রাতুল মন্ডল নিজস্ব প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামে চার সন্তান নিয়ে বসবাস ইমান আলী ও জোসনা দম্পত্তির। ছয় সদস্যের পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হতো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ইমান আলীর। দারিদ্রতায় সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারায় তিন ছেলে জসিম, আসিম উদ্দিন ও নাজিম উদ্দিনকে দিনমজুরের কাজে লাগান বাবা ইমান আলী। আর ১৪বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে আসমা আক্তারকে বছর খানেক আগে স্থানীয় ফারসিং নীট কম্পোজিট লিমিটেড নামের একটি কারখানার মালিকের উত্তরার বাসায়। বছর খানেক কাজ করার জন্য গায়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন নিয়ে অবশেষে সোমবার নিজ বাড়ীতে ফেরে আসমা আক্তার।
১৪ বছর বয়সী কিশোরী আসমা আক্তার। এই বয়সে দূরন্ত কিশোরীপনায় যার সময় অতিবাহিত করার কথা ছিল দারিদ্রতার অভিশাপে সেই সুযোগটি হারিয়েছে সে। বছর জুড়েই তার ভাগ্যাকাশে ছিল কালো মেঘের আনাগোনা। শরীরে অসংখ্য পোড়া ঘাঁয়ের ক্ষতচিহ্ন, দীর্ঘ এক বৎসর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কবলে পড়ে কৈশোরীপনা যেন আর অবশিষ্ট নেই। অমানুষিক নির্যাতনের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েও তার মুখে গত দু’দিনেও ফুঁটেনি কোন হাঁসি। বিভৎস্য সেই নির্যাতনের কথা মনে হলেই কখনও ঢুঁকরে কেঁদে উঠছেন আবার কখনও সৃষ্টিকর্তার কাছে অভিসম্পাত করছেন এই কিশোরী। তাঁর কাছে মানুষের সংজ্ঞাটাও এখন আর অবশিষ্ট যে নেই। কেননা এই কিশোরী যে জীবিত থেকেও অনেকটা মৃত অবস্থায়।
কিশোরীর পরিবারের ভাষ্য, উত্তরার ৩নং সেক্টরের ৭/বি রোডের ৩১ নং বাসায় কাজ করতেন আসমা। বাড়ীর মালিক ফারসিন গার্মেন্টস কারখানার মালিক আবু তাহের। শিল্প কারখানার অবস্থান কিশোরীদের বাড়ীর পাশাপাশি হওয়ায় এই এলাকা থেকে আসমাকে প্রতিমাসে ৮হাজার টাকা বেতনের প্রতিশ্রæতি দিয়ে কাজে নেন তাহের-শাহজাদী দম্পতি, কিন্তু প্রতি মাসে ৫হাজার টাকা পরিশোধ করতো। কথা দিয়েছিলেন আসমা তাদের আপন মেয়ের মতো করে রাখবেন। সে কথা তাঁরা রাখেননি উপরোন্ত শারীরিক ও মানসিক আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করেছেন আসমাকে।
নির্যাতনের শিকার আসমার ভাষ্য, প্রথম থেকেই তাকে সারা দিন-রাত সমান করে কাজ করতে হতো। ঘুমানোর সময় পর্যন্ত দিত না। কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়লেই মিলতো নির্যাতন। কখনও দিনে ১ ঘন্টার সময় পর্যন্ত ঘুমানোর জন্য দিত না। বাড়ীর মালিক আবু তাহের মাঝে মধ্যেই কিল ঘুষি দিয়ে নির্যাতন করতেন এই কিশোরীকে। কয়েকবার সিগারেটের আগুনের ছ্যাঁকাও দিয়েছেন। মালিকের স্ত্রী শাহজাদীও শরীরে দিতেন গরম তেলের ছিটা। তারপর দগ্ধ ঘাঁয়ের উপর মরিচের গুড়া ছিটিয়ে দিতেন। এমন ভাবে দীর্ঘ চার মাস ধরে এই কিশোরীর উপর চলে নির্যাতন। মাঝে মধ্যে নির্যাতন এমন ভাবে চলতো যে, তার চেতনা চলে যেত। তাঁর উপর এমন নির্যাতনের কারণে সে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাড়ীর মালিক আবু তাহের গাড়ীর চালকের মাধ্যমে তাঁর হাতে ৫শত টাকা দিয়ে গত ২৯জুন (সোমবার) বাড়ীতে পৌঁছে দেয়।
কিশোরীর মা জোসনার ভাষ্য, দারিদ্রতার কারণে দু’মুঠো ভাত দিতে পারতাম না, লেখাপড়াও করাতে পারছিলাম না। এমন অবস্থায় ফারসিং নীট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার মহাব্যবস্থাপক বাবুল, ব্যবস্থাপক ইব্রাহিম, ব্যবস্থাপক আনোয়ার ও নিরাপত্তা কর্মী হেলালের সমন্বয়ে ওই কারখানার মালিক আবু তাহেরের বাসায় গৃহকর্মীর কাজে দিয়েছিলাম, আশা ছিল অন্তত পক্ষে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকবে। কিন্তু এখন আমার মেয়েকেই যে নির্যাতন করে প্রায় শেষ করে দিয়েছে। গত এক বৎসরে আসমাকে একটি বারের জন্যও দেখতে দেয়নি তাঁরা। এমনকি মুঠোফোনেও বাড়ীতে যোগাযোগ করতে দেয়নি। এমন অবস্থায় তার মেয়ের উপর নির্যাতনকারীদের শাস্তি দাবী করেন তিনি।
তিনি আরো জানান, তাঁর মেয়ে বাড়ীতে আসার পর গৃহকর্তী শাহজাদী বেশি বাড়াবাড়ি না করার জন্য মুঠোফোনে কয়েকবার হুমকী দিয়েছেন। নাহলে ঢাকা থেকে মাস্তান পাঠিয়ে আসমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। আমরা এখন ভয়ে আছি, তাই মেয়েকে অন্য এক স্বজনের বাড়ীতে লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামান খান জানান, কিশোরীকে সাথে নিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজন থানায় অভিযোগ করতে এসেছিল। তবে ঘটনাস্থল রাজধানীর উত্তরায়, তাই ওই পরিবারকে উত্তরার থানায় অভিযোগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গৃহকর্তা আবু তাহের ও শাহজাদি আমিরি’র মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। কারখানার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বক্তব্য জানতে ফারসিং নীট কম্পোজিট লিমিটেডের প্রধান ফটকে গেলেও কর্তৃপক্ষ দেখা দে