বিস্ফোরক তথ্য হাজির করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা জন বল্টন। তিনি অভিযোগ করেছেন, এ বছর নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চীনের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছেন ট্রাম্প। বিনিময়ে তিনি চীনের ‘ডিকটেটরদের’ সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করেছেন। ‘দ্য রুম হোয়ার ইট হ্যাপেন্ড: এ হোয়াইট হাউজ মেমোইর’ শীর্ষক বইয়ে এসব লিখেছেন জন বল্টন। সেখান থেকে অংশবিশেষ প্রকাশিত হয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টে।
দীর্ঘদিনের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক ঝানু ব্যক্তিত্ব জন বল্টন। কিন্তু মতভেদের কারণে গত সেপ্টেম্বরে তাকে বরখাস্ত করেন ট্রাম্প। বল্টন তার বইয়ে লিখেছেন, নির্বাচনে জিতিয়ে দেয়ায় সহায়তার বিনিময়ে ‘ডিকটেটরদের’ বিরুদ্ধে ফৌজদারি অনুসন্ধান স্থগিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
এরই মধ্যে বইটির প্রকাশনা বন্ধ করতে মঙ্গলবার মামলা করেছে মার্কিন সরকার।
এতে অভিযোগ করা হয়েছে, বইটিতে অনেক ক্লাসিফায়েড বা অফিসিয়াল সিক্রেট তথ্য রয়েছে। এসব প্রকাশ হওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে শুক্রবার। সব মিলে এটাকে দেখা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি তার শীর্ষ উপদেষ্টাদের একজনের তরফ থেকে একটি বড় আঘাত হিসেবে। গত বছর ডেমোক্রেটিক দল নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করে তার চেয়েও বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে বল্টনের এই অভিযোগকে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারির শুরুতে সব অভিযোগ থেকে বেকসুর দায়মুক্তি দিয়েছে রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন সিনেট। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ডেমোক্রেট দল থেকে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর তথ্য সরবরাহের জন্য চাপ দিয়েছিলেন ইউক্রেনে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিকে। ওই দেশটিকে দেয়া সামরিক সহায়তার বিপুলি পরিমাণ অর্থ স্থগিত করেছিলেন তিনি। জন বল্টন লিখেছেন, যদি ২০১৯ সালে ইউক্রেনে সামরিক সহযোগিতা বিষয়ে ডেমোক্রেটিকরা অতোটা আচ্ছন্ন না হতে, তারা যদি পুরো পররাষ্ট্রনীতিতে ট্রাম্পের ধারাবাহিকতা অনুসন্ধানে আরো সময় নিতে, তাহলে অভিশংসনের ফল ভিন্ন হতে পারতো।
জন বল্টনের এই তথ্য এখন প্রকাশ করা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেট দলের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য এডাম শিফ। রিপাবলিকান ট্রাম্প শিবিরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে তিনিই নেতৃত্ব দেন। এডাম শিফ বলেছেন, জন বল্টনের বিরুদ্ধেই মামলা করা উচিত। তিনি এ তথ্য জেনেও তা আগে প্রকাশ করেননি, জমা করে রেখেছেন বইয়ের জন্য। জন বল্টন একজন লেখক হতে পারেন। কিন্তু একজন দেশপ্রেমিক নন।
আগামী ৩রা নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে ট্রাম্পের সমালোচকদের কাছে নতুন রসদ হয়ে উঠবে জন বল্টনের অভিযোগ। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার আলোচনার বিষয় তো রয়েছেই। কি কথোপকথন হয়েছিল শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সে বিষয়ে লিখেছেন, ‘তারপর আশ্চর্যজনকভাবে কথোপকথনকে ঘুরিয়ে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে নিয়ে গেলেন ট্রাম্প। তিনি চীনকে অর্থনৈতিক সক্ষমতায় প্রলুব্ধ করলেন এবং নির্বাচনে তার বিজয় নিশ্চিত করতে শি জিনপিংয়ের কাছে সাহায্য আহ্বান করলেন’। ট্রাম্প প্রশাসনের ভিতর থেকে এ পর্যন্ত যত ক্ষতিকর তথ্য বেরিয়েছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে, তার মধ্যে জন বল্টনের এই তথ্যকে প্রশাসনের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়েছে। এর মাত্র কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম মাত্তিক কড়া সমালোচনা করেছেন ট্রাম্পের। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বিভক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প।
এমন অবস্থায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন জো বাইডেন। তিনি বিবৃতিতে বলেছেন, এসব বর্ণনা যদি সত্য হয়, তাহলে তা শুধু নৈতিকতা পরিপন্থিই নয়, একই সঙ্গে মার্কিন জনগণের প্রতি পবিত্র যে দায়িত্বের শপথ নিয়েছেন তা লঙ্ঘন করেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিষয়ক প্রতিনিধি রবার্ট লাইটিজার সিনেটে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, জন বল্টনের দেয়া তথ্য চরমভাবে অসত্য। তিনি সাক্ষ্যে বলেছেন, (ট্রাম্প-শি’র) ওই মিটিংয়ে আমিও সেখানে ছিলাম। সেখানে তো আমি এমন কিছু স্মরণ করতে পারি না। এমন কথা কখনোই হয় নি, আমি নিশ্চিত।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র কিলি ম্যাকইনানি এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি পররাষ্ট্রনীতিতে একজন ভ্রান্ত মানুষ বলে আখ্যায়িত করেছেন জন বল্টনকে।