গাজীপুর-ময়মনসিংহ সীমান্তে লকডাউন শাটডাউন হওয়ায় উত্তেজনা, সহিংসতার আশংকা

Slider জাতীয় টপ নিউজ সারাদেশ

ময়মনসিংহ ও গাজীপুর অফিস: করোনার আক্রমনের হাত থেকে বাঁচতে চলমান লকডকাউন, অতিউৎসাহী লোকদের কবলে পড়ে শাটডাউনে রুপান্তিত হওয়ায় গাজীপুর-ময়মনসিংহ সীমান্তে বাজার ও ব্রীজে অস্থায়ী প্রাচীর নির্মান হয়ে গেছে। ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে পানিশূণ্য নদীর সাঁকোও। এ সব কর্মযজ্ঞেন সময় দুই জেলার লোকদের মধ্যে হালকা সংঘর্ষ হয়ে একজন আহতও হয়েছেন। বর্তমানে দুই জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় বড় ধরণে সহিংসতার আশংকায় এলাকার সাধারণ মানুষ ভয়ে শঙ্কিত।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়ন ও ময়মনসসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের যৌথ সীমানা গড়ে উঠা ঝালপাজা বাজারের বয়স কযেক যুগ। সপ্তাহে দুই বার হাট বসলেও দোকানপাট স্থায়ী হওয়ায় প্রতিদিনই জমে উঠত বাজার। এই বাজারে দুই জেলার লোকজন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিলে মিশে গড়ে তোালেছিল একটি সম্প্রীতির বন্ধন। সামাজিক সাংস্কৃতিক আচর-অনুষ্ঠান ছিল দুই জেলাবাসীর সুন্দর মেলবন্ধন। কিন্তু মরণঘাতি করোনা ভাইরাস দীর্ঘদিনের এই বন্ধনকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছে। প্রথমে কাওরাইদ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে একই পরিবারের তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়। আক্রান্তরা প্রতিবেশী হবির বাড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত একটি চীনা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় এই মেলবন্ধন ভেঙ্গে যায়। প্রথমে গাজীপুর জেলা লকডাউন হওয়ায় করোনার সংক্রমনের ভয়ে হবিরবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ঝালপাজা বাজারে এসে বাজারের জাহাঙ্গীরপুর অংশে সীমানা প্রাচীর তেরী করেন। টিন দিয়ে এই প্রাচীর তৈরী করার সময় ঝালপাজা বাজারে জাহাঙ্গীর পুর গ্রামের অংশে নির্মিত সীমানা পিলার ভেঙ্গে ফেলেন। এরপর ময়মনসিংহ জেলাও লকডাউন হয়। কিন্তু বিধিবাম হয়ে গতকাল হবিরবাড়ি ইউনিয়নেও করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ফলে সীমান্ত রেখার দুই ইউনিয়নই করোনা আক্রান্ত এখন। ভয়কে জয় করতে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে তাদের সম্প্রীতি ও বন্ধুত্ব। এই ঘটনাকে কেন্দ্রে করে দুই পক্ষের মধ্যে হালকা মারামির হলে একজন আহত হয়। এরপর একই বাজারে গড়ে উঠে দুটি বাজার। টিনের প্রাচীরের এক পাশে ঝালপাজা বাজার আর বাজারের অন্য অংশে জাহাঙ্গীরপুর বাজার। এক বাজার দুই বাজারে পরিণত হওয়ায় প্রতি মুহূর্তেই সংঘর্ষের আশংকা তৈরী হয়েছে। সবেক ঝালপাজা বাজারে। এই ঘটনার রেশ ধরে দুই ইউনিয়নের কোন লোক কারো ইউনিয়নে যেতে পারছে না। যে যাকে যেখানে পাচ্ছেন অনুপ্রবেশের অভিযোগে হৈ চৈ শুরু করছেন। মানুষ ও জরুরী গণপরিবহনও আটকা পড়ার খবর তৈরী হয়েছে এরই মধ্যে।

