ঢাকা: টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে নদনদীর পানি। এতে দেশের প্রায় ১৭ জেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অনবতি হয়েছে। পানির তোড়ে গঙ্গাচড়া উপজেলার ২ ইউনিয়নের অর্ধশত ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে, আড়িয়াল খাঁ নদ উপচে পানি ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশে। গোয়াইনঘাটে ৪র্থ দফা বন্যায় উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি কিছুটা কমলেও বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।
শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচি, সদর ও কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চল ও গ্রামগুলোর ঘর-বাড়িতে ২ সপ্তাহ ধরে পানি থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। অপরদিকে, সুনামগঞ্জে নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ছাতকে ৩য় বারের বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পুরো উপজেলার জনজীবন। উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নই আবারো বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। একদিকে করোনায় কর্মহীন অন্যদিকে বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়ায় মানবেতর জীবন যাবন করছে বানভাসি মানুষ। ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে তারা।
স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে জানান, রংপুরে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অনবতি হয়েছে। পানির তোড়ে গঙ্গাচড়া উপজেলার ২ ইউনিয়নের অর্ধশত ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে একটি মাদ্রাসা।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে বিকেল ৩টায় তা ৮ সেন্টিমিটার নিচে নেমে আসে। উজানের ঢলে তিস্তা নদীর তীব্র স্রোতে গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত ২ দিনে এ গ্রামের প্রায় ৩০টি ঘর-বাড়ি, ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনে হুমকির মুখে পড়েছে শংকরদহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা। ঘরবাড়ি ও মাদ্রাসা বাঁচাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল হাদী বলেন, তিস্তা নদীর পানি ক্রমাগত বাড়ছে। নদীর তীব্র স্রোতে শংকরদহে ২ দিনে প্রায় ৩০টি ঘর-বাড়ি ভেঙে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩ হাজার জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ করলেও এখানে কমপক্ষে ১৫ হাজার জিও ব্যাগ প্রয়োজন। তীব্র স্রোতে পানি বাড়তে থাকলে শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন রংপুর-লালমনিরহাট সড়কটি ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার শংঙ্কা রয়েছে। নদী শাসন না হওয়ায় এবার তিস্তা আগ্রাসী রুপ নিলে লহ্মীটারীর কমপক্ষে ৫০ হাজার পরিবারের ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে নদীগর্ভে চলে যাবে।
এদিকে গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চরচিলাখাল, মটুকপুর, বিনবিনার চরের প্রায় ২৫টি ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন রাজু জানিয়েছেন।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধে আমরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। আশাকরি ঘর-বাড়িসহ অবকাঠামোগুলো রক্ষা করা যাবে।
শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, হু হু করে বাড়ছে পানি। গত কয়েকদিনের পানি বৃদ্ধির ফলে আড়িয়াল খাঁ নদের পাড় উপচে পানি ছড়িয়ে পরেছে আশে-পাশে। ডুবে গেছে আড়িয়াল খাঁ নদের চরাঞ্চল। স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, প্রায় ১৩ বছর পর বন্যার দেখা মিললো। ২০০৭ সালের বন্যায় আড়িয়াল খাঁ নদের পানি উপচে ছড়িয়ে পরেছিল লোকালয়ে। তবে চলতি বছর ওই রকম পানি না হলেও বিগত অন্যান্য বছরের চেয়ে পানি বেড়েছে এ বছর। জেলার শিবচর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদ সংলগ্ন ইউনিয়নগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার সন্যাসীরচর, দত্তপাড়া, শিরুয়াইল, নিলখীর বিভিন্ন গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে আড়িয়াল খাঁ সংলগ্ন সন্যাসীরচর ইউনিয়ন ও পাশের সদরপুরের চরমানাইর এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। সন্যাসীরচর এলাকার ১ হাজার ৬শত মানুষ পানিবন্দী রয়েছে।
গোয়াইনঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, গোয়াইনঘাটে আবারো বন্যা দেখা দিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ফের বিপর্যস্ত জনজীবন। এ নিয়ে ৪র্থ দফা বন্যার ভয়াবহতার মুখোমুখি গোটা উপজেলাবাসি। নিম্নাঞ্চলের পাশাপাশি পানিতে প্লাবিত হয়েছে উপজেলা সদরও। এবারের বন্যায় উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গোয়াইনঘাটের পিয়াইন, সারী এবং গোয়াইনের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত সোমবার রাত ১১টার পর থেকে ফের উজান থেকে নেমে আসা শুরু হলে পাহাড়ি ঢলের স্রোতে উপজেলার সবকটি এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। সোমবার রাতের পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতের তীব্রতায় বাউরভাগ, নয়াগাঙ্গের পাড় গ্রামে পিয়াইন নদীর ভাঙ্গন আবারো মারাত্মক আকার ধারণ করে। ফলে বেশ কিছু জমি নতুন করে পিয়াইন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জিসি ৮ কিলোমিটিার জাফলং সড়ক। সড়কে বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন আর পানিতে নিমজ্জিত থাকায় যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে সালুটিকর-গোয়াইনঘাট ও সারী-গোয়াইন সড়কও।
চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, যমুনার পানি কিছুটা কমলেও বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রভাবিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচি, সদর ও কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চল ও গ্রাম গুলোর ঘর-বাড়িতে ২ সপ্তাহ ধরে পানি বিরাজমান থাকায় মানুষের দিন-দিন আরো দুর্ভোগ বাড়ছে। বিশেষ করে যমুনা তীরবর্তী বেলকুচি পৌর এলাকার অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ঘর-বাড়ি গুলো তলিয়ে পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল বিকেলে বন্যায় বিপর্যস্ত বেলকুচি পৌর এলাকার যমুনা তীরবর্তী দেলুয়া, রতনকান্দি, বাংগুয়া, সোহাগপুর, ক্ষিদ্রমাটিয়া এলাকা পরিদর্শন করে সরকারী বরাদ্দের ৫০ বস্তা বিভিন্ন শুকনা খাবার বিতরণ করে পৌর মেয়র বেগম আশানুর বিশ্বাস।
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ছাতকে ৩য় বারের বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পুরো উপজেলার জনজীবন। উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নই আবারো বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছ। সোমবার থেকে উপজেলা সদরের সাথে সকল ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ছাতকে সুরমা নদী বিপদ সীমার ১১৮ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলার পিয়াইন, চেলা, বটের খাল, বোকা, ডাউকি নদীসহ সবকটি নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।