আমীন মোহাম্মদ
সৌদআরব করেসপন্ডেন্ট
রিয়াদঃ সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মহঃ শহীদুল ইসলামের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিয়েছে সৌদি আরব প্রবাসী সাংবাদিক ফোরামের (প্রসাফ) নেতৃবৃন্দ।
শনিবার দুপুরে রিয়াদের বাংলাদেশ হাউজে (রাষ্ট্রদূতের সরকারী বাসভবন) এ মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসাফ সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বশিরের নেতৃত্বে প্রসাফের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আল-আমীন, দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়, প্রচার সম্পাদক সাইফুল ইসলাম অপুর্ব, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল হালিম নিহন, আরব নিউজের ফটো সাংবাদিক ইকবাল হোসাইন, মহিউদ্দিন চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ লিটন মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।
খাবার টেবিলে খোলামেলা আলোচনা হয় সৌদি আরবের বাংলাদেশিদের অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের নানান দিক নিয়ে। নতুন রাষ্ট্রদূত গোলাম মশীহ ভালো মানুষ তাকে সহযোগিতা করার জন্য সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান শহীদুল ইসলাম।
একজন সাংবাদিকতার ছাত্র হিসাবে শহীদুল ইসলামের কাছ থেকে সৌদি আরব প্রবাসী সাংবাদিক ফোরামের প্রাপ্তি তুলে ধরে ফোরামের সভাপতি আব্দুল বশির বলেন, আপনি (শহীদুল ইসলাম) শুধু সাংবাদিকদের নয় মন জয় করেছেন সৌদি আরব প্রবাসী প্রতিটি বাংলাদেশির। নতুন কর্মস্থল মালয়েশিয়াতে গিয়েও তিনি সফলতার স্বাক্ষর রাখবেন বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।
এসময় বাংলাদেশ হাউজে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে ২০১০সালের ২৬ডিসেম্বর মহঃ শহীদুল ইসলাম সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত হিসাবে যোগদান করেন। ২০১৫সালের জানুয়ারী তার স্থলে নিয়োগ দেয়া হয় বিরুধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের রাজনৈতিক উপদেষ্টা গোলাম মশীহকে। শহীদুল ইসলামকে নতুন করে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে শহীদুল ইসলামের সৌদি আরব ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
একজন প্রবাসীর দৃষ্টিতে রাষ্ট্রদূত মহঃ শহীদুল ইসলাম
মহঃ শহীদুল ইসলাম, একজন কুটনৈতিক ব্যুরোক্রেট, কিন্তু তিনি সারাক্ষণ সুযোগ খোজেন মানুষকে সহায়তা করার। ঢাকাতে সৌদি কূটনীতিক হত্যা হবার পর তিনি একজন রাষ্ট্রদূত যিনি নিহত সৌদির বাসায় তাদের আত্মীয়দের আসার আগেই সাত সকালে উপস্থিত হয়ে, “আমরা খুন করে ফেলেছি আপনাদের সন্তানকে, আমাকে শাস্তি দিন, আমি রিয়াদে বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত”,একথা বলেছিলেন। তখন নিহতের নিকটজন তাকে জড়িয়ে ধরে কেদেছিলেন। শোনা যায় এই হত্যাকান্ডের জন্যে থাইল্যান্ডের মত খরগ নামতো প্রবাসী বাংলাদেশীদের ওপর, কিন্তু তার ব্যক্তিগত দূতিয়ালিতে বাংলাদেশ বেচে যায়। সৌদী কূটনীতিকের মৃতদেহ বহন করা থেকে শুরু করে দাফন পর্যন্ত তাদের সাথে থেকে সন্মান আর ভালবাসার অনন্য উদাহরণ তৈরী করেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসাবে সর্বোচ্চবার পবিত্র কাবা শরীফ ধৌত করার রেকর্ডটাও নিজের করে নিয়েছেন মহঃ শহীদুল ইসলাম।
সৌদি আরবে সব দেশ এমনেস্টি পেয়েছিলো তাদের প্রবাসীদের জন্যে, কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের নাম ছিলোনা, বিপদে আছে দশ লক্ষ প্রবাসী সেসময় নির্লজ্জের মতো সৌদি মন্ত্রীর পেছনে লেগে থাকলেন রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম, মানা করে দেয়ার পরেও নাছোড় রাষ্ট্রদুতকে না বলা যায় কেমন করে? সৌদি কতৃপক্ষের সাথে সারারাত দূতিয়ালির পর ভোর রাতে বাংলাদেশের নাম সংযুক্ত হলো, লক্ষ লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশীর জীবন বদলে গেলো।
সেসময় ডিসিএম মোহাম্মদ আইয়ুব, ডক্টরর এমদাদ, মোশাররফ হোসেন, কন্সুলার খায়রুল আলমসহ রিয়াদের প্রবাসীরা মিলে প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা কাজ করে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশীর পাসপোর্ট আর কাগজপত্র ঠিক করলো তার তত্বাবধানে। পলাতক বাংলাদেশীদের পাসপোর্ট দিয়ে কয়েকটি রুম ভরে গেল, মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত। অপেক্ষারত হাজারো প্রবাসীর জন্যে খানাপিনার ব্যবস্থা করলো অবস্থাপন্ন প্রবাসীরা, তার ব্যক্তিগত অনুরোধে।
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, কমিউনিটির নেতা থেকে শুরু করে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পালাক্রমে কাজ করলো ডাটা এন্ট্রি ক্লার্ক হিসাবে সাথে ছিলো বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্ররা আর নতুন প্রজন্মের রিয়াদের তরুনেরা। মনে হচ্ছিলো আর একটা মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছি আমরা। বাংলাদেশীদের বাচাতে হবে, তাদের স্টাটাস ঠিক করতে হবে, তাহলে তারা সৌদি আরবে থাকতে পারবে। কয়েক লক্ষ থেকে গেল।
বাংলাদেশীরা নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়ে যাওয়ার পর বাঙ্গালী পাড়ায় যেয়ে হেটে হেটে সবাইকে নিরস্ত্র করেন, ঘরে বসে থাকলেও তার কোনো দোষ হতোনা। বাংলাদেশীদের দুর্নাম ছিলো, সবচেয়ে খারাপ আমরা, সব চেয়ে দুর্নীতি পরায়ন। আজ সৌদি আরবে আমরা আবার আমাদের হৃত সন্মান ফিরে পেয়েছি, সব গেস্ট কান্ট্রির মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ক্রাইম রেট সর্বনিম্নে এখন, তার টিমের গোপন কূটনীতিতে তা সম্ভব হয়েছে।
আদাজল খেয়ে লেগেছিলেন বাংলাদেশীদের জন্যে ভিসা উন্মুক্ত করতে। সৌদী একজন প্রিন্স, যিনি আবার উচুদরের সরকারী কর্মকর্তা তাকে উপাধী দিয়েছেন,”এখতাপুত” ডিপ্লোম্যাট। অর্থাৎ মাকরশা কূটনীতিক, তার মতে উনি মাকরশার মত এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেন যে তাকে না করা যায়না। সৌদি সরকার বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীকে আহবান করেছেন, এই সপ্তাহে দিপাক্ষিক মিটিং, সুসংবাদের আশা করছে প্রবাসীরা।
মহঃ শহীদুল ইসলাম সৌদি আরবে গত চারটি বছর ধরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের যে সেবা দিয়েছেন তা সবারই মনে থাকবে। একজন মুক্তিযোদ্ধা, কবি, সাংবাদিক, সিরাজগঞ্জের এই সাদাসিধা মানুষটিকে চাইলেও ভোলা যাবেনা।