সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা প্রায় সবাই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে সংক্রমিত হয়ে এসেছেন। যার ফলে এই তিন জেলা ফেরত মানুষরা বর্তমানে টাঙ্গাইলবাসীর জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
আর এদিকে আক্রান্তের খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ প্রশাসন করোনা প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। কিন্তু অনেকে গোপনে রাতে ওইসব জায়গা থেকে ঢুকছেন টাঙ্গাইল জেলায়।
আজকে মঙ্গলবার (২৮ ই এপ্রিল) পর্যন্ত টাঙ্গাইল জেলায় ২২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আর এর মধ্যে টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলায় ছয়জন, ভূঞাপুরে পাঁচজন, নাগপুরে চারজন, মির্জাপুরে তিনজন, ঘাটাইলে একজন, মধুপুরে একজন, গোপালপুরে একজন ও দেলদুয়ারে একজন করোনা পজিটিভ। আর এই ২২ জনের মধ্যে ঘাটাইলের মহিউদ্দিন মারা গেছেন এবং মির্জাপুর ও ভূঞাপুরে একজন করে সুস্থ হয়েছেন।
টাঙ্গাইল জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছেন, “এই ২২ জনের মধ্যে ঢাকা ফেরতদের থেকে সংক্রমিত ১৭ জন, নারায়ণগঞ্জ ফেরত দুজন, গাজীপুর ফেরত দুজন ও রাজবাড়ি ফেরিঘাট থেকে একজন সংক্রমিত হয়েছেন।”
টাংগাইল জেলার প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি মির্জাপুরের অখিল সরকার নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চাকরি করতেন। এরপরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন।আর এছাড়াও ভূঞাপুরের হেলাল নারায়ণগঞ্জে একটি গার্মেন্টসে কাজ করতেন।
আর এদিকে করোনায় টাংগাইল জেলার প্রথম মারা যাওয়া ঘাটাইলের মহিউদ্দিন ঢাকার একটি হাসপাতালে কিডনি রোগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আক্রান্ত হয়েছিল। এরপরে মারা গেলে তাকে ঢাকাতেই দাফন করা হয়েছে। ভূঞাপুরের শফিকুল ইসলাম, খন্দকার সোহাগ , আবু সাইদ, জগলুর এবং নাগরপুরের লিটন, সেলিম রেজা, সাহিনুর ঢাকায় একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরিরত অবস্থায় সংক্রমিত হয়েছিলেন। আর এদের মধ্যে খন্দকার সোহাগ সুস্থ হয়েছেন, বাকিরা চিকিৎসাধীন।
এছাড়াও নাগরপুরের মোহাম্মদ আলী ঢাকার সদরঘাটে শ্রমিকের কাজ করেন। আর এদিকে সখিপুরের একই পরিবারের পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছেন। পরিবারের কর্তা রিপন ঢাকার কারওয়ান বাজারে সবজি বিক্রি করেন। এতে তিনি আক্রান্ত হয়ে বাড়ি এসে স্ত্রী রহিতন নেসা, ছেলে ইমরান, লিমু ও মিল্টনকে সংক্রমিত করেন। এছাড়াও সখিপুরের অ্যাম্বুলেন্স চালক সোনা মিয়া ঢাকায় রোগী আনা নেওয়া করে আক্রান্ত হয়েছেন। মধুপুরের নাছির উদ্দিন এবং গোপালপুরের জ্যোতি খাতুন গাজীপুরের গার্মেন্টেস শ্রমিক। আর তারা সেখান থেকে আক্রান্ত হয়েছেন।
এখন এই তিন জেলা থেকে কেউ এলাকায় ঢুকলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে যান। ফলে অনেকে সচেতনতার জন্যে তাদের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেন না। এতে ফেরতরা বাড়ি আসার পর কেউ হোম কোয়ারেন্টিনে থাকেন। কিন্তু আবার অনেকে স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করার চেষ্টা করেন।
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেছেন,”টাঙ্গাইল জেলাকে আগেই লকডাউন করা হয়েছে। আর যেহেতু আমাদের প্রায় আক্রান্তই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুর ফেরত ব্যক্তি। সেহেতু এই তিন জেলার লোক যেন টাঙ্গাইলে ঢুকতে না পারে সেজন্য চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।কিন্তু তারা গোপনে রাতে বিভিন্নভাবে চলে আসছেন। আর এদের ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছি। সেই সাথে জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে আরও সচেতন হতে হবে।”