এদিকে কাওরাইদ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের হয়দেবপুর গ্রাম ও ভালুকা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের পারুলদিয়া বাজারের যাতাযাতের পথে সীমান্তনদী খিরু নদী। গাজীপুর থেকে ময়মনসিহে যাতাযাতের জন্য নির্মিত খিরু নদীর ব্রীজেও তৈরী হয়েছে বাঁশের তৈরী প্রাচীর। ফলে ওই ব্রীজ দিয়ে কোন জরুরী পরিবহন এমনকি মানুষ পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারছে না। ব্রীজের মাঝে প্রাচীর থাকায় পারুলদিয়া বাজারে যেতে পারছেন না কাওরাইদ ইউনিয়নের মানুষ। ফলে জীবিকার প্রয়োজনে হয়দেবপুর গ্রামে নদীর পাড়ে স্কুলের মাঠে গড়ে উঠেছে বাজার। কাওরাইদ ইউনিয়নের মানুষ যারা পারুলদিয়া বাজারে যেত, তারা এখন নদীর পাড়ে স্কুলের বাজারে যায়।

মূলত লকডাউনটি শাটডাউন হয়ে যাওয়ার কারণে এই দুই জেলা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সব দিক থেকে। লকডাউন শেষ হলে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে দুই জেলার মানুষকে অনেক কাঠখড় পোঁড়াতে হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

এই অবস্থায় দৃশ্যত বন্দি হয়ে আছে দুই জেলার সীমান্তবর্তি ওই অঞ্চল। একই সময় দুই জেলার মানুষের সংক্ষিপ্ত যাতায়াতের জন্য পানি শূণ্য খিরু নদীর তলদেশে জমে থাকা সামান্য পানির উপর নির্মিত ছোট ছোট সাঁকোও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এতে দুই জেলার মানুষের পারস্পরিক সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

দুই জেলার সীমান্তবর্তি এই অঞ্চলে লকডাউন শাটডাউন হয়ে মানুষের মধ্যে হিংসা ও হানাহানির জন্ম দেয়ায় এর প্রভাব পড়তে যাচ্ছে দুই জেলার সীমান্তবর্তি অন্যান্য পয়েন্টেও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে সার্বিকভাবে আইন শৃঙ্খলা অবনতির আংশকা বড় আকারেরও হতে পারে।

নাগরিকেরা মনে করেন, লকডাউন করার অর্থ ছিল জনসমাগম করতে না দেয়া। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে জরুরী সেবাসমূহ চালু রাখতে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা উন্মুক্ত রাখতে হবে। কিন্তু লকডাউন শাটডাউন হয়ে যাওয়ার কারণে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হলে শৃঙ্খলা বাহিনীর যাতায়াতও আটকে যাবে। একই সঙ্গে জরুরী রোগী পরিবহন ও মানুষের নিত্যদিনের ভোগ্য পন্য সহ শিশুখাদ্য সংগ্রহ সরবরাহ সবি এখন অনিশ্চিত। এই অবস্থায় কেউ অসুস্থ হলে কৃত্রিম শাটডাউনের কারণে রাস্তায় রোগী আটকে মারা গেলে বড় ধরণে সহিংতাও জন্ম হতে পারে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধি রাতুল মন্ডল জানান, এই বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামসুল আরেফিন বলেন, দুই উপজেলার সিমান্তে প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে ময়মনসিংহ প্রশাসনের সাথে কথা বলে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ কামাল বলেন শ্রীপুর যেহেতু করোনা ঝুঁকি পূর্ণ এলকা তাই স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ এলাকার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে সিমান্তে চেকপোস্ট বসাতে বলেছি। স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে আমার জানা নেই।

সাধারণ মানুষের দাবী, দুই জেলার সীামানায় পাহাড়া বসিয়ে যাতায়াত বন্ধ করা যেত। কিন্তু প্রাচীর নির্মান করার কারণে জন জীবন ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি যে কোন সময় যে কোন ধরণের সহিংসতা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা তৈরী হয়ে আছে। তাই দ্রুত এই অবস্থার অবসান জরুরী। একই সঙ্গে মহামারী করোনার আক্রমন থেকে বাঁচতে সরকার সব ধরণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। মানুষ যেন নিরাপদে থাকে সেই জন্য সরকার কাজ করছে বিরামহীনভাবে। কিন্তু কে বা কারা বা কোন বিশেষ গোষ্ঠি পরিকল্পিতভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করছে কি না, সেটাও তদন্ত করে দেখার দাবী ভোক্তভোগীদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *