ভাঙ্গুড়া (পাবনা): করোনার প্রভাবে ব্যঘাত ঘটেছে নাগরিক জীবনের স্বাভাবিকতায়। ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থায় করোনার দোহাই দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। এতে বিপাকে পড়েছেন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার স্বল্প আয়ের কর্মহীন জনগোষ্ঠী। উপজেলার চাল ব্যবসায়ী ও চলকল মালিকেরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে বলে অভিযোগ করছেন সাধারণ ক্রেতারা। ফলে নিয়মিত বিরতিতে বাড়ছে চালের দাম। তবে এই বিষয়ে চালকল মালিক ও চাল বিক্রেতা একে অপরকে দুষছেন। এছাড়া প্রশাসনের নিয়মিত বাজার মনিটরিং না চালেরর দামের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঊপজেলায়র স্থানীয় কৃষকেরাই গত বোরো মৌসুমে ৭ হাজর হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেন। সেখান থেকে উৎপাদিত ধানের পরিমাণ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন।
নিজেদের প্রয়োজনীয় ধান রেখে বাকি ধান বিক্রি করে দেন। এই সুযোগে উপজেলার ৩৭টি নিবন্ধিত মিল মালিক এই ধান কম মূ্ল্যে কিনে স্টোরেজ করে রাখেন। এই ধান পরবর্তীতে চাল বানিয়ে বাজারে ছাড়া হয়। চাহিদা বেশি থাকায় আশপাশের জেলা উপজেলা থেকেও ধান আনা হয় এই মিলে। হিসাবমতে এই মিলগুলোতে ৪৬ হাজার মেট্রিকটন ধান থেকে প্রতি বছর ৩০ হাজার মেট্রিক টন চাল তৈরি করা হয়। এই চালই মূল উপজেলার সকল স্তরের বাজারের খুচরা দোকানে বিক্রি হয়।
উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সর্বাধিক বিক্রিত চালের তালিকায় রয়েছে বোরো ২৯ ধানের মোটা চাল। গত মার্চে ১৭০০ টাকায় বিক্রি হওয়া ৫০ কেজির বস্তা বর্তমানে করোনার প্রভাবে ২৩০০শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা এই বছরে সর্বোচ্চ দাম। এছাড়া ১মাস আগে ২১শত টাকায় বিক্রিত মিনিকেট (৫০ কেজি বস্তা) চাল বর্তমানে ২৫থেকে ২৬শত টাকায়, ২৩শত টাকায় বিক্রিত বাসমতি (৫০ কেজি বস্তা) চাল ২৭ থেকে ২৮শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ১ মাসের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে ৫শত থেকে ৬শত টাকা। আবার আমদানি করা নাজিরশাইল চালের বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে স্থানভেদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা যা অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। এ চিত্র মাত্র এক মাসের।
ভোক্তাদের অভিযোগ, উপজেলার চালকল মালিকদের সবার গুদামেই প্রচুর চাল সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া চাল বিক্রেতাদের কাছেও রয়েছে শত শত বস্তা চাল। কিন্তু প্রতি সপ্তাহেই দফায় দফায় বাড়ছে চালের দাম। মূলত চালকল মালিক ও চাল বিক্রেতারা সংঘবদ্ধ ভাবে কাজ করছে দাম বৃদ্ধিতে। তারা করোনা পরিস্থিতির অজুহাতের তারা এই কাজ সহজে করতে পারছেন। কিন্তু চালের বাজারের এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নীরব ভূমিকায় রয়েছেন প্রশাসন।
চাল ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, মিল থেকে তাদের চাল বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাই বাধ্য হয়েই তারা বেশি দামে চাল বিক্রি করছেন। ক্রেতাদের অসহায় আবস্থা দেখে তাদের কষ্ট হলে তাদের করার কিছুই থাকছে না। তারা আরও বলেন চালকল মালিদের ইচ্ছার উপরেই নির্ভর করছে চালের স্বাভাবিক বাজার।
ভাঙ্গুড়া চালকল সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আমির হোসেন বলেন, এ বছর তাদের বেশি দামে বাজার থেকে ধান সংগ্রহ করতে হয়েছে। ধানের দাম বেশি হওয়ায় স্বভাবতই দাম বেড়েছে চালের। তবে নতুন ধান উঠলে চালের বাজার স্বাভাবিক হবে বলে জানান তিনি এবং চাল মজুদের বিষয়টি অস্বীকার করেন। অনেকেই ধান মজুদ রেখেছেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আইনিন আফরোজ বলেন, সংঘবদ্ধ হয়ে চালের দাম বাড়ানোর মত কোন ঘটনা ঘটলে এ ব্যাপারে দ্রুত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, এই বিষয়ের চালকল মালিকদের সাথে আলোচনা করে চালের বাজারে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা হবে। তারপরও নির্দেশ অমান্য করলে যাচাই সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।