ঢাকা:গত এক সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) এসে সে সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। শনাক্ত রোগী সংখ্যা পৌঁছেছে ১ হাজার ১২ জনে। মঙ্গলবার জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২০৯ জন। যা কিনা একদিনে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যার দিক থেকে রেকর্ড। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে সাত জনের, একদিনে মৃত্যুর সংখ্যাতেও এটা সর্বোচ্চ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি, ১৪ দিনের ইনকিউবিশন পিরিয়ডের পর থেকে রোগী শনাক্ত হওয়া, সাধারণ ছুটির পর মানুষের ঢাকা ছাড়া এবং এই ভাইরাসের ট্রেন্ড—সবকিছু মিলিয়েই সাত দিনে পাঁচগুণ বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিটি বিষয় রোগী বাড়ার পেছনে ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য থেকে জানা যায়, গত ৭ এপ্রিল শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৪১ জন, মারা গিয়েছিল ৫ জন। ৮ এপ্রিল শনাক্ত হন ৫৪ জন; মারা যান তিন জন। ৯ এপ্রিল শনাক্ত হন ১১২ জন; মারা যান একজন। ১০ এপ্রিল শনাক্ত হন ৯৪ জন; মারা যান ৬ জন। ১১ এপ্রিল শনাক্ত হন ৫৮ জন; মারা যান তিন জন। ১২ এপ্রিল শনাক্ত হন ১৩৯ জন; মারা যান চার জন। ১৩ এপ্রিল শনাক্ত হন ১৮২ জন; মারা যান পাঁচ জন। সর্বশেষ ১৪ এপ্রিল শনাক্ত হয়েছেন ২০৯ জন, মারা গেছেন সাত জন।
ভাইরাস তার নিজের গতিতেই আগাচ্ছে মন্তব্য করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘আগে নমুনা পরীক্ষা করার সুযোগ একটি ল্যাবরেটরিতে সীমাবদ্ধ ছিল, পরীক্ষা করার সুযোগ কম ছিল, তাই রোগী শনাক্ত করা যায়নি। কিন্তু আক্রান্ত প্রথম থেকেই হয়ে এসেছে। যেহেতু এখন টেস্ট ফ্যাসিলিটি বেড়েছে, তাই আক্রান্তের হার জানা যাচ্ছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, আমাদের দেশে মৃত্যুর হার অনেক।’
জানতে চাইলে চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানী আতিক আহসান বলেন, ‘সাধারণত গড়ে ১৪ দিন করোনার ইনকিউবিশন পিরিয়ড। করোনার লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দেওয়ার জন্য যদি ৭ দিন দরকার হয় এবং লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর তার সিভিয়ারিটিতে যেতে দরকার হয় ১০ দিন, এটা ২০ দিন পর্যন্ত চলতে পারে। আর ভাইরাস ইনফেক্ট করার ১৫ দিনের মাথায় গিয়ে সেটা সিরিয়াসলি ফিল করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘এখন একটু পেছনে ফিরে দেখা দরকার। গত ২৪ থেকে ২৫ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়া পর সবাই ঢাকা ছেড়েছে। এই যে সবাই বাড়ি গিয়েছে, তারই ইফেক্ট গত দুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে। গত দুই দিন আগের যে রোগীদের দেখা গিয়েছে তারা ২৪-২৫ মার্চের আগে যারা সংক্রমিত হয়েছিলেন। আর দুইদিন ধরে দেখা যাচ্ছে ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার ইফেক্ট। আবার পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ঢাকায় ফিরলেন গত চার এপ্রিল। এই ফেরার ইফেক্ট দেখা যাবে আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে এবং তার পিক হবে ২৩ থেকে ২৪ এপ্রিলে।’ এগুলো কোনও কিছুই অযৌক্তিক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটা খু্বই ম্যাথমেটিক্যাল প্যাটার্ন ফলো করে এবং সেটাই হচ্ছে।’
আতিক আরও বলেন, ‘পরীক্ষা না বাড়ালে রোগী সংখ্যা কম আসতো, যদি পরীক্ষা আরও বাড়ানো হয়, তাহলে এই সংখ্যা আরও বেশি হবে। তাই পরীক্ষা আরও বাড়াতে হবে, এর কোনও বিকল্প নেই।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ‘টেস্টিং ফেসিলিটি বাড়া, ভাইরাসটির গতি-প্রকৃতিই এটা; ধীরে ধীরে বাড়বে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় রোগীদের কন্টেইনমেন্ট করতে পারছি না আসলে।’ তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে আমাদের কোয়ারেন্টিন সফল হয়নি, সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না—মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে রোগী বাড়ছে এবং এসব বিষয়ে এখনও যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, রোগী ম্যানেজমেন্ট ঠিকভাবে না হয়, তাহলে এ সংখ্যাটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা অনিশ্চিত।’