দীর্ঘ ১০ বছর পর নতুন এমপিওভুক্তি দেয়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সংশোধিত তালিকায় বাদ পড়েছে ১১১টি প্রতিষ্ঠান। যারা গত বছর এমপিও পাওয়া দুই হাজার ৭৩০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল। কিন্তু গত বুুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ থেকে চূড়ান্ত তালিকায় এসব প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ে। দীর্ঘদিন পর এমপিওর ঘোষণা এলেও শেষ পর্যন্ত হতাশায় পড়েছেন বাদ পড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আড়াই হাজার শিক্ষক কর্মচারী। তারা বলছেন, এমপিওভুক্তি বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছেন। অনেকের চাকরির বয়স শেষের পথে। এ অবস্থায় আমাদের এমপিও শেষ মুহূর্তে আটকে গেলে বাঁচার কোনো পথ থাকবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবেদনের শর্ত পূরণ না করেও এমপিওভুক্ত হওয়া, শিক্ষার্থী সংখ্যা কম, পাসের হার কম, অবকাঠামো না থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগে তারা বাদ পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ফের এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আপিল করতে পারবে। আগামী জুনের মধ্যে এমপিও শিক্ষকদের বেতন ছাড় করার চেষ্টা করছে মন্ত্রণালয়।
এমপিও শাখা সূত্রে জানা গেছে, নতুন এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজের এমপিও কোড দিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি), মাদরাসা ও কারিগরি অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ। অধিদফতরে পাঠানো তালিকায় ১১১টি প্রতিষ্ঠানের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। গত বছর এমপিওভুক্তির তালিকা ঘোষণার পর বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শর্ত পূরণ না করেও এমপিওভুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দুটি কমিটি গঠন করে। তারা দীর্ঘদিন যাচাই-বাছাই শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের নাম বাদ দেয়।
মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক জানান, এমপিওর কোড পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের এখন নিয়মানুযায়ী অনলাইনে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করতে হবে। ঈদের আগেই তাদের বেতন ছাড়ের চেষ্টা করব।
গতকাল বৃহস্পতিবার মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের সাত স্তরের মোট ৯৮২টি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে তালিকা করে এসব প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের কোড নম্বর দিয়ে বেতন-ভাতা প্রদানে সংশ্লিষ্ট অধিদফতরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগে বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক হাজার ৬৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত এমপিওভুক্ত করে তালিকা প্রকাশ করা হয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের গত বছরের জুলাই থেকে নির্ধারিত বেতন-ভাতা পরিশোধ করতেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। দেখা গেছে, মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে সাতটি স্তরের মোট ৯৮২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে এমপিওভুক্তি আওতায় আনা হয়েছে। তবে গত ২৩ অক্টোবর এসব ক্যাটাগরিতে এমপিওভুক্তি ঘোষণা করা হয়েছিল এক হাজার ৭৬টি। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বাদ গেছে ৯৪টি প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দাখিল স্তরে ৩৫৭টির মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে ৩২৪টি, আলিম স্তরে ১২৮টির মধ্যে ১১৯টি, ফাজিল স্তরে ৪২টির মধ্যে ৩৪টি, কামিল স্তরে ২৯টির মধ্যে ২২টি, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কৃষি ৬২টির মধ্যে ৬০টি, ভোকেশনাল ১৭৫টির মধ্যে ১৬০টি এবং এইচএসসি (বিএম) ২৮৩টির মধ্যে ২৬৩টি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত এমপিওভুক্ত হয়েছে। এদিকে বুধবার নিম্ন মাধ্যমিক থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত পাঁচ ক্যাটাগরিতে বাদ পড়ে ১৭টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ-অষ্টম) ৪৩৯টির মধ্যে চূড়ান্ত হয় ৪৩০টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ-দশম) ৯৯৪টির মধ্যে ৯৯১টি। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় একাদশ থেকে দ্বাদশ ৬৮টির মধ্যে সবকটি, কলেজ একাদশ থেকে দ্বাদশ ৯৩টির মধ্যে বাদ গেছে একটি। ডিগ্রি কলেজ (১৩ শ-১৫ শ) ৫৬টির মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে ৫২টি।
এ বিষয়ে এমপিওভুক্তি প্রতিষ্ঠানের তালিকা যাচাই কমিটি শাখার দায়িত্বরত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ পেয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। তারপরও তারা যদি আরও অধিক যাচাই-বাচাইয়ের জন্য আবেদন করে সেটি আমরা বিবেচনায় নেবো। তিনি বলেন, নীতিমালা ২০১৮ অনুযায়ী যেসব প্রতিষ্ঠানের তথ্যে গরমিল ছিল, সেগুলো বাদ গেছে। এখনও যদি অভিযোগ আসে যাচাই-বাছাই করা হবে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত এসব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এমপিও কোডসহ বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত ও যোগ্য শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি দেয়ার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
গত বছর মন্ত্রণালয়ে ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির আবেদন জমা পড়ে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে যাচাই-বাছাই করে দুই হাজার ৭৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে গত বছরের ২৩ অক্টোবর দুই হাজার ৭৩০ এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী ।