ঢাকা: এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল। এভাবে রাজধানীর ১১টি হাসপাতালে স্বামীকে নিয়ে ঘুরেছেন মিনু বেগম। কোনো হাসপাতালেই চিকিৎসা হয়নি আমিনুলের (৫২)। মিনু বেগমের কাকুতি মিনতি কেউ শুনেনি। সর্বশেষ শনিবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকেও ফিরিয়ে দেয়া হয় তাকে। তখন দিন ঘনিয়ে সন্ধ্যা। অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রওনা দেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের উদ্দেশে। ওই হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মাারা যান আমিনুল।
রাজধানীর মিরপুর ১১এর বাসিন্দা আমিনুল গত দুই সপ্তাহ ধরে শা¦সকষ্ট ও গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমিনুল অ্যাজমার রোগী ছিলেন। মাঝেমধ্যেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতো তার। স্বজনদের অভিযোগ রাজধানীর ১১টি হাসপতালে চিকিৎসার জন্য ঘুরলেও করোনা সন্দেহে কেউ তার চিকিৎসা দিতে রাজি হননি। মৃত আমিনুলের স্ত্রী মিনু বেগম বলেন, আমার স্বামীর অ্যাজমার সমস্যা অনেক আগে থেকেই। গত দশ পনেরো দিন ধরে তার অ্যাজমা বেড়ে যায়। যার চিকিৎসার জন্য এই শহরে এগারোটি হাসপাতালে গিয়েছি। সবাই করোনা সন্দেহে আমার স্বামীর চিকিৎসা করলো না। আমার স্বামী শেষ পর্যন্ত বিনা চিকিৎসায় মারা গেলো। আমি জানতাম কুর্মিটোলায় করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হয় কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তারা বলছে টেস্ট করিয়ে আনার জন্য। এখানে নাকি শুধু পজেটিভ রোগী চিকিৎসা করা হয়। আমি তাদের বলছি আপনারা টেস্ট করান। এখানে তো টেস্ট করানো হয়। কিন্তু তারা টেস্ট না করে আমাকে সোহরাওয়ার্দী হাসাপাতে যেতে বলেন। সেখান থেকে যেতে যেতেই আমার স্বামী রাস্তায় মারা যায়। আমরা কোন দেশ বাস করছি? যেদেশে একজন মানুষের চিকিৎসা করানো যায় না। এই দেশ কি আমাদের না?। সরকার বলছে যে কোনো সাহায্যের জন্য ৯৯৯ এ ফোন দেয়ার জন্য। এখানে ফোন দেয়ার পর তারা বলে বিষয়টি দেখছি। এর পর আর কোনো সারা শব্দ নেই। আইইডিসিআর এ এক সপ্তাহ ধরে ফোন দিয়ে গত ১২ তারিখ তাদেরকে পেয়েছি। তাদের কাছে উপায় না পেয়ে আমার স্বামীর উপসর্গগুলো বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলছিলাম। যেন তারা আমার স্বামীর জন্য দ্রুত কিছু একটা করে। সেই দিন বলেলো পরের দিন এসে নমুনা নিয়ে যাবে । আজ পর্যন্ত তাদের কেউ আমাদের কাছে আসেনি। গত পাচঁটা দিন তাদেরকে হাজার বার ফোন দিলাম কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি।
এদিকে মিনু বেগম অভিযোগ করে বলেন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মৃত ঘোষণা করার পর সঙ্গে সঙ্গে লাশ বের করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় আমি কোথায় যাই? আমার কোনো ছেলে সন্তান নেই। লাশ কোথায় কি করবো কিছুতেই মাথায় আসছিলো না। সেখানে আমাকে সাহায্য করার মতো কেউ ছিলো না। পরে আমার ভাই যোগাযোগ করলো মারকাজুলে। সেখানে গিয়েও বিপত্তি। তারা বলছেন , করোনা পজেটিভ বা নেগেটিভের কোনো কাগজ দেখাতে না পারলে তারা লাশ ধোয়ার কাজ করবে না। এমন অবস্থায় আমার বাসার চারপাশে ছড়িয়ে গেছে আমারা স্বামী নাকি করোনা আক্রান্ত। আশেপাশের লোকজন বাড়ির মালিক’কে ফোন দিচ্ছিলো আমাদের বের করে দেয়ার জন্য। অথচ ওই সময় আমি আমার স্বামী লাশ নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। তখন আমি কি আমার স্বামীর দাফনের ব্যবস্থা করবো না এলাকাবসীকে বোঝাবো? কিন্তু আমাদের বাড়ির মালিক আমাদের পাশে ছিলো। তিনি আমার স্বামীর অসুস্থতার কথা অনেক আগে থেকেই জানতেন।
মিনু বলেন , আমার স্বামীর লাশ যখন মারকাজুল গোসল করাচ্ছিলো না তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের একটা নাম্বারে ফোন দিয়েছিলাম। তখন ওখান থেকে বলছিলো যদি আপনার স্বামীর করোনা টেস্ট করাতে চান, তাহলে আরো একদিন লাগবে। লাশ আপনি কোথায় রাখবেন? আমি তাদেরকে বলছিলাম আপনারা নমুনা নেন। দরকার হলে লাশ ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রাখবো। আমি দেখতে চেয়েছিলাম , আসলে কি আমার স্বামী কোভিড ২০১৯ আক্রান্ত ছিলেন কিনা। পরে তারা কিছুই করলো না। তখন তারা মারকাজুলকে বলে দিলো, পরে খিলগাঁও নিয়ে আমার স্বামীর লাশ দাফন করলো। অথচ কোনো টেস্টই করলো না। আমাকে তারা লাশটাও দিলো না। আমার স্বামী করোনায় আক্রান্ত কিনা সেটার জানার ব্যবস্থাও তারা করলো না। এখন যদি আমার স্বামী আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে আমাদের কি হবে? অমাদের পরিবারে পাচঁজন রয়েছে। আমরাওতো ঝুঁকিতে আছি। আমাদেরওতো কোনো নমুনা নেয়া হয়নি।