টেকনাফের সেই পোকা পঙ্গপাল নয়, ঘাসফড়িং : পাতা খেলেও ফসল খায় না

Slider চট্টগ্রাম জাতীয় টপ নিউজ


টেকনাফ (কক্সবাজার) : কক্সবাজারের টেকনাফে দুই সপ্তাহ আগে দেখা দেয়া পঙ্গপাল সদৃশ পতঙ্গকে ঘাসফড়িং বলে চিহ্নিত করেছে পরিদর্শনে যাওয়া কীটতত্ত্ববিদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। শনিবার দুুুপুরে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লম্বরী এলাকায় ঢাকা থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের একটিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ ঢাকা খামারবাড়ি উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং এর উপ-পরিচালক মো. রেজাউল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (কীটতত্ত্ব বিভাগ) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. নির্মল কুমার দত্ত, পিএসও (কীটতত্ত্ব বিভাগ) ড. একেএম জিয়াউর রহমান, পিএসও (কীটতত্ত্ব বিভাগ) মো. শরফুদ্দিন ভূঁইয়া আইপিএম স্পেশালিস্ট আরিফুর রহমান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নাজমুল বারী ও উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. পান্না আলীসহ টেকনাফ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামসহ বিভিন্ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।

এসময় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নির্মল কুমার দত্ত বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কীটতত্ত্ববিদ সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা এখানে এসেছি। ইতিমধ্যে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে যে টেকনাফের যে অঞ্চলটাতে পঙ্গপালের উপস্থিতি পেয়েছে। আসলে আমরা সরেজমিনে দেখলাম যে, এটি বিধ্বংসী পোকা পঙ্গপাল নয়, যেটা আমরা ইতিমধ্যে জাতীয়ভাবে শনাক্ত করতে পেরেছি। এটি একটি ঘাস ফড়িং। ইংরেজিতে Aularches Miliaris। এটি বিভিন্ন বনজঙ্গলে এবং ক্ষেত্র বিশেষে কিছু ফসলের ক্ষতিকর পোকা। এটা তেমন ক্ষতি করে না। এটি পাতা খেলেও ফসল খায় না। এটা নিয়ে আতঙ্ক হওয়ার কোনো কারণ নেই।

তিনি আরও জানান, অতি আগে থেকে বাংলাদেশে রেকর্ডে ছিলো এই পোকা। এটা আমরা স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জেনেছি এটা আগে থেকেই পরিচিত একটি পোকা।স্থানীয় একজন কৃষক আমাদেরকে বলছেন এটা বর্মাচান্ডালী নামে পরিচিত? কেনও এটা বর্মাচান্ডালী নামে পরিচিত জানতে চাইলে সে জানান, এটা যেহেতু বার্মা থেকে এসেছে সেই জন্য এই নাম বলা হয়। আসলে আমাদেরও ধারণা এটি বার্মা থেকে আসতে পারে। এটা শুধু বাংলাদেশের রেকর্ডের না ভারত ,শ্রীলংকা, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি দেশে উপস্থিতি আছে। সব দেশে ক্ষতিকারক পোকা হিসেবে চিহ্নিত আছে। কিন্তু আবার এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটি একটি ঘাসফড়িং পোকা।

ঢাকা খামারবাড়ি উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং, উপ-পরিচালক আই পিএম মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে এই পোকাটা নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং দুশ্চিন্তা। আমাদের কৃষি ডিপারমেন্টসহ সারা বাংলাদেশে সবার মাঝে এটা নজরে আছে। ইতিমধ্যে আমরা কৃষি প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের আলোচনা থেকে বুঝলাম আসলে এটা পঙ্গপাল না এটা ঘাসফড়িং এর প্রজাতি।এটা একটা অপদান পোকা। যেহেতু এখানে এ পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজার এবং স্থানীয় কৃষি অফিস এটা ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করছেন। তারা সাইফার মেট্রিন জাতীয় কীটনাশক স্প্রে ব্যবহার করে এটি দমন করতে পেরেছে। বেশ কয়েকবার স্প্রে করার পর এখানে জীবন্ত একটি পোকাও দেখা যায়নি।

সর্বোপরি এখানে আশপাশেও এই পোকার আক্রমণের কোনকিছু দেখা যায় নাই। এখানে কয়েকটা ব্লগ আছে তাদের নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি ব্লগে যেন মনিটরিং করে দেখা হয়। কোন গাছে, সবজি বা ধানখেক্ষে এই পোকা পাওয়া যায় কিনা। যদি এই পোকা পাওয়া যায়, তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবে। যেহেতু দমন ব্যবস্থা খুব সহজ, সাইফার মেট্রিন জাতীয় বালাইনাশক স্প্রে করলে এটা দমন হয়ে যায়। চিন্তার কোন কারণ নেই, যদি বেশি পরিমাণ পোকা দেখা যায়। তখনই আমরা এই সাইফার মেট্রিন জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করলে দমন করা সম্ভব। এটা পঙ্গপাল নয়, এটা ঘাসফড়িং। এটা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। এরপরও পোকার নমুনা সংগ্রহ ঢাকা গবেষণাগারে নিয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা ও মনিটরিং রেখেছি যাতে এটা ব্যাপকভাবে অন্য কোথাও আর্বিভাব না হয়।

উল্লেখ্য, টেকনাফের লম্বরী গ্রামের একটি বাড়ির আম গাছসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের শাখা-প্রশাখায় সম্প্রতি দেখা মিলে এ ধরনের পোকার। পোকাগুলো গাছের পাতা সম্পূর্ণ রূপে খেয়ে ফেলছে। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এলে বেশ হৈচৈ পড়ে যায়। কৃষি বিভাগও নড়ে চড়ে বসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *