সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলে যমুনা, ধলেশ্বরী, ঝিনাইসহ সকল নদ-নদীর পানি টানা বৃষ্টিপাতের কারণে পুনরায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। যমুনা ও ঝিনাই নদীর পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৩২ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নদীর পানি পুনরায় বাড়তে থাকায় চরাঞ্চলের মানুষ প্রথম দফার বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই আবারও ২য় দফা বন্যা মোবাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নদী তীরবর্তী অন্তত ১৩৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এদিকে ৫ হাজার ৯২৮ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত অবস্থায় হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে,”গত ২৪ ঘণ্টায় সোমবার (১৩ জুলাই) সকালে ধলেশ্বরী নদীর পানি ১ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া যমুনার নদীর পানি ২০ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩ সে.মি উপরে এবং ঝিনাই নদীর পানি ১৪ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫ সে.মি. উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।”
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা যায় যে, “জেলায় এখন পর্যন্ত টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, দেলদুয়ার, ভূঞাপুর, কালিহাতী এবং গোপালপুর উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের অন্তত ১৩৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়। অপরদিকে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভা আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে ২১ হাজার ১৭৮টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।”
এছাড়াও অন্যদিকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৯ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপরদিকে ৫৮৬টি ঘরবাড়ি সম্পূণ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে এবং আংশিক ১০৭৫টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও নাগরপুরে ১টি স্কুল নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ২টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ৬টি উপজেলার ১৬২ বর্গ কিলোমিটার প্লাবিত হয়েছে।
সূত্র আরো জানিয়েছে, “জেলায় এখন পর্যন্ত ৫২ কি.মি. আংশিক কাঁচা রাস্তা এবং ৭ কি.মি. আংশিক পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ৩টি আংশিক ব্রিজ ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে টিউওবেল ৫টি এবং ২.৫ কি.মি. আংশিক নদীর বাঁধ ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া জেলায় ৪০০ মে.টন জিআর চাল, নগদ ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।”
অপরদিকে শিশু খাদ্য ২ লাখ টাকা এবং গো-খাদ্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এগুলো বিতরণ কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে। ইতিমধ্যেই বন্যা কবলিত উপজেলায় বরাদ্দকৃত ২ হাজার শুকনা প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আরো ২ হাজার শুকনা প্যাকেট বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা যায় যে, “নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলী জমিতে পানি নিমজ্জিত হওয়ার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আজ পর্যন্ত ৫ হাজার ৯২৮ হেক্টর ফসলী জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে বোনা আমন ২৩ হেক্টর, রোপা আমন (বীজতলা) ৩ হেক্টর, পাট ৭৬৫ হেক্টর, আউশ ৮৯৬ হেক্টর, সবজি ২৮৫ হেক্টর, তিল ১৬৫২ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে।”
আর এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার বলেছেন, “ফসলি জমিগুলোতে পানি স্থিতিশীল থাকায় ৫ড় ভাগ ফসল ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাকি ৫ড় ভাগ ফসলের কোন ক্ষতি হবে না। তবে জেলা কৃষি বিভাগ এ ব্যাপারে কাজ করছে।”
আর এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিজ্ঞান শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানিয়েছেন, “বর্ষণের ফলে ফের নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামনে আরো নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”