অমানবিক বাড়ি মালিকদের সম্পদের তথ্য নিচ্ছে দুদক

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা সারাদেশ

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার শতাধিক পয়েন্টে ছড়িয়ে পড়েছে মহামারী করোনাভাইরাস। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি না থাকায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ডাক্তার ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। এই পরিিেস্থতিতে প্রথম সারির এ সকল সৈনিকদের ভাড়া বাসা থেকে চলে যেতে বলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন এক শ্রেণীর বাড়ির মালিক। তাদের এমন অমানবিক কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে উঠে আসছে। এমন অমানবিক বাড়ি মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাদের সম্পদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে বেশ কিছু বাড়ি মালিকের জমি, বাড়ির কাগজপত্র, তাদের আয়কর নথি ও ব্যাংকের হিসাব যাচাই শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, জাতির এই সঙ্কটময় সময়ে ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয় এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী জীবনের মায়া ত্যাগ করে জাতির সেবায় নিয়োজিত। এদের সাথে খারাপ আচরণ কিংবা কোনো প্রকার অসম্মান করা আইনগতভাবেই অপরাধ। দেশে বিদ্যমান সংক্রামক রোগ আইন, ২০১৮ অনুসারে আচরণ শাস্তিযোগ্য অরপরাধ।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি কেউ যদি এই আইন লঙ্ঘন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এরপরও যদি কোনো বাড়ির মালিক স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত কোনো ব্যক্তিকে বাড়ি ছাড়ার কথা বলেন বা বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেন তাহলে দুদক আইন অনুযায়ী এসব বাড়ি নির্মাণে অর্থের উৎস খুঁজে দেখবে। অবৈধ সম্পদের উৎস পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিবে। আমাদের গোয়েন্দা ইউনিট এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।

দুদক সূত্র জানায়, সংস্থাটির নিজস্ব সোর্স এবং বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যেসব বাড়িওয়ালা বাড়ি ছাড়তে হুমকি দিয়েছেন বা দিচ্ছেন তাদের তথ্য সংগ্রহ করছে। বেশ কিছু তথ্য ইতমধ্যে পাওয়া গেছে। ওইসব বাড়ি মালিকদের জমি বা বাড়ির কাগজপত্র, তাদের আয়কর নথি, ব্যাংকের হিসাব যাচাই করা শুরু হয়ে গেছে। যেহেতু করোনার মতো পরিস্থিতিতে শারীরিক চলাচল প্রায় বন্ধ। তাই অনলাইনে ই-মেইল কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যাদের অবৈধ সম্পদসহ দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের ছাড় দেয়া হবে না।

মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর রাজধানীসহ সারা দেশের বহু চিকিৎসক, নার্স, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত পেশার মানুষ বাড়ি মালিকের অমানবিক আচরণের শিকার হচ্ছেন এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আতঙ্কে বাড়ির মালিক, ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দারা তাদের বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য চাপ তৈরি করছেন। নানাভাবে কটূক্তিও করছেন তারা।

ময়মনসিংহে এক নারী চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্তের পর জোর করেই তাদের বাসা থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। হাসান নামের একজন চিকিৎসক তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, তাকে বাড়িওয়ালা বাসা ছাড়তে বলেছেন। এমন ঘটনা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। কেউ জানাচ্ছেন আবার কেউ বা চুপ করে আছেন।
সম্প্রতি সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক নার্সকে বাসা ছেড়ে দিতে বাসার মালিকের পক্ষে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠে। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাসা মালিকের পক্ষে তার ভাতিজা এ হুমকি দেন। স্বেচ্ছায় বাসা না ছাড়লে লোক দিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ওই নার্স ও তার পরিবারের লোকজনকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। পরে পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত গিয়ে বাসার মালিকের ভাতিজা সাজু আহমদকে সতর্ক করে এসেছে। ১৭ এপ্রিল সিলেট মহানগরের নবাব রোডের ঝর্ণা ভিলায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন বাড়িওয়ালাদের সতর্ক করে।

সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি মো: সেলিম মিয়া গণমাধ্যমকে জানান, নার্সকে বাসা ছাড়ার জন্য মালিকপক্ষের লোকজন চাপ দিচ্ছেন খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাসায় গিয়ে সতর্ক করে এসেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতও দুইবার গিয়ে সতর্ক করেছে। এরপর ওই নার্সকে বাসা ছাড়তে চাপ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ গুলজার হোসেন উজ্জ্বল গত ১৪ এপ্রিল ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এক চিকিৎসক দম্পত্তির বিড়ম্বনার কথা জানান। তিনি লেখেন, আক্রান্ত ব্যক্তির স্যাম্পল নিতে গিয়ে উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত এক ডাক্তার নিজেই আক্রান্ত হন। করোনা পজিটিভ হওয়ার পর তারা স্বামী-স্ত্রী যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সেখানে কোয়ারেন্টিন হন। এলাকাবাসী জানতে পেরে তাদের দিকে লাঠিশোটা নিয়ে তেড়ে আসে। তারপর অভুক্ত অবস্থায় তাদের বাড়ি ছাড়া করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *