এই তালাবদ্ধ বাড়িতেই থাকতেন প্রবাসী কাজলের স্ত্রী তার তিন সন্তানকে নিয়ে!

Slider জাতীয় নারী ও শিশু

রাতুল মন্ডল শ্রীপুর: দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় পূর্বে ইন্দোনেশিয়া তরুণী স্মৃতি ফাতেমাকে বিয়ে করেন ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার লংগাইর ইউনিয়নের গোলাবাড়ি গ্রামের রেদোয়ান হোসেন কাজল। বিয়ের কয়েকবছর পর তাদের সংসার আলোকিত করে জন্ম নেয় সাবরিনা সুলতানা নূরা। নূরার বয়স যখন নয় মাস ঠিক তখনই স্ত্রী আর একমাত্র মেয়ে নূরাকে সাথে নিয়ে পাড়ি জমান প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে। প্রবাসী কাজল মিয়া বাংলাদেশে এসে ব্যবসা শুরু করেন পাশ্ববর্তী উপজেলার জৈনা বাজারে। কয়েকবছর ব্যবসা করে তেমন তেমন লাভের মুখ দেখতে না পেরে। পূনরায় পাড়ি জমান মালোশিয়ায়। বছর খানেক আগে দেশে ঘুরে গিয়েছেন তিনি। স্বামী প্রবাসে রেখে তিন সন্তানকে নিয়ে ভালোভাবে চলছিলো স্মৃতি ফাতেমার সংসার।

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নিজের মাতৃভূমির মায়া ছেড়ে ভালোবাসার টানে কাজলের হাত ধরে চলে আসেন বাংলাদেশে। বসবাস শুরু করেন উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার গ্রামে। ইন্দোনেশিয়া তরুণী স্মৃতি ফাতেমার পাড়ি জমানো যেন ইতিহাস হয়ে রবে বাংলাদেশর ইতিহাসে। এটা কি আদু জানতো এই তরুনী? স্মৃতি ফাতেমা ও আদরের তিনি সন্তান সাবরিনা সুলতানা নূরা, হাওরিন হাওয়া, ও একমাত্র প্রতিবন্ধী শিশুসহ ফাদিলকে একদন দুর্বৃত্ত মধ্য রাতের নির্মম ভাবে গলা কেটে হত্যা করে রেখে যায় ঘরে।

উল্লেখ্য শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকায় বসত ঘরের ভেতর একই পরিবারের ঘরের ভেতর মা-দুই মেয়ে ও ছেলের গলাকাটা বিবস্ত্র মরদেহ করেছে পুলিশ। চারজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুবৃর্ত্তরা। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাদের বসত ঘরে মৃত দেহের সন্ধান পেয়ে স্বজনরা পুলিশে খবর দেয়। ধারণা করা হচ্ছে বুধবার দিবাগত রাতের কোন এক সময় দুর্বৃত্তরা তাদের গলা কেটে হত্যা করেছে।

নিহতরা হলেন, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার লংগাইর ইউনিয়নের গোলাবাড়ী গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী স্মৃতি ফাতেমা (৪৫), তাঁর বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬), ছোট মেয়ে হাওরিন হাওয়া (১২) ও বাক প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিল (৮)। তাঁরা জৈনাবাজার এলাকায় জমি কিনে বাড়ি বানিয়ে প্রায় দুইযুগ যাবৎ বসবাস করে আসছিলেন।

প্রবাসী কাজলের ভাতিজা নাঈম ইসলাম জানান, কাজল ১৬বছর মালয়েশিয়াতে প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে এসে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। দেশে আসার সময় ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দা স্মৃতি ফাতেমাকে বিয়ে করে দেশে এনে বসবাস করেন। দেশে এসে ব্যবসায় সুবিধা করতে না পেরে ছয় বছর আগে সে পুনরায় মালয়েশিয়াতে চলে যায়। এর মধ্যে দেশে যাওয়া আসা করতেন। তবে কারও সাথে কোন ধরণের বিরোধ তাদের ছিল না বলে তিনি জানান।

কাজলের ভাই আরিফ জানান, ভাইয়ের বাসার পাশের বাসায় তিনি থাকতেন। প্রতিদিনের ন্যায় সকালে বাসায় গেলেও কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে সে চলে আসে। বিকেলও তাদের কোন খোঁজ না পাওয়ায় সে দোতলা বাড়ির জানালায় মই লাগিয়ে চার জনের মৃত দেহের সন্ধান পেয়ে পুলিশে খবর দেন।

গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ জানান, ঘরের ভেতর গলাকাটা মরদেহ দেখে তাদের চাচা আরিফুল ইসলাম পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বাড়ি ঘিরে রেখে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগকে খবর দেয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে শ্রীপুর থানা পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওই দোতলা বাড়িটি ঘিরে রেখেছে। এরই মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ, গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *