ডেস্ক: মানুষের শরীরে প্রবেশ করে রূপ বদলে জটিল হয়ে উঠছে করোনাভাইরাস। মার্চেই আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ৭শ বার স্টেন পরিবর্তন হয়েছে প্রোটিনে। ফলে আগের তুলনায় শক্তিশালী হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কাবু করে ফেলেছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। উপসর্গ না থাকলেও করোনা আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন গাইবান্ধার এক তরুণ।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস স্টেন অর্থাৎ রূপ পাল্টে জটিল হচ্ছে। আমরা ৩০ মার্চ পর্যন্ত একটা পর্যালোচনা করে দেখেছি ভাইরাসের এক হাজার ৪০২টি নিউট্রেশন হয়েছে। প্রোটিনে ৭শ বার অ্যামিনো অ্যাসিড পরিবর্তন হয়েছে। ভাইরাসের ক্লেড, গুচ্ছ বিভাজন অনুযায়ী অনেক ভাগ হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, তাই শুধু যে ভ্যাকসিন বানালেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাচ্ছে তা নয়। স্টেন পাল্টালে এই আরএনএ ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়। এতে করে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ভাইরাসের কার্যকারিতা দীর্ঘ ও শক্তিশালী হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ভাইরাস স্টেন পাল্টালে মূলত দুটি সমস্যা তৈরি হয়। প্রথমত, ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন স্টেন অনুযায়ী তৈরি হয়। তাই ভাইরাস যদি স্টেন পাল্টে ফেলে তাহলে ওই ভ্যাকসিনের কার্যকিরতা নষ্ট হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, ভাইরাসের একটি স্টেনে কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হলে তার শরীরে ওই স্টেনের বিপরীতে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সে ভাইরাসের ওই স্টেনে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয় না। কিন্তু স্টেন পাল্টালে আক্রান্ত ব্যক্তির পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে স্টেন পরিবর্তনের এই তথ্য চিন্তার বিষয়।
উপসর্গহীন রোগী বাড়ছে : গত বুধবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তবে তার শরীরে কোনো লক্ষণই ছিল না। গাজীপুর থেকে সিলেট আসার কারণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তার নমুনা পরীক্ষা করিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতেই করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে কর্মরত স্টোরকিপার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু সর্দি, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের কোনো উপসর্গই ছিল না তার।
উপসর্গ না থাকা অবস্থায় করোনা শনাক্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। তারা বলছেন, এমনটা হলে বোঝার সাধ্য নেই কে আক্রান্ত আর কে নয়। উপসর্গহীন ব্যক্তি সবার মাঝে ঘুরে বেড়ালেও কেউ সাবধান হতে পারবেন না। ফলে আরও অনেকের মধ্যে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও কারও করোনা পজেটিভ হতে পারে। সবার মধ্যে উপসর্গ থাকবে, এমন নয়। ৫০-৮০ ভাগ লোকের উপসর্গ থাকে না। তারা কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিংবা চিকিৎসা ছাড়াই শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে ভাইরাস প্রতিহত করে সুস্থ হয়ে ওঠেন। ঝালকাঠি সদর উপজেলার একটি গ্রামে ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরে একটি পরিবার। তাদেরও করোনার উপসর্গ ছিল না। তাদের ছয় মাসের বাচ্চাসহ তিনজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তিনজনেরই করোনা পজেটিভ প্রতিবেদন এসেছে।
দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত : গাইবান্ধায় পুনরায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এক তরুণ। যুক্তরাষ্ট্র ফেরত ওই তরুণ ও তার মা গত ২২ মার্চ শনাক্ত হয়ে গাইবান্ধায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১০ এপ্রিল ছেলে (২২) সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু সুস্থ হওয়ার ১২ দিনের মাথায় তিনি পুনরায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাকে আবার গাইবান্ধার আইসোলেশন কেন্দ্রে এনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
গাইবান্ধা সিভিল সার্জন এ বি এম আবু হানিফ জানান, মা ও ছেলে মার্চের প্রথম সপ্তাহে গাইবান্ধার বাড়িতে আসেন। গত ২২ মার্চ তাদের করোনাভাইরাস পজেটিভ শনাক্ত হয়েছিল। এরপর মা ও ছেলে দুজনেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু ছেলে পুনরায় করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েন।