আগামী ৬ মাসের মধ্যে সম্প্রচার আইন করা হবে বলে সংসদে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, সম্প্রচার আইন করার পরেই সম্প্রচার কমিশনও গঠন করা হবে।
মঙ্গলবার (২০ জানুয়ারি) দশম সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে দ্বিতীয় কার্যদিবসে সরকার দলীয় সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
এর আগে শওকত চৌধুরীর (নীলফামারী-৪) তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন-১ এর জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রচার আইন’ প্রণীত হওয়ার পরেই ‘সম্প্রচার কমিশন’ গঠন করা হবে। এ কমিশন স্যাটেলাইট টিলিভিশনে প্রচারিত বিষয়বস্তুর মানদণ্ড, বিজ্ঞাপন প্রচারের সময়কাল নির্ধারণসহ নীতিমালা ও আইন বাস্তবায়ন করবে।
ইনু বলেন, বেসরকারি টিভিতে বিজ্ঞাপন বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না। বিজ্ঞাপন প্রচারের সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিতকল্পে ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতামলা, ২০১৪-তে বিজ্ঞাপন নীতিমালা শিরোনামে একটি অধ্যায় সংযোজন করা হয়েছে। সম্প্রচার আইন প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান আছে। এ আইন প্রণয়নের পরেই সম্প্রচার কমিশন গঠন করা হবে।
শওকত চৌধুরীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বিদেশি বিজ্ঞাপন সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা নেই। তবে মন্ত্রণালয় বিদেশি বিজ্ঞাপন সম্প্রচারের বিষয়টি মনিটর করছে।
অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ভারতে বাংলাদেশি চ্যানেল দেখানো হয় না একথা ঠিক নয়। সেদেশের তথ্য মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর কিছু কিছু বাংলাদেশি চ্যানেল দেখানো হচ্ছে। তবে পশ্চিবঙ্গের বেশ কিছু এলাকায় বাংলাদেশি চ্যানেল দেখানো হয় না। ভারতের আইনে কোনো বাধা নিষেধ নেই, তবে ব্যবসায়িক চুক্তি সমস্যার কারণে দেখানো হচ্ছে না।
বিভিন্ন টিভিতে হারবাল, ইউনানিসহ বিভিন্নজনের চটকদার ও প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনের প্রচার বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে হাজী সেলিম (ঢাকা-৭) প্রশ্ন করেন।
এর উত্তরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিটিভির নিজস্ব বিজ্ঞাপন নীতিমালা থাকলেও অন্যান্য চ্যানেলের জন্য অনুসরণীয় বিজ্ঞাপন নীতিমালা নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় ওষুধ নীতি-২০০৫ এ ওষুধ ও স্বাস্থ্য বিষয়াবলির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের দ্বারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধি নিষেধ আছে। অবৈধ পণ্য কিংবা ওষুধ বিপণন বিষয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার না করার জন্য বেসরকারি টিভি চ্যালেনগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সম্প্রচার কমিশন গঠিত হলে প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারে বিধি নিষেধ আরোপ করা সম্ভব হবে।
এস এম জগলুল হায়দারের (সাতক্ষীরা-৪) প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের আওতায় জেলা পর্যায়ে ৬৪টি ও উপজেলা পর্যায়ে ৪টি তথ্য অফিসসহ মোট ৬৮টি তথ্য অফিস আছে। তবে আপাতত উপজেলা পর্যায়ে তথ্য অফিস করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
‘আধুনিক মানসম্পন্ন টেলিভিশন পরিচালনার লক্ষ্যে বিটিভির কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হবে কি না’ ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, বিটিভির সম্প্রচার কার্যক্রমকে যুগোপযোগী ও গতিশীল করতে ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রামপুরা টিভি কমপ্লেক্স ১২ তলা সদর দপ্তর ভবন নির্মাণ কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন আছে। পাশাপাশি ৩৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যায়ে চট্টগ্রাম টিভি কেন্দ্রের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ (সংশোধিত) প্রকল্পের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও ৯শ’ ৯৭ কোটি টাকা ব্যায়ে ৫টি বিভাগীয় শহরে পূর্ণাঙ্গ টিভি কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিটিভিকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ৯৪ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে মর্ডানাইজেশন, ডিজিটালাইজেশন এবং অটোমেশন অব বাংলাদেশ টিভি সেন্ট্রাল সিস্টেম শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। ৭০১ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশব্যাপী ডিজিটাল টেলিস্ট্রিয়াল সম্প্রচার প্রবর্তন শীর্ষক প্রকল্পও গ্রহণ করা হবে।
ফকরুল ইমামের (ময়মনসিংহ-৮) এক প্রশ্নের উত্তরে ইনু বলেন, প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন জেলা হতে প্রকাশিত সরকারি মিডিয়া তালিকাভুক্ত পত্রিকাকে দৈনিক প্রচার সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়। এর মধ্যে বাংলা দৈনিক পত্রিকার প্রচার সংখ্যা ৩ হাজার থেকে ২০ হাজার হলে ২টি এবং ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার একইসংখ্যক প্রচার সংখ্যায় ৩টি কার্ড প্রদান করা হয়।
২০০১ সালের পহেলা জানুয়ারি হতে এ পর্যন্ত ৩৭৪টিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান তথ্য মন্ত্রী।