করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে চলমান সাধারণ ছুটি তথা লকডাউন খোলার ব্যাপারে ১৭ সদস্যের বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটি সরকারে পরামর্শ দেবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনা টেকনিক্যাল কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি জানান, সে সঙ্গে ঈদে শপিংমল, দোকানপাট বন্ধ রাখা হবে কিনা সে ব্যাপারেও কমিটি সরকারকে পরমার্শ দেবে। দেশের এই উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে সরকার।
সভায় টেকনিক্যাল কমিটির সভাপতি নন-কোভিড রোগীদের যাতে ভোগান্তি না হয় সে ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। নন-কোভিট হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, টেস্টিংয়ে বেশি সময় নষ্ট না করা, প্রথম টেস্টিংয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির নেগেটিভ ফলাফল এলে তাকে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করতে সময়ক্ষেপণ হয় এবং বেড অকুপেশন থাকে বলেও জানায় টেকনিক্যাল কমিটি।
সিনিয়র শিশু বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে সভাপতি ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাকে সদস্য সচিব করে গত ১৮ এপ্রিল ১৭ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, লকডাউন তুলে দেওয়া ও দোকানপাট খোলার বিষয়ে টেকনিক্যাল কমিটি যে সুচিন্তিত পরামর্শ দেবেন সেগুলো আমরা গ্রহণ করে যথাযথ জায়গায় পৌঁছে দেবো। তারপরে সরকারের যে নির্দেশনা থাকবে সে অনুযায়ী কাজ করবো। ঈদের ছুটিতে মানুষের যাওয়ার বিষয়েও মতামত দেবেন তারা।
রোগী সংখ্যা বাড়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, আমাদের সংক্রমণ কিছু বাড়ছে। গত ৮-১০ দিন ধরে দেখেছি চার থেকে পাঁচশ রোগী হত, কিন্তু এখন ছয়শও ছাড়িয়ে গেছে, আজ সাতশ ছাড়িয়েছে। যেহেতু স্বাভাবিকভাবে এখন কি না মার্কেট খোলা হয়েছে, গার্মেন্ট খোলা হয়েছে, দোকনপাটে আনাগোনা বাড়ছে।
কাজেই সংক্রমণ যে একটু বৃদ্ধি পাবে, এটা আমরা ধরেই নিতে পারি।
তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে যতটুকু সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। জীবন ও জীবিকা দুটিই সাথে সাথে যাবে। কাজেই সেভাবেই কাজগুলো হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, কমিটির অবজারভেশন ছিল যে কোনো রোগী যাতে হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে না দেওয়া হয়। এ বিষয়ে আমরা আরো বেশি করে গুরুত্ব সহকারে দেখবো।
এখন করোনা টেস্ট বেশি হচ্ছে, ল্যাব ৩৩টি হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ওনাদের পরামর্শ হলো রিপোর্ট আরো বাড়াতে হবে, টেস্টের ফল দেওয়ার সময় কমাতে হবে। আমরা এ বিষয়ে আরো জোরালো পদক্ষেপ নেবো।
টেকনিক্যাল কমিটি একটি সাব-কমিটি গঠনের কথা বলেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের লোকবল নিয়ে কমিটি হবে। এই কমিটি টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শ বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, ডাক্তারদের সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে, কী কারণে বেড়ে যাচ্ছে এ বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে পিপিই ব্যবহারের বিষয়ে বেশি নজর দিতে বলা হয়েছে। খোলা ও পরার সময়ে বেশি সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।
জাহিদ মালেক বলেন, হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর স্বল্পতা আছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, এ বিষয়েও যাতে বেশি করে নেওয়া যায়। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে এ কাজটি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।