সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ যমুনা তীরবর্তী মানুষ ভাঙনের তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন । এমনকি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম চালালেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না ভাঙন। আর এতে জমিজমা হারিয়ে সর্বস্বান্ত গ্রামবাসী এখন অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন বসবাসের ঘরবাড়ি। অনেকে আবার ভাঙনে সেটাও হারিয়েছেন। টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলা গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আলীপুর আর বেলটিয়া গ্রামের দৃশ্য এখন এমনই।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্যে জানা যায় যে, “আলীপুর গ্রামটি নিয়ে গঠিত উপজেলা গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড। আর এ ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা এক হাজার সাতশ জন। দীর্ঘদিনের নদী ভাঙনের কবলে পড়ে গ্রামটির অধিকাংশ ভোটারই এখন বসবাস করছেন বেলটিয়া গ্রামে। বন্যার শুরুতেই এ গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি আর প্রায় ৪০ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিলীন হয়েছে এক কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। এখন ভাঙনের কবলে রয়েছে ১৯৩৫ সালে স্থাপিত ৩নং বেলটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (আলীপুর), দুটি মসজিদ আর ১৯৮২ সালে স্থাপিত আলীপুর দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসাসহ দুই শতাধিক ঘরবাড়ি আর শত শত বিঘা আবাদি জমি।”
এছাড়াও চলতি বছরের জুনে যমুনার ভাঙনরোধে কালিহাতি উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের বেলটিয়া আর আলীপুর গ্রামের দেড়শ মিটার এলাকায় দশ হাজার নয়শ জিও ব্যাগ ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে এতেও ভাঙন বন্ধ না হওয়ায় সম্প্রতি ড্রেজারের মাধ্যমে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ভাঙন কবলিত বেলটিয়া গ্রামের কিছু অংশে আবার ফেলা হচ্ছে বালু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ আর বালু অপরিকল্পিতভাবে ফেলার কারণে গ্রামগুলোতে ভাঙন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। ভাঙন তীব্র হওয়ায় দ্রুতই তাদের ঘরবাড়ি আর জমিজমা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এসব জোড়াতালির পরিবর্তে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।”
ভাঙনের শিকার রহিমা বেগম জানান, “যমুনার ভাঙন কবলে পড়ে এখন আমরা সর্বস্বান্ত। নদীর পেটে গেছে আমাগো জমিজমা। এখন জীবন বাঁচাইতে নৌকায় মাথা গোঁজার ঘর, আসবাবপত্র আর পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যত্র সইরা যাইতাছি।”
ভাঙন আতঙ্কিত মমতা বলেছেন,”জমিজমা নদীর পেটে গেছে এখন ভয়ে আছি কখন হারামু ঘরবাড়ি। ছোট ছোট বাচ্চাগুলারে নিয়া কই যামু কিছুই বুঝবার পারতাছি না।”
আলীপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ জানান, “ঘরবাড়িসহ তার ৫৫ শতাংশ জমি নদীগর্ভে হারালেও তিনি পাননি কোনো সরকারি সহায়তা। তবে ওই গ্রামের ঘরবাড়ি না হারানো ব্যক্তিরা সরকারি সহায়তা ঠিকই পেয়েছেন।”
গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল খালেক বলেন, “গত জুনে ওয়ার্ডের দেড়শ মিটার এলাকায় দশ হাজার নয়শটি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এরপরও ভয়াবহ ভাঙন চলছে তার ওয়ার্ডে। ভাঙনের কবলে পড়ে ইতোমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৪০টি ঘরবাড়ি, প্রায় ৪০ বিঘা ফসলি জমি আর এক কিলোমিটার কাঁচা সড়ক।”
গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার বলেন,”পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডের বেলটিয়া আর আলীপুরে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য আর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে।”
আর এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী জানিয়েছেন, “ভাঙনরোধে নদীর দুইপাড়ে পাকা বাঁধ নির্মাণের জন্য ২৪১ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। পানি কমলেই এ কাজ শুরু হবে। এছাড়াও নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে এসে নদীতে স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম।”