দাঁড়িয়ে ছিল পিপিই পরিহিতরা, লাশ দাফনে বাবা-চাচা

Slider চট্টগ্রাম জাতীয় টপ নিউজ


চট্টগ্রাম: করোনার সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখাসহ মৃত্যুর পর লাশ দাফনের নানা নির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু। সে মতে নানা প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্দেশনা না মেনে করোনা আক্রান্ত শিশুর লাশ দাফনের ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের পটিয়ায়।

এতে লাশ দাফনে নিয়োজিত পিপিই পরিহিত চার ব্যক্তি শুধু জানাযা পড়েছে। শিশুর লাশের গোসল থেকে নিয়ে কাফন পড়ানো, কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া, দাফন করাসহ সবকিছুই করেছে বাবা ও চাচারা। যাদের কোনরকম করোনা ভাইরাসের নিরাপত্তামূলক প্রটেকশন পিপিই ছিল না।

মঙ্গলবার এমন একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। যেখানে কমেন্টস করে সরকার ও সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তুলোধুনো চলছে।
এর আগে চট্টগ্রামের পটিয়ায় করোনা আক্রান্ত ৬ বছরের এই প্রতিবন্ধি শিশু আশরাফুলের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় চলে চট্টগ্রামে।

লাশ দাফনের ছবিতে দেখা যায়, পটিয়ায় কবরস্থানে পিপিই পড়ে ৪ জন লোক দাঁড়িয়ে, অদূরে করোনায় মারা যাওয়া শিশুটির লাশ কোলে দাঁড়িয়ে ছিল চাচা মো. টিপু। আশপাশে আরও দুজন। যাদের কারোই কোন প্রতিরোধমূলক পোষাক (পিপিই) নেই।

টিপু জানান, সোমবার বিকেলে আশরাফুলের লাশ দাফন করা হয়। লাশ দাফনে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে চারজন লোক দিয়েছিল। তারা পিপিই পরা ছিল। তারা শুধু লাশ ধোয়ানো দেখিয়ে দিয়েছে মাত্র। আশরাফুলের বাবা মো. সজলসহ নিজেরাই শিশুটির গোসল করিয়ে, কবরে নামিয়ে লাশ দাফন করেছে।

তিনি জানান, লাশ হাসপাতাল থেকে আনার সময় ৩টি পিপিই দেয়া হয়েছিল। যা আশরাফুলের মা, দাদি ও অপর একজন পড়েছিল। তারা ভালো করে জানতেই পারেনি শিশুটি আসলে করোনায় মারা গেছে কিনা। মারা যাওয়া ৬ বছরের শিশু আশরাফুল জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। যেমন হাটতে পারতো না, তেমনি কথাও বলতে পারতোনা। অসুস্থ হওয়ে হাসপাতালে যাওয়াসহ সবসময় টিপুর মা, বাবা, দাদি আর খালা পাশে ছিলো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা জাহান উপমা বলেন, শিশুটি মৃত্যুর পর মা বাবাসহ পরিবারের ৪ জনকে পিপিই দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সেগুলো ব্যবহার করেনি। শিশুটির পরিবারের বক্তব্য ছিল, করোনা সংক্রমণ যদি হয়ে থাকে তা আগেই হয়ে গেছে, এখন আর কি হবে।

কিন্তু পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মো. সেকান্দর খান বলেন, আসলে আমাদের দায়িত্বশীলদের মধ্যে দায়িত্ববোধ বলতে কিছু নেই। করোনা রোগী দাফনে যেখানে বিশ্ব সংস্থার প্রণীত বিধিবিধান রয়েছে, সেখানে নিজেরা দর্শক সেজে একটি পরিবারকে এভাবে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়ার মতো অবস্থা হলো কি করে?

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় বলা হয়েছে-চার সদস্যের একটি দল স¤পূর্ণ সুরক্ষা পোশাক পরে মৃতদেহ সৎকার বা দাফনের জন্য প্রস্তুত করবে। মৃত্যুর স্থানেই মৃতদেহ প্লাস্টিকের কাভার দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে। দলের নেতা মৃত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের নির্দিষ্ট কোনো অনুরোধ থাকলে তা জেনে নেবেন। কোথায় কবর দেওয়া হবে, সেটিও ঠিক করে রাখতে হবে।

ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে মরদেহ গোসল করানো যাবে না উল্লেখ করে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পরিবারের অনুরোধ থাকলে মরদেহ গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম বা পানি ছাড়া অজু করানো যাবে। আর পরিবারের পক্ষ থেকে কাফনের কাপড়ের জন্য অনুরোধ থাকলে সেলাইবিহীন সাদা সুতির কাপড় কাফনের কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কাফনের কাপড় প্লাস্টিকের ব্যাগে রেখে তার ওপর মরদেহ রাখতে হবে এবং দ্রুত ব্যাগের জিপার বন্ধ করতে হবে। ব্যাগে কাফনের কাপড় দেওয়ার সময় যারা মরদেহ উঁচু করে ধরবেন, তাদের অবশ্যই সুরক্ষা পোশাক পরে থাকতে হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, মৃতদেহ সৎকারের জন্য মৃতদেহের সব ছিদ্রপথ (নাক, কান, পায়ুপথ ইত্যাদি) তুলা দিয়ে ভালো করে বন্ধ করে দিতে হবে, যাতে কোনো তরল গড়িয়ে না পড়ে। এরপর সংক্ষিপ্ত রুটে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মৃতদেহ সমাধিস্থলে নিয়ে যেতে হবে।

দাফনের পর কবর বা সমাধিস্থানটি ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার গভীর মাটির স্তর দিয়ে ঢাকার পাশাপাশি দাফন করা স্থানের আশপাশ উপযুক্ত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কারও করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। এ ছাড়া মৃত ব্যক্তি যে স্থানে মারা গেছেন, সেই স্থানটিও যত দ্রুত সম্ভব জীবাণুমুক্ত করা এবং মৃতদেহ দাফনের পর সেই স্থান ভালোভাবে ঘিরে রাখতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে করোনা মোকাবেলায় গঠিত কমিটির শুপারিশ অনুসারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তাঁকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার একটি কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। এছাড়া জানাজা ও দাফনের জন্য ইসলামী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠনের বিষয়ে জানানো হয়েছিলো। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত এই শিশুটির ক্ষেত্রে এর কোনোটাই মানা হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের এমন দায়িত্বহীনতায় হতবাক সমাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *