গাজীপুর: শিশুকালেই মামার হাত ধরে পথচলা শুরু। মূলত মামার সন্তানের মত স্নেহ আদর ও ভালোবাসায় বর্তমান অবস্থানে এসেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম। অনেকে বলেন, সন্তানের চেয়েও বেশী আদরে মানুষ হয়েছেন ভাগিনা। শিক্ষা জীবন থেকেই রাজনীতির শুরু। আজ দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশনের মেয়র। সব কিছুই সম্ভব হয়েছে আল্লাহর রহমত আর মামার উছিলায়। সেই মামাই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মামাকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম। মামার কফিনে পড়ে ও জানাজার আগে পরে কবরের পাড়ে ছোট শিশুরমত হাউ মাউ করে কাঁদলেন গাসিকের মেয়র। দোয়া চাইলেন প্রিয় মামার জন্য। মেয়রের হাউ মাউ কান্না দেখে বাতাস ভারী হয়ে যায়। এসময় সকলের চোখে মুখে বিষাদের ছাপ দেখা যায়। অনেকের চোখ থেকে পানি পড়েছে অঝোর ধারায়। সে এক অন্য রকম বিদায়। সফল ও সার্থক মামাকে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে শেষ বিদায় দিলেন মামার স্বপ্নের সেই সফল ভাগিনা। কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে অঝোর ধারায় কান্নায় বার বার ভেঙ্গে পড়া গাসিক মেয়র জাহাঙ্গীর ওই দিন যেন শৈশবে চলে গিয়েছিলেন ঠিক মামার হাত ধরে শিশু জাহাঙ্গীর হিসেবে।
মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মামা ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আলহাজ্ব মরহুম শফিকুল আলম গত মঙ্গলবার মৃত্যুবরণ করেন। বুধবার তার কবরের পাশে কিছু সময় কাটান মেয়র জাহাঙ্গীর। এ সময় তিনি তার মরহুম মামার রূহের মাগফিরাত কামনা করে দীর্ঘক্ষণ দোয়া করেন। দোয়ার একপর্যায়ে আবেগাপ্লুত মেয়র কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা মেয়রকে সান্ত্বনা দেন। পরে মেয়র শফিকুলের বাসায় যান। জাহাঙ্গীরকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শফিকুলের পরিবারের সদস্যরাও। মেয়র তাদেরকে দীর্ঘক্ষণ সময় দিয়ে শোক কাটিয়ে ওঠার সান্ত্বনা দেন।
আবেগঘন মেয়র বলেন, ‘মামার জন্যই আমি আজ এতদূর আসতে পেরেছি। সব বিষয়ে মামা পরামর্শ দিতেন। আজ আমি সত্যি একা হয়ে গেলাম। তার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আল্লাহ্ যেন জীবদ্দশার সমস্ত গুণাহ মাফ করে দেন।’
মামাকে হারিয়ে মুষড়ে পড়েছেন মেয়র। কারণ, মামা ছিলেন একাধারে মেয়রের রাজনীতির শিক্ষাগুরু এবং মাথার ছায়া। ছোটবেলা থেকেই মামার আদর স্নেহে বড় হওয়া জাহাঙ্গীর আজকে মেয়র পর্যন্ত হওয়ার পেছনেও শফিকুলের অবদান বিরল।
যার হাত ধরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি, সেই শফিকুল আলমকে অশ্রুসিক্ত শেষ বিদায় জানালেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম। প্রিয় মামা শুধু রাজনীতির শিক্ষাগুরু ছিলেন না, বাবা-মায়ের মতো পরম মমতায় মাথার ছায়া হয়ে ছিলেন সেই ছোটবেলা থেকেই।
শফিকুল আলম ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য। আজ মঙ্গলবার বিকেলে তার নিজ এলাকা কানাইয়ায় জানাজার নামাজে তাকে অশ্রুসিক্ত বিদায় জানিয়েছেন গাজীপুরবাসী।
এতে অংশগ্রহন করেন স্থানীয় জনতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শফিকুলের আত্নীয়-স্বজনসহ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সকল কর্মকর্তা, বিভিন্ন মসজিদের আলেম-ওলামা ও ইমামগণ।
জানাজা পূর্ববর্তী সময়ে মেয়র বলেন, উনি আমার রাজনৈতিক শিক্ষক ছিলেন। আমাকে পড়াশোনা শিখিয়েছেন। আমি যে আজ মেয়র এটা শুধু আমার মামার জন্যই। উনি আমার মা-বাবার মতোই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি আমাকে লালন-পালন করে বড় করেছেন।
নিজের মামার জানাজার পূর্ব মুহূর্তের বক্তব্যে সিটি কর্পোরেশনের নাগরিকদের প্রতি মেয়র আবারও অনুরোধ জানালেন, এই পরিস্থিতির সময় সবাই নিয়মকানুন মেনে চলাচল করুন। এই কঠিন মুহূর্তেও যেন আমরা সবাই ধৈর্য ধরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকতে পারি আল্লাহ যেন আমাদের সেই তৌফিক দান করেন।
মামার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে মেয়র জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আল্লাহ যেন উনার জীবদ্দশায় যত পাপ আছে তা মাফ করে দেন এবং কবরের আজাব যেন আল্লাহ মাফ করে দেবে স্থান সেভ করেন।’
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে জানাজা ছোট পরিসরে করা হয়েছে বলেও মেয়র জানান।
মৃত্যুকালে শফিকুলের বয়স ছিল ৬৩ বছর। তিনি ২ ছেলে ১ মেয়ে, স্ত্রীসহ অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। হঠাৎ পিতৃবিয়োগে শফিকুল আলমের বড় ছেলে মামুন ভেঙে পড়েছেন সবচেয়ে বেশি। মামুন বলেন, বাবা ছিলেন আমাদের জন্য বটবৃক্ষ। যেকোন বিষয় বাবার থেকে পরামর্শ নিয়ে কাজ করতাম। ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি অভিভাবককে হারাবো। আপনারা সবাই আমার পিতার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ্ যেন তাঁকে জান্নাত নসিব করেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯ টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান শফিকুল আলম। তাকে নিজ এলাকা কানাইয়ায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুতে মেয়র জাহাঙ্গীর শোক প্রকাশ করে গাজীপুরবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।