মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি: মানিকছড়িতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির পাকা ধান কাটা এবং মাড়াই চলছে পুরোদমে। জমিতে ফলন ভালো হলেও কৃষকের মন ভালো নেই। বিগত বছর সরকার নির্ধারিত মূল্য না পাওয়ার ভয়ে এবারও মূল্য নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা। তবে কৃষি অফিস বলছে, কৃষকের অধিকার আদায়ে তারা ধান বেচা-কেনার বিষয়টি মনিটরিং করবেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার এক হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারী প্রান্তিক কৃষক বোরো ধান চাষ করেছে। ধান রোপনের শুরু থেকে কৃষকের পাশে পরামর্শ নিয়ে মাঠে ছিলেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। ফলে বোরোর ফলন হয়েছে বাম্পার। উপজেলায় নয় শ’ ৮০ হেক্টর জমিতে হেক্টর প্রতি গড়ে সাড়ে চার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পুরোদমে ধান কাটা চলছে। যেসব কৃষক অসহায় ও দরিদ্র তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ ও আওয়ামী লীগ। ফলে অনায়াসে কৃষকরা পাকা ধান ঘরে তুলছে প্রতিনিয়ত।
শুক্রবার সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সবচেয়ে বড় বিল তিনটহরী হাজী মোঃ ইকবাল হোসেন এর বিলের ৩২ হেক্টর জমিতে পাকা ধান কাটার হিড়িক পড়েছে। সেখানের বর্গা চাষীরা ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্র রিপার মেশিন ব্যবহার করছে। আর তৃণমূলে ক্ষুদ্র চাষীরা রাজনৈতিক স্বেচ্চাসেবীদের সহযোগিতায় ধান কেটে এখন মাড়াই করছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে পুরো উপজেলার ধান কাটা শেষ হবে বলে কৃষিবিদদের ধারণা।
বোরো ধানের বাম্পার ফলন বিষয়ে জানতে চাইলে হাজী মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি কৃষি সহায়ক। তাই সব কৃষকের উচিত কৃষি অফিসের সাথে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রেখে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনার সুযোগ কাজে লাগিয়ে চাষাবাদ করা। এতে কৃষক যেমন লাভবান হবে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্নতা অর্জন করবে।
চেঙ্গছড়ার কৃষক কংজরী মারমা বলেন, আমার জমিতে বোরো ধান পাকার খবর পেয়ে ছাত্রলীগ এগিয়ে এসে দলীয় নেতা-কর্মী নিয়ে ধান কেটে দিয়েছে। এতে আমি স্বস্তিবোধ করছি। তবে ধান বিক্রি করতে গিয়ে খাদ্য গুদামের নানা হয়রানীর বর্ণনায় কৃষক জানায়, গুদামে ধান নিয়ে গেলে ধানে চিটা থাকার অজুহাতে ফিরে আসতে হয়। পরে বাধ্য হয়ে বাজারের রাইছ মিলে কম দামেই আমরা ধান বিক্রি করি। গুদাম এবং বাজারে মণপ্রতি কমপক্ষে দুই শ’ টাকা কম-বেশি থাকে।
তবে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা শ্যামপ্রসাদ চাকমা কৃষকের ধান ক্রয়ে অনিয়ম ও ন্যায্যমূল্য থেকে কৃষকদের বঞ্চিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরাসরি কৃষকরা গুদামে আসলে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই। কেউ যদি ব্যবসায়ীর কাছে ধান বিক্রি করে তাহলে সরকারী মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেই। এবার আমরা বোরো ধান কেজি প্রতি ২৬ টাকা এবং মণপ্রতি এক হাজার ৪০ টাকায় ধান কিনবো। তবে গুদামে ধান আনতে অবশ্যই ভালো করে চিটা ফেলে, ধান শুকিয়ে আনতে হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল ইসলাম মজুমদার বলেন, এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের পরিশ্রম ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার ফল এটি। এবার উপজেলায় বোরো ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি সাড়ে চার টন। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিতও হয়েছে। গুদামে ধান বেচা-কেনায় আমরা কৃষকের হয়ে সহযোগিতা করবো। যাতে কোনো কৃষক অতীতের মত প্রতারিত না হয়।