রাতুল মন্ডল শ্রীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরের আবদার গ্রামের জৈনাবাজার এলাকায় মা ও তিন সন্তানকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় পারভেজ নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগ্রেশন। গ্রেপ্তার হওয়া পারভেজ (২০) আবদার গ্রামের কাজিম উদ্দিনের ছেলে।
গতকাল রাতে তাকে গ্রেফতার করেছে বলে জানায় গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগ্রেশনের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান। এসময় পারভেজের ঘর থেকে তার দেয়া দেখানো মতো রক্তমাখা কাপড় ও মাটির নিচে চাপা দেয়া অবস্থায় মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
এদিকে, আবদার এলাকায় মা ও তিন সন্তানকে হত্যার আগে ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রয়ারী নীলিমা নামের সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের পর মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পারভেজ। ওই সময় এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, জোর পূর্বক ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, হত্যা ও সহায়তা করার অপরাধ এনে পারভেজের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। বয়স বিবেচনায় হাইকোর্ট থেকে জামিন এনে মুক্ত হয় পারভেজ।
জামিনের মুক্ত হওয়ার পরই মামলা প্রত্যাহারের করে নেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি দেখায় ও হুমকি দেয়। মামলা প্রত্যাহার না করা হলে তাদের মারপিট করে এলাকা ছাড়া করবে বলে জানায় পারভেজ ও তার পরিবারের সদস্যরা। এবিষয়ে ২০১৮সালে ২৮ আগষ্ট নিরাপত্তা চেয়ে পারভেজ, তার বাবা কাজিম উদ্দিন, মা মোছা: কামরুন্নাহার ও আবুল কালামের নাম উল্লেখসহ শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন বলে নিশ্চিত করেন শিশু নীলিমার বাবা হাসান ওরফে ফালান।
মা ও শিশুসহ চারজনকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া পারভেজ এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত ছিল। মাদকসেবন থেকে শুরু করে বেচা কেনার সঙ্গেও তার সম্পর্ক ছিল। মাদক সম্পৃক্ততা ও বখাটে আচরণের কারণে স্থানীয় লোকজন তাকে এড়িয়ে চলতো বলে জানান ওই এলাকার বাসিন্দা হারুন অর রশিদ। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা অনেক চেষ্টা করেও তাকে ভাল পথে রাখতে পারেননি বলে জানান। অবশেষে শ্রীপুর ফোর মার্ডার মামলায় তাকে আটক পিবিআই।
পারভেজের জেঠা আসাম উদ্দিন বলেন, পারভেজ অনেক আগে থেকেই মাদক খাওয়া বিক্রির সাথে সম্পৃক্ত। টাকার জোরে একটি মার্ডার মামলা থেকে পারভেজ পার পেয়ে যায়। তখন যদি সে ওই মামলা পার না পেতো তাহলে এমন রোম হর্ষক হত্যা কান্ড ঘটনোর মতো সাহস পেতো না।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান, পারভেজের একা পক্ষে এমন হত্যাকান্ড ঘটনো কোন মতেই সম্ভব নয়। মামলার শুরুতেই ভিন্ন আঙ্গীকে তদন্ত শুরু করে পিবিআই। পূর্বের বিভিন্ন ধরনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা, এলাকার বখাটে, মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন জনের তথ্য সংগ্রহ করে পিবিআই। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে গতকাল রাতে পারভেজকে আবদার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকান্ডের দায়িত্ব স্বীকার করে। পরে তাকে নিয়ে অভিযানে বের হয় পিবিআই। এসময় পারভেজের ঘর থেকে তার দেখানো মতো রক্তমাখা কাপড় ও মাটির নিচে চাপা দেয়া অবস্থায় মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এসময় একটি পায়জামার ভেতর থেকে তিনটি গলার চেন, ফাতেমার কানের দুলসহ কিছু স্বর্ণলংকার উদ্ধার করা হয়েছে।
এবিষয়ে বিস্তারিত সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগ্রেশন পরিদর্শক হাফিজুর রহমান।