সাভার: করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘ এক মাস বন্ধ থাকার পর ডিইপিজেডসহ শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ার অধিকাংশ কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে রবিবার সকাল থেকে শ্রমিকরা দলে দলে নিজেদের কর্মস্থলে যোগ দিয়েছে। এর আগে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এবং শ্রমিকদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে গত ২৬ মার্চ থেকে সকল পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানায় বিজিএমইএ। প্রতিটি কারখানায় চাকুরী বাঁচাতে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলেও তাদের ভেতরেও রয়েছে করোনা আতঙ্ক। জনসমাগমের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকায় যে কোন সময় তাদের মাঝেও ভাইরাসের সংক্রমন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে শ্রমিকরা। তবে মালিকপক্ষের দাবি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই কারখানা চালু করা হয়েছে। এদিকে করোনার সংক্রমন রোধে সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধের পাশাপাশি গণপরিবহন বন্ধ রাখা হলেও পোশাক খাত বন্ধের সময় বাড়ানো হয়নি। তাই কারখানাগুলো চালু করা হলেও পরিবহন না থাকায় শত দুর্ভোগ পারি দিয়ে হেঁটে হেঁটে কর্মস্থলে যাচ্ছেন শ্রমিকরা।
তৈরী পোশাক শ্রমিক মাকসুদা আক্তার বলেন, শনিবার রাতে সুপারভাইজার ফোন করে বলেছেন রবিবার থেকে কারখানা চালু হবে। কারখানায় উপস্থিত না থাকলে চাকরি থাকবে না তাই গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে চলে এসেছি। অপর শ্রমিক সুরাইয়া বেগম বলেন, চাকরি না থাকলেতো না খেয়ে মরতে হবে। তাই অফিসের ফোন পাওয়ার সাথে সাথে সিরাজগঞ্জ থেকে সাভারে আসি। রাস্তায় গাড়ি নেই তবুও মহিলা মানুষ হয়ে আমি কখনও ট্রাকে, কখনও পিকআপে, অটোরিকশায় করে আবার কখনো পায়ে হেঁটে প্রায় ১৬ ঘণ্টায় সাভারে পৌছেছি। অন্যদিকে করোনা প্রাদুভাবের মধ্যে পোশাক কারখানা খোলে দেয়ার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছে শ্রমিক নেতারা। কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে শ্রমিক নেতা ইব্রাহিম বলেন, বহির্বিশ্বের অনেক দেশেই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পোশাক কারখানা খোলা রয়েছে। আমরা যদি এই মুহূর্তে কারখানাগুলো খুলে না দেই তাহলে আমাদের কাজগুলো অন্যত্র চলে যাবে। তাই কারখানাগুলো খুলে দেওয়া যেমন জরুরি তেমনি শ্রমিকদের পর্যাপ্ত সুরক্ষার বিষয়ে মালিকদেরও খেয়াল রাখতে হবে বলে জানান তিনি। গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মিন্টু বলেন, শ্রমিকদের শতভাগ স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে রবিবার থেকে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তা শ্রমিকদের জীবনের জন্য ঝুকিপূর্ণ এবং আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কারখানা চালু করা কোনভাবেই উচিত হয়নি বলে জানান তিনি। শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে সাভারের আল-মুসলিম গ্রুপের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, শ্রমিক-কর্মচারী, কর্মকর্তা তথা সকলের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমাদের কারখানার মূল ফটকগুলোতে বডি স্প্রে ট্রেইলর বসানো হয়েছে। কারখানায় প্রবেশের জন্য ট্রেইলরের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় সকলের শরীরে জীবানু নাশক স্প্রে করা হয়। এরপর কর্মস্থলে প্রবেশের পুর্বে জুতা খোলে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে জীবানু নাশক লাগানো কার্পেটের উপর দিয়ে সকলকে যেতে হয় এবং তাদের ব্যবহৃত জুতাগুলোতেও স্প্রে করা হয়। এছাড়া সকলের জন্য মাস্ক ও গ্লাভস বাধ্যতামূক করার পাশাপাশি শ্রমিকদের কাজ করার মেশিনগুলোও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে আগের চেয়ে ফাঁকা করে বসানো হয়েছে। যে কারনে শ্রমিকরা আতঙ্কিত না হয়ে র্নিবিঘ্নে কাজ করছে।