আধুনিক বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের জন্মদিন আজ

Slider জাতীয়

ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম: ‘আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে/হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।’ কিংবা সোনালি কাবিন কবিতায়- ‘বধূবরণের নামে দাঁড়িয়েছে মহামাতৃকুল/গাঙের ঢেউয়ের মতো বলো কন্যা কবুল কবুল।’ আবার ‘আম্মা বলেন, পড়রে সোনা/ আব্বা বলেন, মন দে/পাঠে আমার মন বসে না/কাঁঠালচাঁপার গন্ধে।’

এমন অসংখ্য কালজয়ী কবিতা ও শিশুতোষ কবিতার স্রষ্টা, আবহমান বাংলা ও বাঙালি ঐতিহ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদের ৮৫তম জন্মদিন আজ ১১ জুলাই আজ শনিবার। ১৯৩৬ সালের এই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌড়াইল গ্রামের মোল্লাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, আত্মজীবনীসহ বিভিন্ন বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন বরেণ্য এই কবি।

আল মাহমুদের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘সোনালী কাবিন’, ‘অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না’, ‘একচক্ষু হরিণ’, ‘মিথ্যাবাদী রাখাল’, ‘আমি দূরগামী’, ‘দ্বিতীয় ভাঙন’, ‘উড়ালকাব্য’ ইত্যাদি। ‘কাবিলের বোন’, ‘উপমহাদেশ’, ‘ডাহুকি’, ‘আগুনের মেয়ে’, ‘চতুরঙ্গ’ ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। ‘পানকৌড়ির রক্ত’সহ বেশকিছু গল্পগ্রন্থও রচনা করেছেন তিনি। এ ছাড়া ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’ তার আত্মজীবনী গ্রন্থ।

বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তী কবি আল মাহমুদের বর্ণমালার পাঠ শুরু হয় দাদি বেগম হাসিনা বানু মীরের কাছে। ভাষা আন্দোলনের সময় নিয়াজ মোহাম্মদ হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র থাকা অবস্থায় ব্রা‏হ্মণবাড়ীয়ায় ভাষা আন্দোলন কমিটির লিফলেটে তার কবিতা ছাপা হলে পুলিশ তাকে খুঁজতে থাকে। সে সময় ভাষার মিছিলে গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে আল মাহমুদের কবিতা গান হিসেবে গাওয়া হতো।

লেখালেখি ও স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য তিনি ঢাকায় আসেন ১৯৫৪ সালে। চাকরি নেন দৈনিক মিল্লাতে। ১৯৫৫ সালে বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায় আল মাহমুদের কবিতা ছাপা হলে বাংলা সাহিত্যে সাড়া পড়ে যায়। ১৯৫৫ সাল কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী কাফেলা পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দিলে তিনি সেখানে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।

১৯৬৩ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে যোগ দেন প্রুফ রিডার হিসেবে। সে বছর বন্ধুজন কাইয়ুম চৌধুরী, আসাদ চৌধুরী, হাশেম খান, রফিক আজাদের সহায়তায় কপোতাক্ষ থেকে আল মাহমুদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লোক লোকান্তরে’ প্রকাশিত হয়।

আল মাহমুদ তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘সোনালি কাবিন’ এর ১ নম্বর সনেটটি চট্টগ্রামে বসে লেখেন। ১৯৬৮ সালে ‘লোক লোকান্তর’ ও ‘কালের কলস’ নামে দুটি কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৭১ সালে তিনি ভারত গমন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। যুদ্ধের পরে দৈনিক গণকণ্ঠ নামক পত্রিকায় প্রতিষ্ঠা-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। সম্পাদক থাকাকালীন এ সময় সরকারের বিরুদ্ধে লেখার কারণে এক বছরের জন্য কারাদণ্ড ভোগ করেন।

১৯৭২ সালে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের বিশ্বাসীদের মুখপত্র এবং সরকারবিরোধী একমাত্র রেডিক্যাল পত্রিকা ‘গণকণ্ঠ’ বের হলে তিনি এর সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গণকণ্ঠ সেই সময় ব্যাপক হৈ চৈ ফেলে দেয়।
তার লেখা বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘সোনালি কাবিন’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে। ১৯৭৫ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে শিল্পকলা একাডেমীর সহকারী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর তিনি পরিচালক হন। পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এ সময় তার গল্পগ্রন্থ ‘পানকৌড়ির রক্ত’ প্রকাশিত হয়।
১৯৮৪ সালে কলকাতা থেকে কবিতার জন্য কাফেলা সাহিত্য পুরস্কার এবং ছোটগল্পের জন্য বাংলাদেশে হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৮৬ সালে কবিতায় রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক পান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *