ঢাকা: ঈদযাত্রায় করোনার ঝুঁকি অনেক বাড়বে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বলেছেন, মানুষ গ্রামে গিয়ে করোনার সংক্রমণ বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যে গণপরিবহন বন্ধ। অথচ ব্যক্তিগত বাহনে গ্রামে যাওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। তবে মানুষকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে।
ঈদযাত্রায় করোনায় কি রকম ঝুঁকি দেখছেন জানতে চাইলে দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ঈদে করোনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। আর এটা বুঝা যাবে ১৪ দিন পর। তিনি বলেন, ফেরিঘাট থেকে মানুষকে বা পরিবারকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
আবার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাওয়ার শিথিলতা দেখাচ্ছেন। এতে করে মানুষ প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে দলে দলে লোক বাড়ি যাবেন। আর গ্রামে গ্রামে করোনা ছড়াবেন। তা নিয়ে আবার ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরবেন। প্রশাসন আর কত নাটক করবে প্রশ্ন করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রশাসনের অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে। সমন্বয়ের অভাব দেখছেন তিনি। বিবেক-চিন্তায় ঘাটতি আছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সমস্যা রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এক করোনার ভাইরাসে স্বাস্থ্যের ৫০ বছরের অর্জন ফেল করেছে। তিনি বলেন, লকডাইন দিয়েছেন। আবার পাড়া মহল্লার দোকান-পাট খুলে দিয়েছেন। ফলে লকডাউনে কোন লাভ হলোনা।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মোস্তাক হোসেন এ ব্যাপারে মানবজমিনকে বলেন, মানুষ ঈদে গ্রামে যাওয়ার ফলে ঝুঁকি তো বাড়বেই। ব্যক্তিগত গাড়িতে ঝুঁকি কম থাকলেও যখন ফেরিতে উঠবে তখন ঝুঁকিটা বেড়ে যাবে। ফেরিতে দূরত্ব বজায় রাখা যায় না। এটাই উদ্বেগের বিষয়। চাপে পড়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে গ্রামে যেতে দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন। মানুষ যদি গ্রামে গিয়ে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন মানেন, তাহলে ভাল কথা। কিন্তু মেলামেশা করলে করোনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে বলে এ বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন।
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গৃহীত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পর্যালোচনা ও সমন্বয়ে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ। ঈদযাত্রায় করোনর ঝুঁকি প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ মানবজমিনকে বলেন, এই ভাইরাস একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়। তাই ঈদযাত্রায় মানুষ দলে দলে গ্রামে গেলে ঝুঁকি বাড়বে। মানুষকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। যারা মানছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষকে বুঝতে হবে। এটি সংক্রমণ রোগ। আগের মতো কাধে হাত দিয়ে চলা যাবে না। নিজের বিবেক দিয়ে বুঝতে হবে। সরকার প্রচার করছে। মিডিয়া মানুষকে সচেতন করছে। আমাদেরকে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি মন্তব্য করে বলেন, এই ভাইরাস দ্রুতই যাবে বলে মনে হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা আগেই বলছিলেন, চলতি মাসেই করোনার রোগী ৫০ হাজার ছাড়াতে পারে। তখন পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশে মহামারির প্রবণতা বিশ্লেষণে সরকার গঠিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মহামারি প্রবণতা বিশ্লেষণ করে আমাদের দল পূর্বাভাস দিয়েছে যে, চলতি মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহটি কভিড-১৯ সংক্রমণের চরম সময়কাল হতে পারে। গাণিতিক পদ্ধতি এবং মহামারিবিদ্যার সূত্রের ভিত্তিতে তাদের বিশ্লেষণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, জুনের শেষের দিকে (কভিড-১৯ সংক্রমণের হার) দ্রুত কমতে থাকবে বলে আশা করা যেতে পারে। অধ্যাপক হোসেন বলেন, বাংলাদেশকে অবশ্যই তিনটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে-মানুষকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে এবং শারীরিক দূরত্ব কঠোরভাবে বজায় রাখতে হবে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ৮ই মার্চ থেকে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ২০৫ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬ হাজার ১৯০ জন।