গাজীপুর: গাজীপুর জেলায় বেসরকারী হাসপাতাল বা প্রাইভেট ক্লিনিক বা ডায়গনষ্টিক সেন্টারের সঠিক সংখ্যার জন্য অংক বিষারদ হলেও জানা মুশকিল। সরকারী বেসরকারী বা সাংগঠনিক সূত্র ভিন্ন রকম অংক দেয়। আবার বাস্তবের সংখ্যা প্রাপ্ত সংখ্যাকে চ্যালেঞ্জ দেয়। এই অবস্থায় সঠিক সংখ্যা জানতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেলো, এক হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, আমার সব কাগজপত্র আপডেট। ডাব খান তারপর কাগজপত্র দেই। ডাব খাওয়াতে না পেরে তিনি বললেন, কাগজ দিতে একটু সময় লাগবে। কয়েক ঘন্টা পর হোন্ডায় করে মালিক সাহেব অনুসন্ধান টিমের সঙ্গে রাস্তায় দেখা করে বললেন, আসলে আমার ট্রেডলাইসেন্সও নেই। আমি কাগজপত্র করতে এক দালালকে দিয়েছি। এখনো পাইনি। আপনারা দুই হাজার টাকা নেন। কাগজপত্র পাওয়ার পর পাঠিয়ে দেব।
সরেজমিন সোমবার গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ায় গিয়ে এই ঘটনা মিলে। কাপাসিয়া শহরের আল হায়াত জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডাগনষ্টিক সেন্টারের মালিক একজন অল্প বয়সী ছেলে। নাম আজিজুল হক। তিনি হাসপাতালের চেয়ারম্যান। হাসপাতালের ভেতরের অবস্থা ও মানুষের আসা-যাওয়া দেখে মনে হল ভালই চলে। জানা গেলো. এই হাপসাতালে সপ্তাহে বেশ কয়েকটি অপারেশন হয়। সোমবার রাতেও একটি অপরাশেন ছিল বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান। এই হাাসপাতালে অপারেশন করেন একজন সরকারি হাসপাতালের গাইনির ডাক্তার। তিনি নিয়মিত সন্ধ্যার পর বসেন। সরকারি ডাক্তার হওয়ায় রোগীর সংখ্যাও বেশী। ডাক্তারের পোষাক পরে অনেকেই হাপসাতালে আনাগোনা করছেন। ডাক্তারের পোষাক ও গলায় ডাক্তারী যন্ত্র থাকায় কে ডাক্তার কে নার্স বুঝা কঠিন হলেও হাসপাতালটি রমরমা এটা সঠিক।
চেয়ারম্যান আজিজুল হক বললেন, আমি নতুন করেছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র করার জন্য এক দালালকে দিয়েছি। তিনি কাজ করছেন। এখনো কাগজপত্র হাতে পাইনি। এসময় তিনি ওই দালালকে ফোন করেন। ঠিক ওই সময়েই রিক্সায় করে আসা অনেক গুলো ডাব চেয়ারম্যান সাহেবের কক্ষে চলে এলো। তারপর চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, ডাব খান। কাগজপত্র আসতেছে। যেখানেই থাকেন পাঠিয়ে দেব। কিন্তু অনুসন্ধান টিম ডাব না খেয়ে চলে আসে। কয়েক ঘন্টা পর চেয়ারম্যান সাহেব ফোন করে কাগজপত্র দিতে চান। অনুসন্ধান টিম গাজীপুরে ফেরার রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে দেন। এরপর চেয়ারম্যান সাহেব দুটি হোন্ডায় করে তিন জন লোক সাথে নিয়ে এসে টিমকে বলেন, আমার ট্রেডলাইসেন্সও নেই। তাই কাগজপত্র দিতে দেরী হবে। আপাতত দুই হাজার টাকা রাখেন। পরে কাগজপত্র সহ সব কিছু পাঠিয়ে দেয়া হবে। এরপর অনুসন্ধান টিম চেয়ারম্যান সাহেবকে জানান, ডাব খেতে বা টাকা নিতে আসিনি। আপনি সরকারী নিয়ম কানুন মেনে প্রতিষ্ঠান চালাবেন এই আশা রইল।
এই বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা.মোঃ মামুনুর রহমান জানান, আল হায়াত হাসপাতালে আমাদের একজন গাইনী ডাক্তার যান শুনেছি। তবে ওই হাসপাতালের কাগজপত্র নেই সেটা জানিনা। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসমত আরা জানান, এত কিছু জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
অনুসন্ধানকালীন সময়ে গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিসের একজন কর্মচারী বার বার ফোন করে আল হায়াত হাসপাতালের পক্ষে তদ্বির করেন।
এ বিষয়ে গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান বলেছেন, জেলায় প্রায় সাড়ে ৪শত প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিক সেন্টার আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র আপডেট করার কাজ চলছে। আল হায়াত হাসপাতালের বিষয়টি জানা ছিল না। জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
কালকে আসছে——- চেম্বারে ডাক্তারের চেয়ারে বসা ভদ্রলোক বললেন, আমি সেই ডাক্তার নই, বসে বসে ফেসবুক চালাই।