ঢাকা: বিদায়ী প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিবে না সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন। তবে তার স্থলাভিষিক্ত নতুন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে সংবর্ধনা দিবে আইনজীবীদের শীর্ষ সংগঠন। বুধবার বারের এক সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়।
বুধবার সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বারের সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। এ সময় বারের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বারের কার্যনির্বাহি কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ ও শতাধিক সাধারণ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার বর্তমান প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের শেষ কর্মদিবস। ১৭ জানুয়ারি তার ৬৭ বছর পূর্ণ হবে। এরপর তিনি অবসরে যাবেন। ইতোমধ্যে নতুন প্রধান বিচারপতি হিসাবে আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সাধারণ সদস্যদের বক্তব্যের পর বারের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবে বলা হয়- বিদায়ী প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসাবে বিচার বিভাগকে স্বাধীন রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার সময়ে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতিগণ রাজনৈতিক চিন্তা মাথায় রেখে বিচার কার্য পরিচালনা করেছেন। ঢাকা সিএমএম কোর্ট বিচার বিভাগের অধীনে রাখতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এই আদালত সরকারের অধীনে ছিলো। প্রস্তাবে আরো বলা হয়, সরকারকে খুশি করতে কিছু কিছু বিচারপতির সাবেক রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় তাদের মোশন ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বিচারপ্রার্থীরা যাতে বিচার না পায় সে জন্য আগাম জামিন বন্ধ করে দিয়েছেন। তার সময়ে সুপ্রিম কোর্টে বাহিরাগত সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। কোনো বক্তব্য দেননি।
প্রস্তাবে আরো বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের গত ৪৩ বছরের ইতিহাসে একসাথে বারের সভাপতি ও সেক্রেটারি গ্রেফতার হয়েছেন তার সময়ে। তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। তিনি কখনো বার ও আইনজীবীদের পক্ষ নেননি। তার সময়ে অনেক নারী আইনজীবী নির্যাতিত হয়েছেন। তার সময়ে বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা রাজনীতিবিদদের হাতে দেয়া হয়েছে। তার সময়ে সুপ্রিম কোর্টে সব ধরনের দুর্নীতি বেড়েছে। তার সময় অ্যাডভোকেট এম ইউ আহমেদকে হত্যা করা হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। এসব কারণে সুপ্রিম কোর্ট বার তাকে সংবর্ধনা না দিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সভাপতির বক্তব্যের পর এসব প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়।
বার সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, আমরা আগামিকাল (আজ বৃহস্পতিবার) রাহুগ্রস্থতার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছি। বাংলাদেশের আইনাঙ্গণে বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করার জন্য, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক অঙ্গণে পরিণত করার জন্য যিনি দায়ী তিনি হলেন আমাদের এই বিদায়ী প্রধান বিচারপতি। আমরা আশা করেছিলাম মাসদার হোসেন মামলার আালোকে প্রধান বিচারপতি নিম্ন আদালতকে নির্বাহি বিভাগের কর্তৃত্ব থেকে মুক্তি দিবেন। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেননি। এর ফলে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের শুভফল থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। আজ পর্যন্ত নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদায়ন, নিয়োগ সবকিছু আইন মন্ত্রণালয় থেকে করা হয়। প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয় কেবল অনুমোদনের জন্য। জনবল, অবকাঠামোর অভাবে তিনি প্রথাগতভাবে অনুমোদন দিয়ে যান। আমরা বার বার সুপ্রিম কোর্ট থেকে বলেছি- প্রধান বিচারপতিকে পৃথক সচিবালয় দেয়া হোক। সেটা দেয়া হলে আজ নিম্ন আদালতে যে দুর্নীতি হচ্ছে সেটা হয়তো হতো না। কিন্তু এই প্রধান বিচারপতি কিছ্ইু করতে পারেন নাই।
তিনি আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্টের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভঙ্গ করে সিনিয়র বিচারপতিদের পঙ্গু করে দিয়েছেন। এমনভাবে বেঞ্চ গঠন করেছেন যেখানে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত সীমিত। অপেক্ষাকৃত জুনিয়র বিচারপতিদের দিয়ে বিশেষ উদ্দেশ্যে তিনি মোশন বেঞ্চ গঠন করেছেন। এটা করা হয়েছে যাতে তার ইচ্ছানুযায়ী বিচার কার্যক্রম চলে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়। তিনি বলেন, বিচারাঙ্গণে দুর্নীতির প্রশ্রয় এই প্রধান বিচারপতি দিয়ে গিয়েছেন। আরো শোনা যায়- প্রত্যক্ষভাবে প্রধান বিচারপতির ঘনিষ্ঠজনরা বিশেষ সুযোগ সুবিধা নিয়ে বিচার বিভাগকে কলঙ্কিত করেছে। বিচারপ্রার্থীরা বিচার পাননি।
সাধারণ সভায় আরো বক্তব্য দেন- অ্যাডভোকেট খসরুজ্জামান, অ্যাডভোকেট খালেদা পান্না, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট জামিল আখতার এলাহী, অ্যাডভোকেট আইয়ূব আলী আশরাফী, অ্যাডভোকেট কবির কোরাইশি প্রমুখ।