গ্রাম বাংলা ডেস্ক: এক ব্যাক্তির শাষনে বাংলাদেশ। গণতন্ত্র এখন বুলেটের নিশানায় বন্দী। এই অবস্থা চলতে পারেনা। এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য আইনজীবীরা লিখিতভাবে বৃটিশ সরকারের কাছে আবেদন জানাবেন বলে দাবি করা হয় লিখিত রিপোর্টে। খবর দিয়েছে বাংলানিউজটোযেন্টিফোর.কম।
খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার লন্ডনে হয়ে গেলো ‘অ্যওয়ারনেস এন্ড ওয়ার্নিং অ্যাব্যাউট বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি সেমিনার।
দ্য অনারেবল সোসাইটি অব লিংকন্স ইন এ আয়োজিত এই সেমিনারে লন্ডনে বিএনপি-জামায়াতপন্থি ব্রিটিশ-বাংলাদেশি আইনজীবীদের সঙ্গে কয়েকজন বৃটিশ আইনজীবীও অংশ নেন।
পরে আয়োজকদের পক্ষ থেকে ঢাকায় পাঠানো এক রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাহী বিভাগ, আইনবিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগ এক ব্যক্তির পাপেটে পরিণত হয়েছে বলে মত উঠে এসেছে এই সেমিনারের মধ্য দিয়ে।
ব্রিটিশ আইনজীবীরাই এই মত দিয়েছেন বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
তবে এই কর্মসূচির আলোচনার ব্যাপারে কোনো নিরপেক্ষ সূত্র থেকে বক্তব্যগুলো নিশ্চিত করা যায়নি।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, আলোচনায় আরও বলা হয়, গণতন্ত্র এখন বুলেটের নিশানায় বন্দী। এই অবস্থা চলতে পারেনা।
এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য আইনজীবীরা লিখিতভাবে বৃটিশ সরকারের কাছে আবেদন জানাবেন বলেও দাবি করা হয় ওই লিখিত রিপোর্টে।
সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হলবর্ণ চেম্বারের প্রধান এবং মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট স্টিভেন্স।
সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন, ব্যারিস্টার অ্যান হোওস, ব্যারিস্টার এস কে কুমার, ব্যারিস্টার ডেভিড রেকটার, বৃটিশ-বাংলাদেশি ব্যারিস্টার অ্যান্ড সলিসিটর এ কে এম কামরুজ্জামান, ব্যারিস্টার আয়েশা কোরেশী, ব্যারিস্টার টি আই এম ওয়েলচ, ব্যারিস্টার ক্রিস্টিলি, ব্যারিস্টার ফ্রাংকো, ব্যারিস্টার মারিয়া গঞ্জালেস, ব্যারিস্টার এ. গ্যালাহার এবং বৃটিশ-বাংলাদেশি ব্যারিস্টার হুসেইন শামসুজ্জোহা।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে অবৈধ উল্লেখ করে এই সরকারের নেতা, মন্ত্রী ও এমপিদের সঙ্গে বৃটেনের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর অবিলম্বে অবরোধ আরোপের দাবি জানান।
প্রয়োজনে তাদের বৃটেনে প্রবেশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও আহ্বান জানান বক্তারা।
সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নেরও জবাব দেন বক্তারা।
বাংলাদেশের প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের নেতা তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার না করার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি-ধমকিই প্রমাণ করে দেশটিতে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা নেই, এমন মতও উঠে আসে ওই সেমিনারে।
ব্যারিস্টার অ্যান হোওসকে উদ্ধৃত করে ওই রিপোর্টে বলা হয়, “তারেক রহমান সরকারের দ্বারা প্রমাণহীন অভিযোগ, মিথ্যা প্রোপাগান্ডা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।”
ব্যারিস্টার অ্যান হোওস বাংলাদেশের গণমাধ্যম সম্পর্কে তার লিখিত বক্তব্যে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর সরকারের অত্যাচার, সাগর-রুনীর হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা শুন্যের কোঠায় বলেও মত দেন তিনি।
মূল প্রবন্ধ থেকে ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট স্টিভেন্সকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “বাংলাদেশে নির্বাহী বিভাগ, আইনবিভাগসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন বিভাগ এক ব্যক্তির পাপেটে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্যবহার করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। দেশটির বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এখন জনগণের কাছে খুনী বাহিনী হিসেবে পরিচিত।”
ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট অবিলম্বে র্যাব বিলুপ্তির দাবি জানান। একইসঙ্গে র্যাব সম্পর্কে বৃটিশ সরকারকে তার অবস্থান স্পষ্ট করারও দাবি জানান বলেও উল্লেখ রয়েছে ঢাকায় বিএনপিপন্থিদের সরবরাহকৃত ওই রিপোর্টে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে হাস্যকর উল্লেখ করে ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট বলেন, ওই নির্বাচনের একজন সাংসদ সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি নিজেই জানেন না কিভাবে সাংসদ হয়েছেন। এর চেয়ে হাস্যকর নির্বাচন আর কি হতে পারে?
রিপোর্ট মতে, ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট বলেন, যেই নির্বাচনে জণগণের অংশগ্রহণ নেই সেই নির্বাচন বৈধ হতে পারেনা। সেই সরকারও বৈধ হতে পারেনা। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন দুই অনুপস্থিত। এমন একটি নির্বাচন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
তিনি বলেন, হাউজ অব কমন্স, মার্কিন সিনেট এবং ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টেও একাধিকবার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওইসব শুনানি শেষে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ আহ্বান গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও গুম-খুন করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে বলেও অভিয়োগ করেন ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট। তিনি এ ব্যাপারে বৃটিশ সরকারকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান।
স্টুয়ার্ট বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে দেশটিতে আদালত নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছে না। বিচারকদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে দলীয় আনুগত্য বিবেচনায়। এমনকি দলীয় আনুগত্যের কারণে খুনের আসামিকেও বিচারক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশে আইন পেশায় জড়িত তাদের অনেকেই বৃটেনে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। তারা তাদের আইনি কার্যক্রম ও বিচার প্রক্রিয়ায় দলীয় আনুগত্যের ঊর্দ্ধে উঠে জুডিশিয়ারিকে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেয়ে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে সচেষ্ট হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সম্পর্কে নিজের উদ্বেগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট নিবন্ধে লিখেছেন, কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তাদের বক্তব্য দেওয়ার যুক্তিসংঙ্গত অধিকার রয়েছে। কারণ গণতন্ত্রহীনতা এবং সুশাসনের অভাব হলে এর প্রভাব উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বৃটেইনের ওপরই পড়ে। এ কারণে বৃটেনেরও উচিত এমন পদক্ষেপ নেওয়া যাতে বাংলাদেশের মানুষ নিজ দেশেই নিরাপদে থাকতে পারেন।
সেমিনারে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ব্যারিস্টার হাফিজুর রহমান, ব্যারিস্টার আশরাফ আরেফিন, অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী, অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদস্য শামীম চৌধুরী।