ঢাকা: রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রতারক শাহেদের প্রতারণার বিষয়ে এবার মুখ খুললেন তার স্ত্রী সাদিয়া। বলেছেন, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও ঝামেলা হয়েছে শাহেদের। বার বার তাকে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু তিনি তার নিজের তরিকাতেই চলেছেন। সাদিয়া মানবজমিনকে বলেন, রিজেন্ট হাসপাতালে করোনার পরীক্ষার নিয়ে যা হয়েছে তা একেবারেই অনৈতিক। তার অপরাধ প্রমাণ হলে শাস্তি হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে অর্থ কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত একটি ঝামেলায় শাহেদ জড়িয়েছিলেন। কিছু সমস্যা আমার পরিবারের সঙ্গেও ওনার ছিল।
তিনি বলেন, শাহেদের সঙ্গে কিছু সমস্যা ছিল যে কারণে একটা সময় আমি বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। আমি সবসময় বাসায় থাকি। সেক্ষেত্রে স্বামী কি করছে সবসময় সেই খবর রাখা হয় না। ২০০৮ সালে হঠাৎ করে কিছু কথা কানে আসতে থাকে। তখন তাকে বারবার সাবধান করার চেষ্টা করেছি। ঠিক ওই সময় আমার পরিচিত একাধিক আত্মীয়ের সঙ্গে টাকা পয়সা নিয়ে ঝামেলা হয়।
তিনি বলেন, অফিসের বা ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো লোক বাসায় আসতো না। তার হাসপাতালের কিছু কর্মীর বিষয়ে আমার শুরু থেকেই আপত্তি ছিল। তাদেরকে আমার ততটা স্বচ্ছ মনে হতো না। তাদের বিষয়ে বারবার সাবধান করেছি। কিন্তু সে হাসপাতালের কর্মীদের বিষয়ে আমার কথা শোনেনি। তিনি বলেন, কিছু সত্য তো আছেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছু তথ্য প্রমাণ নিয়েই নেমেছে। সে যদি প্রকৃত দোষী হয় সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের নির্ধারিত শাস্তি সে পাক এটাই চাইবো। তিনি বলেন, আমার ১৪ বছর এবং ২ বছর বয়সী দুটো মেয়ে আছে। বড় মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ২০০৪ সালে ৩০শে ডিসেম্বর আমাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। আমার গ্রামের বাড়ি সিলেট। বিয়ের সময় জানতাম সে একজন ব্যবসায়ী। উত্তরায় তার অফিস ছিল।
রিজেন্ট হাসপাতালে করোনার ভুয়া রিপোর্ট প্রদান সম্পর্কে তিনি বলেন, এই কাজটি খুবই নিকৃষ্টতম হয়েছে। অন্যরা যেমন অবাক হয়েছে একইভাবে আমিও এটা শুনে অবাক হয়েছি। করোনাটা আমাদের মধ্যে এই পরিমাণ আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে যে আমি নিজেও আতঙ্কিত। আমার দুই মেয়েকে নিয়ে গত চার মাস ধরে বাসা থেকে বের হই না। তিনি বলেন, আমি জেনেছি হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হয়। আমি কখনো হাসপাতালে যাইনি। সেখান থেকে আমি ধারণা করতে পারিনি এ ধরনের কোনো অপকর্ম ওখানে হতে পারে।
শাহেদের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ, দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. শাহেদ ওরফে শাহেদ করিমের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি রিজেন্ট হাসপাতালের দুইটি শাখা সিলগালা করে দেয়ার খবরের উপর ভিত্তি করে তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে শাহেদের দেশ ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে ইমিগ্রেশন বিভাগকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, শাহেদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিনি যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে। সূত্র জানায়, রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামি শাহেদ। এ অবস্থায় তার দেশত্যাগের আশঙ্কা থেকে যায়। তাই তাকে দেশত্যাগ করতে না দিতে ইমিগ্রেশন পুলিশকে অবগত করা হয়েছে।
শাহেদের ব্যাংক হিসাব জব্দের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্য নামে ব্যবহৃত ব্যাংকের সকল অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধকরণের নির্দেশ দেয়া হলো। আগামী ৩০ দিন অবরুদ্ধ থাকবে এসব ব্যাংক হিসাব।
এর আগে গত সোমবার (৬ই জুলাই) রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র্যাব’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। এরপর মঙ্গলবার (৭ই জুলাই) রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় দণ্ডবিধি ৪০৬/৪১৭/৪৬৫/৪৬৮/৪৭১/২৬৯ ধারায় প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. শাহেদকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়।