ার প্রতি সরকারের উন্নয়নের বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এ সরকার বগুড়ায় কোনো উন্নয়ন করেনি। বিএনপি মতায় গেলে বগুড়ার ব্যাপক উন্নয়ন করা হবে।
সংপ্তি বক্তব্য রাখার আগে খালেদা জিয়া গত বছর হরতালের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত যুবদল নেতা ইউসুফ আলীর মা আনোয়ারা বেগমের হাতে আর্থিক সহযোগিতা তুলে দেন।