মুঠোফোনের জন্যই হত্যা করা মা ও তিন সন্তানকে
রাতুল মন্ডল শ্রীপুর:গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বুধবার রাতে জৈনাবাজার আবদার এলাকায় মোবাইল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়ায় ঘরের ভেতরে মা ও তিন সন্তানকে গলাকেটে হত্যার কথা আদালতে স্বীকরোক্তি দিয়েছে গ্রেপ্তার কিশোর পারভেজ (১৭, আনুমানিক)।
সোমবার বিকেলে পারভেজ গাজীপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো: শরীফুল ইসলামের কাছে ১৬৪ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর জেলা আদালতের ইন্সপেক্টর মীর রকিবুল হক।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান, রোববার মধ্যরাতে আবদার এলাকায় অভিযান চালিয়ে পারভেজকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে মা-সন্তানদের খুনের কথা স্বীকার করলে আদালতে ১৬৪ধারায় তার জবানবন্দি নেয়া হয়। ২মাস আগেও পারভেজ নুরাকে উত্যক্ত করতে গিয়ে তাদের ঘরের খাটের নিচ থেকে ধরা পড়ে। পরে ক্ষমা চেয়ে ছাড়া পায়।
তিনি জানান, মা ও মেয়ে নুরার স্মার্ট মোবাইল ফোন চুরির উদ্দেশ্যে গত ২৩এপ্রিল পাশর্^বর্তী বাবুলের বাড়ির পিছন দিক দিয়ে কাজলের বাড়ির দেয়ালের ইট বেয়ে দোতলা বাড়ির ছাদে উঠে। এসময় নিজের কাছে থাকা বেøড দিয়ে ছাদে কাপড় শুকানো রশি কেটে ছাদের গ্রীলের সাথে বেঁধে রশি বেয়ে একটু নীচেই দোতলার বাথরুমের ভেন্টিলেটর ফাঁকা জায়গা দিয়ে ভেতরে ঢুকে। পরে সে নুরা ও হাওয়ারিন এর রুমে প্রবেশ করে খাটের নীচে লুকিয়ে থাকে। নুরার তখন কানে হেডফোন ছিল ও ছোট বোন হাওয়ারিন ঘুমিয়ে ছিল। প্রায় এক ঘন্টা পর সকলে ঘুমিয়েছে ভেবে ধারণা করলে নীচ তলায় নেমে রান্না ঘর হতে ধারালো বটি নিয়ে দোতলায় উঠে মোবাইল নেয়ার জন্য নুরার মার কক্ষের দরজার লক খোলার চেষ্টা করে। এসময় দরজা খোলার শব্দে নুরার মা জেগে উঠে বাথরুমে ও আশপাশ কেউ আছে কিনা খোঁজ করে। এসময় ফাতেমা তাকে দেখে চিনে ফেললে সে চিৎকার দিয়ে তার হাতে থাকা বটি দিয়ে কাজলের স্ত্রীকে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথারী ভাবে কোপায়। এতে ফাতেমা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। এসময় নুরা শব্দ পেয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলে তাকেও বটি দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এরপর নুরার ছোট ভাই ফাদিল জেগে উঠলে তার মাথায় কোপ মারে, সে ফ্লোরে পড়ে গেলে প্রথমে তাকে গলাকেটে নুরার খাটের নীচে রাখে, তারপর হাওয়ারিন ঘুম থেকে জেগে উঠে চিৎকার দিলে তাকেও কোপায়। পরবর্তীতে সে নুরাকে ধর্ষন করে। নুরার মাকে ওড়না দিয়ে হাত পা বেঁধে অতঃপর অর্ধমৃত হাওয়ারিনকেও ধর্ষণ করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য সবাইকে গলা কেটে হত্যা করে।
এরপর নুরার মার গলায় ১টি স্বর্ণের চেইন, ২টি কানের দুল ও ১টি কান ফুল ও ১টি নাক ফুল খুলে নেয় এবং হাওয়ারিন এর কান থেকে ২টি স্বর্ণের রিং খুলে নেয়। পরবর্তীতে আলমিরা খুলে ২টি স্বর্নের চেইন, ১টি আংটি, ১টি লাল রং এর ছোট ডাইরী, নুরার মায়ের রুম হতে ২টি বড় টাচ মোবাইল নেয়। মোবাইল ও স্বর্নালংকার তার পরিহিত পায়জামার পকেটে রাখে। এরপর সে হাত মুখ ধুয়ে ফেলে পেছনের গেইট খুলে নিজ বাড়ি চলে যায়।
পিবিআই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সোমবার ভোরে কিশোর পারভেজের স্বীকারোক্তি মোতাবেক তাঁর ঘরের মধ্যে পায়জামার পকেট হতে লুকিয়ে রাখা উক্ত স্বর্ণালংকার এবং আলনায় অন্যান্য কাপড়ের ভেতর রাখা একটি লাল রংয়ের রক্ত মাখা গেঞ্জি ও ২টি টাচ মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।
পরিদর্শক হাফিজুর আরও জানান, ঘাতক পারভেজ নিহতদের প্রতিবেশী তার বাবার নাম কাজিমউদ্দিন। সে বিগত ২০১৮ সালে তার চাচার বাড়ীর ভাড়াটিয়া ৭বছরের শিশুকে ধর্ষন করে গলা টিপে হত্যা করেন। তার বিরুদ্ধে দোষীপত্রও দাখিল করেছে শ্রীপুর থানা পুলিশ। দীর্ঘ ৯মাস হাজত বাস শেষে সে সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় আসেন। এলাকায় বখাটের তকমা পাওয়া কিশোর পারভেজ কিছুদিন পূর্বেও নুরাকে উত্যেক্ত করতে তার ঘরে প্রবেশ করেছিলেন।