ঢাকা: ফিলিস্তিনে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করবে নেদারল্যান্ডের দ্য হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। বিশ্ব সম্প্রদায় স্বীকৃত সর্বোচ্চ বিচার আদালতের এই পদক্ষেপ ইসরায়েল ও সংশ্লিষ্ট যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে গৃহীত প্রথম পদক্ষেপ বলেই বিবেচিত হবে।
ফিলিস্তিনে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের পূর্ণ তদন্তে আন্তর্জাতিক এ আদালতের কৌসুলিরা বের করার চেষ্টা করবেন এর সঙ্গে আসলে কারা জড়িত। আর সে হিসেবেই ইসরায়েল এমনকি ফিলিস্তিনেরও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করবেন তারা।
শুক্রবার (১৬ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তাদের এ পদক্ষেপের কথা জানায়।
আইসিসির বিবৃতিতে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে যে অনুসন্ধান করা হবে সেটা তদন্ত না হলেও তা তদন্তের পথকেই সুগম করবে। সেখানে (ফিলিস্তিন) রোম সংবিধি অনুযায়ী কোনো যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছিল কিনা এটাই আপাতত জানার চেষ্টা করবেন অপরাধ আদালতের কৌসুলিরা।
অবশ্য, বিশ্বের সর্বোচ্চ অপরাধ আদালতের এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েল বলেছে, এ ধরনের তদন্তের সিদ্ধান্ত ‘জঘন্য’।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবিদগোর লিবারম্যান বলেন, এই প্রাথমিক অনুসন্ধানের একমাত্র উদ্দেশ্য ‘সন্ত্রাসের হাত থেকে নিজেকে রক্ষায় ইসরায়েলের অধিকার নস্যাতের চেষ্টা’।
এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েল-বিরোধী রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত বলে অভিযোগ করে লিবারম্যান সাফ জানিয়ে দেন, তারা তদন্তে সহযোগিতার বিরুদ্ধেই সুপারিশ করবেন।
যদিও আন্তর্জাতিক আদালতের এই পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিন।
অঞ্চলটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আম্মার হিজাজি বলেন, এই অনুসন্ধানে সবরকমের সহযোগিতা করবে ফিলিস্তিন। এমনকি ‘যুদ্ধের’ সময় যদি ফিলিস্তিনি পক্ষেরও কেউ অপরাধ করে তা বের করতে সহযোগিতা করা হবে।
তিনি বলেন, (যুদ্ধের সময়) বেসামরিক নাগরিকরা যে লক্ষ্যবস্তু ছিল তার সবরকমের তথ্য-উপাত্ত আছে এখানে।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালকিও বলেন, সবকিছুই পরিকল্পনা মতো এগোচ্ছে। আমরা যেভাবে অনুরোধ করেছি…এখন কোনো রাষ্ট্র বা কেউ এই পদক্ষেপ রুখে দিতে পারবে না। প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর পূর্ণ তদন্ত শুরু হবে।
আবার অপরাধ আদালতের এই পদক্ষেপে ইসরায়েলের সঙ্গেই গলা মিলিয়েছে তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। আইসিসির পদক্ষেপকে ‘দুঃখজনক পরিহাস‘ বলে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জেফ রাথকে এক বিবৃতিতে বলেন, আইসিসি কৌসুলিদের আজকের এই পদক্ষেপের সঙ্গে আমরা পুরোপুরি দ্বিমত পোষণ করছি।
উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ৬ জানুয়ারি জাতিসংঘ ট্রিটি (চুক্তি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সংস্থাটির মহাসচিব বান কি-মুন জানিয়েছিলেন, আগামী ১ এপ্রিলেই ফিলিস্তিন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) যোগ দেবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফিলিস্তিনের এ পদক্ষেপ অঞ্চলটির বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ‘পাল্টা আঘাতের’ আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তিচুক্তির প্রধান বাধা মনে করে এ উদ্যোগের কড়া বিরোধিতা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত আইসিসিতে যোগ দিতে এ সংক্রান্ত রোম বিধানে স্বাক্ষর করেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এরপর গত শুক্রবার এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনাটি জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে পাঠানো হয়। ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বান কি-মুন অনুমতি দিলেই প্রস্তাবনাটি আইসিসিতে পাঠানো হবে।
দ্য হেগভিত্তিক আইসিসি জাতিসংঘভুক্ত কোনো সংস্থা না হলেও বিশ্বের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করে থাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকৃত বিচারক প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফিলিস্তিন আইসিসির সদস্য হয়ে গেলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের নালিশ করতে পারবে। আর সেটাকেই ‘শান্তিচুক্তি’র বড় হুমকি মানছে তেলআবিব ও ওয়াশিংটন