(মন বালকের কাছে খোলা চিঠি) পত্রকাব্য-৬

সাহিত্য ও সাংস্কৃতি

প্রিয় মন বালক,
অবশেষে সত্যি সত্যিই আজ আমি করোনা আক্রান্ত।তোমার সামান্য একটু সহানুভূতি পাওয়ার জন্য করোনার শুরু থেকে কতবার যে করোনা রোগীর অভিনয় করেছি।কতোবার নিজেকে সাজিয়েছি করোনা বালিকায় তার ইয়ত্তা নেই।তবুও কখনই তোমার এতটুকু মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারিনি।অথচ…
না থাক।কিছু সত্য কখনই প্রকাশ করতে হয় না।তাই আজও তোমার কাছে আমার মনের অব্যক্ত আহাজারি প্রকাশ করতে পারলাম না।জানি না এ যাত্রায় বাঁচবো কিনা।যদি মরে যাই তবে সময়ে অসময়ে তোমাকে ত্যক্ত করার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও।
কতই তো জ্বালিয়েছি তোমায়-
মেসেজ ব্লক,ইগনোর অপশন কোনো কিছুইতো বাকি রাখোনি-
বাধ্য হয়েই আশ্রয় নিলাম পাব্লিক পেইজে।
সেখানেও এডমিন সাজালে রব মুন্সিকে। তোমার হয়ে কঠিন জবাব দিলো সে।
আমি লজ্জায় মাটির সাথে মিশে গেলাম।
অতঃপর চিরতরেই তোমার মোহ কাটালাম।
মাঝে মাঝে তোমার কণ্ঠ শুনবো বলে বেহায়ার মতো অস্থির হয়ে উঠি।
তোমার খবর জানবো বলে নামে বেনামে একাধিক ফেক আইডি দিয়ে তোমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি।আমার এক দু লাইন মেসেজ পড়েই তুমি আমাকে ঠিক চিনে ফেলতে আর অমনি সাথে সাথে আমায় ব্লক মারতে। আমি কেঁদে বুক ভাসাতাম।
একতরফা ভালোবাসাগুলি বুঝি এমনই হয়।
যেখানে প্রাপ্তির চেয়ে অপমানের আশঙ্কাই থাকে বেশি।সব জেনে বুঝেই আমি তোমাকে ভালোবেসেছি।তাই তোমার কোনো অপমানই আর আমাকে কাঁদায় না।বরং অপমানে আজ আমি দাঁত কেলিয়ে হাসি।যেন ওটাই আমার একমাত্র প্রাপ্তি।
দিন যতই পার হয় করোনা ততই আমার টুঁটি চেপে ধরে।তোমার কণ্ঠ শোনার জন্য আমি উতলা হয়ে উঠি।
তোমার সাথে কথা বলবো বলেই আজ একটা নতুন সিম কিনেছি।কথা বলার চেয়ে শোনার আগ্রহ অনেক বেশি।
ফোন দিলাম অথচ কোনো কথা বললাম না।
আমি আসলে কথা বলার জন্য ফোন করিনি।আমি শুধু তোমার কণ্ঠ শুনতে চেয়েছিলাম।
এরপর কৌতূহলবশত তুমি বেশ কয়েকবার
ফোন দিলে আমায়।
ভয়ে ভয়ে আমি তোমার ফোন রিসিভ করলাম।কিন্তু কোনো কথা বললাম না।
কথা না বলার যথেষ্ট কারণও ছিলো।
আমার একটা শব্দ শুনেই তুমি ঠিকঠাক বুঝে নিবে কে আমি?আর সাথে সাথেই আবারও ব্লক মেরে দিবে।
আচ্ছা,এইযে তুমি রেগে গিয়ে আমাকে বার বার ব্লক করো তোমার কি একটুও ক্লান্তি আসে না?
ফোন করে কথা না বলার অপরাধে তুমি আমার নম্বরটি বেশ কজন উঠতি মাস্তানের হাতে তুলে দিলে।
তারা ফোনের পর ফোন করে আমার কানে হুমকির ঝড় তোলে। আমি ভয়ে কাঁপতে থাকি।
তুমুল আকারে বেড়ে যায় আমার হার্ট বিট।অতঃপর ভয়ে আতঙ্কে আমি হার্টঅ্যাটাক করলাম।
আমার হার্টঅ্যাটাকে করোনারা নাগিন ডান্স করতে লাগলো।আর আমি আতঙ্কে, অপমানে আজন্মের মতো বিদায় নিলাম তোমার পৃথিবী থেকে।
একটুও কি অনুশোচনায় দগ্ধ হবে না তুমি?একটুও কষ্ট হবে না তোমার?
তুমিতো রোবট মানব!
তোমার আবার অনুশোচনা কি?
যদি কোনোদিন অনুশোচনায় দগ্ধ হও তবে
শহিদ বুদ্ধিজীবী গোরস্তানে আমার কবরের উপর আমার নাম করে জোড়া কদম দিও।
সেটাকেই আমি আমার শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি বলে ধরে নিব।
আমাকে ক্ষমা করে দিও।
আর হয়তো কখনই কেউ তোমাকে এইভাবে জ্বালাবে না।ভালো থেকো মন বালক।
ইতি
তোমার অবহেলায় জর্জরিত
করোনা বালিকা

লেখক: খারুননেসা রিমি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *